ড্রাইভিং এর উপর আবহাওয়ার প্রভাব
ড্রাইভিং এর উপর আবহাওয়ার বিশেষ প্রভাব রয়েছে। আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের কারণে অনেক সময় দেখা যায় খুব দক্ষ ড্রাইভারও দূর্ঘটনায় পতিত হয়। রোদ, পানি, বৃষ্টি, কুয়াশা প্রভৃতির সময় কি কি গোলমাল হতে পারে এবং এইসময় কিভাবে গাড়ি চালানো উচিত, তা জেনে রাখাটা জরুরি। এইসব নানা প্রাকৃতিক গোলমালের জন্য প্রায়ই মারাত্মক ধরণের দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাই সবার আগে একটা কথা জানা উচিত- যদি প্রকৃতি বিমুখ হয় অর্থাৎ ঝড়, বৃষ্টি ইত্যাদি হয় তাহলে গাড়ি কখনও খুব জোরে চালাতে নেই। এই অবস্থায় ধীরে ধীরে ড্রাইভিং করতে হবে।
রৌদ্রঃ
চড়া রোদ হলো গাড়ি চালাবার পক্ষে বিপদসমূহের মধ্যে একটি। যদি রোদের তাপ অল্প হয়, তাহলে ততটা ভয় নেই। তবে যদি রোদ খুব বেশি হয়, তাহলে নানা অসবিধা ঘটতে পারে।
প্রথমতঃ অতিরিক্ত রোদে পথঘাট, বিশেষ করে পিচের রাস্তায় পিচ গলে যায়। তার ফলে গাড়ি চালানো অসুবিধাজনক হয়।
দ্বিতীয়তঃ তীব্র রোদে শরীর ক্লান্ত হয়ে মাথা গরম হয়ে ওঠে। ফলো মনোযোগ সহকারে বা মন স্থির রেখে গাড়ি চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মনের শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য ঠিক না থাকলে গাড়ি চালাবার সময় অনেক রকম অসুবিধা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
তৃতীয়তঃ উজ্জ্বল রোদ হলে তা সামনের উইন্ডস্ক্রীনে প্রতিফলিত হয় এবং চক্চক্ করে। অনেক সময় বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির উইন্ডস্ক্রীনে প্রতিফলিত সূর্য়ের আলো ড্রাইভারের চোখে পড়ে সাময়িকভাবে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয় এবং দেখতে না পারার কারনে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
চতুর্থতঃ রোদ ও তাপ বেশি হলে অনেক সময় গাড়ির ইঞ্জিন শীতল করার ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং সেই সাথে জ্বালানীও বেশি খরচ করায়।
বৃষ্টিঃ
গাড়ি চালানোর সময়ে বৃষ্টি নামলে তা নানাভাবে গাড়ি চালাবার পক্ষে অসুবিধা সৃষ্টি করে। এইজন্য দক্ষ ও যত্নবান ড্রাইভাররা জোরে বৃষ্টি শুরু হলে গাড়ি খুব সাবধানে চালান।
বৃষ্টি নামলে, গাড়ির সামনের কাঁচে পানি পড়ে তা ঝাপসা হয়ে যায়। গাড়িতে ওয়াইপার যদি খারাপ থাকে তাহলে তো সেই অস্থায় হালকা বৃষ্টিতেও চালানো সম্ভব নয়। ওয়াইপার ঠিক থাকলেও বেশি বৃষ্টি হলে গাড়ির কাঁচের ভেতরের দিকে জলিয় বাষ্প (ঘাম) জমে কাঁচ ঝাপসা এবং অস্পষ্ট হয়ে যায়।
দ্বিতীয় কথা হলো পথের অবস্থা। বৃষ্টি পড়লে পথ ভিজে যায়। তখন গাড়ির টায়ার ও পথের সঙ্গে ঠিকমত ঘর্ষণ ঘটে না। ব্রেক কষলেও গাড়ি ঠিকমতো দাঁড়ায় না। কারণ ভেজা পথে চাকা পিছলে যায়। তাই বৃষ্টি নামলে খুবই ধীরে এবং একাগ্র মনে গাড়ি চালানো উচিত।
তৃতীয় বিষয় হলো বৃষ্টি নামলে পথ কর্দমাক্ত হয়। রাস্তায় কোথাও কোথাও পানি জমে। অপরিচিত রাস্তায় পানি জমে থাকলে না পারতে পানির মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না। কারণ পানির আড়ালে বড় ধরনের গর্ত বা খানা-খন্দ থাকতে পারে। এসব বড় গর্ত বা খানা-খন্দে চাকা পড়লে মারাত্মক দূর্ঘটনা, গাড়ি আটকে যাওয়া অথবা গাড়িরও বিশেষ বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চতুর্থতঃ রাস্তায় জমে থাকা পানির উচ্চতা যদি ফুটখানেকের বেশি হয়, তাহলে সাইলেন্সার পাইপে অথবা ইঞ্জিনে পানি ঢুকে গাড়ি বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং ইঞ্জিনেরও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হতে পারে।
কুয়াশাঃ
কুয়াশা ড্রাইভিং এর পক্ষে মারাত্মক বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। কুয়াশা বেশি হলে পাশের, পিছনের বা সামনের গাড়ি ভালভাবে নজরে পড়ে না। তাই কুয়াশা হলে সব সময় হর্ণ দিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে চালাতে হবে।
কুয়াশাতে সামনের কাঁচেও পানি জমে। তাই যদি গাড়ির ওয়াইপার ঠিক না থাকে তাহলে এই অবস্থায় গাড়ি চালানো বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। কুয়াশা খুব বেশি হলে তাতে পথের উপরিপৃষ্ঠ ভিজে যায়, তাতেও পথ চলতে অসুবিধা হয়। এসময় গাড়ি জোরে চালানো উচিত নয়।
কুয়াশার মধ্যে সর্বদা গাড়িকে একেবারে পথের বামদিকে ঘেঁষে ধীরে ধীরে চালাতে হবে। কোনও সময়ই ওভারটেকিং করার চেষ্টা করা উচিত নয়। কারণ কুয়াশার কারণে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি দূর থেকে দেখা যায় না।
ঝড়ঃ
জোরে বাতাস বা ঝড় বইতে থাকলে, সেই পরিস্থিতিতে গাড়ি চালালে যে কোনও সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঝড়ের সময় ধুলো বালি ওড়ে, ফলে পথে কিছুই দেখা যায় না। গাড়ি চালাতে চালাতে এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি সাইড করে দাঁড়িয়ে পড়া উচিত। কারণ এ সময় চলন্ত অবস্থায় বাতাসে বড় কাগজের টুকরা, পলিথিন বা কাপড় উড়ে এসে গাড়ির কাঁচের উপর পড়লে সামনে কিছুই দেখা যাবে না ফলে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
হাইওয়ে দিয়ে ঝড়ের মধ্যে গাড়ি চালানো আরও বিপজ্জনক। কারণ ঝড়ে হাইওয়ের পাশে থাকা গাছ অথবা গাছের ডাল ভেঙ্গে গাড়ির উপর অথবা গাড়ির সামনে পড়লে মারাত্মক বিপদ আসতে পারে।
ড্রাইভিং এর বিভিন্ন আইন-কানুন (প্রথম পর্ব)
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর (দ্বিতীয় পর্ব)