ভুলোমনা মানুষ দেখেছেন তো? আমি তো প্রচুর দেখি আর সাথে দেখি আমাকেও! ফ্রিজে চশমা রেখে দেওয়া। কমলা ছিলে ময়লার ঝুড়িতে কোষগুলো ফেলে দিয়ে ছিকলা খেতে শুরু করা। চিনির কৌটোতে নুন ঢেলে দেওয়া ইত্যাদি তো আমি হরদম করে থাকি!
তো, আজ না হয় আমার কথা না বলে আমার দাদার গল্প বলি। দাদী দাদাকে পাঠিয়েছে বাজার করতে। চারটে মাত্র আইটেম। কিছু সবজি, এক কেজি গরুর মাংস, এক প্যাকেট দুধ (পাউডার) আর পঞ্চাশ গ্রাম কালোজিরে। দাদা সব বুঝে টুঝে বাজারে রওয়ানা দিলেন। সারাদিন গুনগুন করে গান করার অভ্যাস তাই গুনগুন করেই চলেছেন। দাদী পেছন থেকে আবার সবকটা আইটেম মনে করিয়ে দিলেন। দাদাও মাথা দুলিয়ে বুঝিয়ে দিলেন ওনার সব মনে থাকবে।
দাদা প্রথমেই গেলেন সবজি বাজারে। কয়েক প্রকার সব্জি কিনলেন। মণে মনে খুব খুশী। একটাও ভোলেননি ধনেপাতাটা পর্যন্ত মনে রেখেছেন। তারপর গুনগুন করতে করতে গেলেন মাংসের দোকানে। এক কেজি সিনার মাংস কিনলেন। সিনার মাংস আবার দাদীর খুব পছন্দ। দাদার মনটা আরো ভালো হয়ে গেল। আজকে বুড়ি আর ওনার ভুলোমন নিয়ে কোন কথা বলতে পারবে না। মাংস নিয়ে গুনগুনিয়ে উনি গেলেন দুধ কিনতে। দুধ নিলেন এক প্যাকেট। এরপর চলে গেলেন মুদীর দোকানে। খুশী মনে কালোজিরে একশ গ্রামই কিনে ফেললেন! খোশ মেজাজে গুনগুন করতে করতে বাড়ী ফিরে মুচকি হেসে বৌয়ের হাতে কালোজিরের প্যাকেটটা ধরিয়ে দিয়ে ঢুকে গেলেন বাথরুমে।
দাদী কালোজিরের প্যাকেট হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ হাঁ করে দাঁড়িয়ে বাথরুমের দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললেন –
ঃ “বাকি জিনিস কই? সবজি, দুধ, মাংস কোথায়? আমি তো পেঁয়াজ রসুন আদা বেটে রেডি করে বসে আছি”।
দাদা তড়িঘড়ি বাথরুম থেকে গামছা পরে বেরোলেন ।
ঃ “কি সর্বনাশ! বাকি প্যাকেটগুলো কোথায় গেল? আমি তো সব কিনেছি!! বিশ্বাস করো, আমি সব মনে করে কিনেছি। ধনেপাতাটা পর্যন্ত ভুলিনি! তাহলে কোথায় গেল ঐগুলো? দাদা ধপ করে সোফায় বসে কপাল কুঁচকে চিন্তা করতে লাগলেন। এদিকে দাদী তো রেগে কাঁই!
ঃ “বারোটা বাজতে চললো এখনও বাজার এলো না! আমি কি রান্না করবো? আমার মাথা? যত্তসব ভুলোমনদের নিয়ে পড়েছি। জীবনটা কয়লা করে ছাড়লো!”
দাদীর এই প্রলাপের মধ্যে দাদা তড়াক করে উঠে মনে পড়েছে মনে পড়েছে বলে ছুটে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। দাদীও পেছন পেছন দৌড়ে গিয়ে দাদাকে জাপটে ধরে বললেন –
ঃ “তোমার কি কোন কালেই আক্কেল হবে না? গামছা পরে খালি গায়ে কোথায় চললে?
দাদাও লজ্জা পেয়ে ঘরে ঢুকে জামাকাপড় পরে বেরোলেন। এবার আর গুনগুন শোনা গেল না। সোজা গেলেন মুদীর দোকানে। মুদী বললো –
ঃ “দাদা, আপনি এসেছেন ভালো করেছেন, নইলে হাবলুকে দিয়ে দুধের প্যাকেটটা আমিই আপনার বাড়ী পাঠিয়ে দিতাম। আপনি কালোজিরে কিনে দুধ ফেলে চলে গেছেন”।
দাদা চোখ ছোট করে বললেন –
ঃ “শুধু দুধ? আমার সবজি আর মাংস কোথায়?”
ঃ “আর তো কিছু ছিল না দাদা। আপনি দুধের প্যাকেটটা রেখে টাকা দিচ্ছিলেন। তারপর কালোজিরে নিয়ে চলে গেলেন। আমি পরে খেয়াল করলাম দুধের প্যাকেটটা”।
দাদা আবার ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ চিন্তা করে ছুটলেন দুধের দোকানে। দোকানদার বলল –
ঃ “কি দাদা, আমার দোকানে আপনি মাংসের প্যাকেট ফেলে চলে গেলেন যে!
দাদা একটু লজ্জার হাসি দিয়ে বললেন –
ঃ “দুঃখিত, আসলে টাকা দিতে গিয়ে মাংসের প্যাকেটটা নিতে ভুলে গেছি। কিন্তু এর সাথে একটা সব্জির ব্যাগও তো ছিল”। দোকানদার বলল –
ঃ “না দাদা, আপনি একটা প্যাকেটই সামনে রেখেছিলেন”।
দাদা আবার কিছু একটা চিন্তা করে ছুটলেন মাংসের দোকানে। যথারীতি ওনার সব্জির ব্যাগ পাশে রাখা ছিল! সজনে ডাঁটা দেখেই চিনতে পারলেন। যাক বাবা সব পাওয়া গেল। উনি ভাল করে আইটেমগুলো গুনলেন এক, দুই, তিন … … কিন্তু তিনটা কেন? চারটা হওয়ার কথা। বৌ চারটে আইটেম নিতে বলেছিল। উনি অনেকক্ষণ চিন্তা করেও মনে করতে পারলেন না চতুর্থ আইটেমটা কোথায়। তাও উনি সব্জিওয়ালার কাছে গিয়ে বললেন –
ঃ “আচ্ছা আমি কি তোমার দোকানে কিছু ফেলে গেছি?
ঃ “না দাদা, আপনি তো খালি হাতেই এসেছিলেন। সবজি কিনে চলে গেলেন”।
দাদার মন খুবই খারাপ হয়ে গেল। সত্যি, বৌ যে রাগ করে ঠিকই করে। এমন ভুলোমনদের নিয়ে সংসার করা আসলেই খুব কঠিন। মুখ ভার করে বাড়ী ঢুকে প্যাকেটগুলো বৌদির হাতে দিয়ে বললেন –
ঃ “সরি, আরেকটা আইটেম কি ছিল আমি কিছুতেই মনে করতে পারলাম না”।
দাদী মুখ বেঁকিয়ে বললেন –
ঃ “আমার হয়েছে যত জ্বালা! উনি যে শুধু কালোজিরে নিয়ে ঘরে ঢুকছিলেন সেটা ভুলে গেলেন?
দাদা তো মহা খুশী! সে কি বিশ্ব জয়ের হাসি!
ঃ “হুম! আর আমাকে ভুলোমনা বলতে পারবে না প্রিয়তমা!! চার চারটে জিনিসই কিনে এনেছি আমি”!!!