বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি পত্রিকা আমি রোজ কিনি। অফিসে পড়া শেষে আমি বাসায় নিয়ে যাই। আমার সন্তানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পত্রিকা পড়ার প্রতি ভীষণ আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে আমার দুই সন্তান আমি বাসায় প্রবেশ করা মাত্রই ব্যাগ থেকে পত্রিকাটি বের করবে। তারপর পুরো পত্রিকাটির আদ্যোপান্ত চোখ বুলাবে। উদ্দেশ্য যতটানা পড়ার তার চাইতে বেশি ছবি দেখার। তাদের আগ্রহের বিষয় খেলার পাতায় মেসি রোনালদোর ছবি,গাড়ির ছবি, মোটর সাইকেলের ছবি, মোবাইল, টেলিভিশন কিংবা ফ্রিজের ছবি, বন্যপ্রাণির ছবি ইত্যাদি। কোনো কার্টুনের ছবি থাকলেতো কথাই নেই। তারা সেগুলো খুটে খুটে দেখবে এবং আমাকে নানারকম প্রশ্নবানে জর্জরিত করবে। আমি সাধারণত রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাই না। সারাদেশের সড়ক দূর্ঘটনা, খুন, হত্যা, ধর্ষণ, খাদ্যে ভেজাল, প্রতারণা ইত্যাদি সংবাদগুলো পড়তে খারাপ লাগলেও সেগুলো আগ্রহ নিয়ে পড়ি। আর বোঝার চেষ্টা করি কোথায় যাচ্ছি আমরা, আর কবে শোধরাবো আমরা? এছাড়া সংস্কৃতির প্রতি একটু বিশেষ দূর্বল হওয়ায় বিনোদনের পাতাটাতে আমি চোখ বুলাই খুব যতœ করে। একটু সময় নিয়ে পড়ি গানের খবর, নাটকের খবর, চলচ্চিত্রের খবর, মঞ্চপাড়ার খবর, আর এসবের তারকাদের খবর। কিন্তু এই বিনোদনের পাতাটিতে এসেই আমি চরমভাবে বিব্রত হই। এই পাতাটিতে দেশ বিদেশের বিনোদনের খবরের সাথে স্বাভাবিকভাবেই থাকে ঝকঝকে কালারফুল ছবি। কিন্তু কিছু কিছু ছবি এতটাই আপত্তিকর আর অশ্লীল থাকে যে কখনো কখনো লজ্জায় নিজেই পৃষ্ঠা উল্টে ফেলতে বাধ্য হই। দেশি তারকা কিংবা বিদেশি যাই হোক না কেন ছবিগুলো পোশাকের দিক থেকে এতটাই অশোভন আর দৃষ্টিকটু থাকে যে কোনো ভদ্রলোক সেই ছবিতে তাকিয়ে থাকার রুচি পোষণ করবে না। আমার সন্তানেরা যখন পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বিনোদন পাতায় আসে আর যখন এইসব কুরুচিপূর্ণ ছবি তাদের নজরে আসে তখন বাবা হিসেবে আমি দারুণভাবে লজ্জিত হই। আলহামদুলিল্লাহ আমার ছেলেরাও খুব দ্রততার সাথে এই পৃষ্ঠাটিকে অতিক্রম করে যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো দেশের বেশিরভাগ জাতীয় পত্রিকার বিনোদন পাতার এইসব সংবাদের চরিত্রগুলোর ছবিটা অশ্লীলই কেন হতে হবে? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও ধর্মীয় চেতনা মাথায় রেখে শালীন ছবি দিয়ে কি এই নিউজটা ছাপা যেত না? যেমন ধরুন কোনো একজন নায়িকার মুক্তি পাওয়া ছবি দারুন হিট হয়েছে, কিংবা কোনো নায়িকা ছবির শুটিংয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। কিংবা কোনো নায়িকার বিয়ে নিয়ে গুঞ্জন চলছে ইত্যাদি সংবাদগুলোর সাথে কি অশ্লীল ছবি দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা আছে? একই সংবাদ সংশ্লিষ্ট সেই নায়িকার অন্য কোনো শালীন ছবি দিয়ে কি কাভার করা যেত না? আমি অবশ্যই কোনো নায়িকার বোরকা পড়া ছবি বিনোদন পৃষ্ঠায় আশা করি না। আমি শুধু বোঝাতে চাইছি নারীদেহের বিশেষ স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোকে অবাধ প্রদর্শন করা ছবিগুলো বাদ দিয়েও সেই নিউজটা করা যায়। তবে আমরা কেন এটা করছি না ? তথ্য প্রযুক্তির অবাধ যাতায়াতের যুগে স্মার্টফোনের হানায় যেখানে তরুণ প্রজন্ম প্রায় ক্ষয়িষ্ণুতার দিকে ধাবিত হচ্ছে সেখানে প্রিন্ট মিডিয়া কিংবা অনলাইন মিডিয়ার সম্মানিত কর্তৃপক্ষের কি কোনো সামাজিক দায়বোধ থাকতে পারে না? পত্রিকার কাটতি বাড়াতেই কী আমরা এই অশোভন পদ্ধতিটি বেছে নিয়েছি? যদি তাই হয় তবে অনুরোধ করছি আরেকবার ভাবুন কতটুকু পেয়ে কতখানি হারাচ্ছি আমরা। আপনাদের এই বাড়তি আয়ের অর্থের চাইতে সন্তানের কাছে আমার বিব্রত হওয়ার দাম যে অনেক বেশি! আসুন সচেতন হই, সামাজিক হই, দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই সুন্দরের সাথে কল্যাণের পথে।
Related Posts
এদেশের সাধারণ মানুষ যেন ইচ্ছা করেই নোংড়া থাকতে পছন্দ করে। সাধারণত যারা সরকারি বা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরি করে তারা এক…
বাংলাদেশে যত দিন যাচ্ছে, নারী নির্যাতন ততই বাড়তে থাকছে। আপনি যদি নারী হয়ে থাকেন, সেই সাথে বাংলাদেশে বাস করেন তাহলে…
“আপন আলোয় জ্বেলে ওঠো” এই লাইনটাতেই লোকানো অনেক কথা। আমাদের সমাজের বহু শিক্ষিত মায়েরাই পিরিয়ড নিয়ে কথা বলতে একটু অস্বস্তি…
আমাদের প্রচলিত সমাজে মেয়ে হয়ে জন্মানো একটা অভিশাপও বটে। একটা মেয়ে সবসময় অসহায়, চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে।মন চাইলে নিজের ইচ্ছেমতো চলতে পারে…
সাম্প্রতিক বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ নিয়ে মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে তখন বাংলাদেশ পরিচিত হচ্ছে নতুন এক মহামারি, ধর্ষণের সাথে। যেদিকে দুচোখ …
5 Comments
Leave a Reply Cancel reply
You must be logged in to post a comment.
বেশ ভালো পোস্ট
nice post
Ok
Nice
ok