পরিবার একটি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। পরিবার গঠনের পূর্বশর্ত হলো বিয়ে। কারণ বিয়ের মাধ্যমে পরিবার গঠন করা যায়। একজন পুরুষ ও একজন নারী বিয়ের মাধ্যমে পরিবার গঠন করে। তাদের মধ্যে একটি ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই পরিবার গঠনের মূল কারণ হচ্ছে সন্তান প্রজনন ও তাদের লালন পালন করা। তাদেরকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলা। এই পরিবার নানা ধরনের হয়ে থাকে। একক পরিবার, যৌথ পরিবার, বর্ধিত পরিবার ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে পিতৃতান্ত্রিক, মাতৃতান্ত্রিক, অনুলোম, প্রতিলোম ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পরিবার। কিন্তু এসব পরিবারে শিশুর সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়া প্রায় একই। তবে পরিবারের রকমভেদে সামাজিকীকরণের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।
একক পরিবার: এই ধরনের পরিবারে মা-বাবা ও তাদের অবিবাহিত সন্তান-সন্ততিরা থাকে। এই পরিবারে মা-বাবা শিশুর সামাজিকীকরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
যৌথ পরিবার: যৌথ পরিবারে মা-বাবা, দাদা-দাদি সহ আরো অনেকে বাস করে। এক্ষেত্রে মা ও বাবার পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যরাও শিশুর যত্নে অংশ নিতে পারেন। তাই এক্ষেত্রে শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ ঘটে।
বর্ধিত পরিবার:বর্ধিত পরিবারে পিতা ও মাতা উভয়ের আত্মীয় স্বজন থাকে। এই ধরনের পরিবার গ্রামে বেশি দেখা যায়।
পিতৃতান্ত্রিক পরিবার:এই পরিবারে পিতা কর্তৃস্থানীয়। পিতাই সবক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে।
মাতৃতান্ত্রিক পরিবার:এক্ষেত্রে মাতা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে।
অনুলোম পরিবার :উঁচু জাতের ছেলের সাথে নিচু জাতের মেয়ের বিয়ের মাধ্যমে এই পরিবার গঠিত হয়।
প্রতিলোম পরিবার : জাতের মেয়ের সাথে নিচু জাতের ছেলের বিয়ে হলে এই পরিবার গঠিত হয়।
এই অনুলোম ও প্রতিলোম পরিবার হিন্দু সমাজে বেশি দেখা যায়।
শিশুর সামাজিকীকরণ:শিশুর সামাজিকীকরণের বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। এগুলো হলো:পরিবার, আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমবয়সী বন্ধু, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।
পরিবার: সামাজিকীকরণে সবচেয়ে প্রথম ভূমিকা পালন করে পরিবার। পরিবারের সবকিছুই শিশুর আচরণে প্রভাব বিস্তার করে। শিশুর সবচেয়ে কাছের মানুষ হলো বাবা ও মা। এদের মধ্যে আবার মা একটু বেশি কাছের। তাই শিশুর বর্ণ ও ভাষা শেখার প্রথম মাধ্যম হলো মা। মা শিশুর খাদ্যাভ্যাস গঠনেও ভূমিকা পালন করে থাকে।
আত্মীয় স্বজন:পরিবারের পরেই আত্মীয় স্বজনরা ভূমিকা রাখে। তাদের কাছে থেকে শিশু প্রতিদিন নানা ধরনের শিক্ষা লাভ করে।
প্রতিবেশী: বাড়ির আশেপাশে যারা থাকে তারাই আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশীরা শিশুকে সমাজস্বীকৃত আচরণ করতে শেখার। তাদের মাধ্যমে শিশু ভালো ও খারাপ আচরণের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান:শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো শিশুর সামাজিকীকরণের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি একটি আনুষ্ঠানিক মাধ্যম। বিদ্যালয়ে শিশুর গুণাবলীর বিকাশ ঘটে। শিশু নেতৃত্ব, সহযোগিতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি শিক্ষা লাভ করে। সে সেখান থেকে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
সমবয়সী বন্ধু:সমবয়সী বন্ধুরা একে অপরের উপর প্রভাব বিস্তার করে। একজনের আচরণ দ্বারা অন্যজন প্রভাবিত হয়।
ধর্মীয়প্রতিষ্ঠান: ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান শিশুর ভবিষ্যৎ ধর্মীয় জীবনকে প্রভাবিত করে।
এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শিশুর সামাজিকীকরণে ভূমিকা পালন করে থাকে।