আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান মানব সভ্যতার এক বিশিষ্ট অবদান।মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান যে কত ব্যাপক তা প্রতিদিনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে অনুভব করা যায়। বিজ্ঞান কে বাদ দিয়ে আধুনিক সভ্যতা কে কল্পনা করা যায় না।বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে এসেছে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও এসেছে স্বাচ্ছন্দ্য।আদিম যুগ থেকে আরম্ভ করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে, তার মূলে রয়েছে বিজ্ঞান। বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্র বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। মানব সমাজের যে দিকে দৃষ্টিপাত করা হয়, সেদিকে শুধু বিজ্ঞানের মহিমাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানের বলে মানুষ জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষ জয় করেছে।মানুষের সংকট নিরসন ও অসংখ্য সুখ-স্বাচ্ছন্দ বিনোদনের বহু অভাবনীয় কৌশল আবিষ্কার করেছে। বিজ্ঞান আর সকল রোগ শোককে জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের একটি বিশিষ্ট আবিষ্কার বিদ্যুৎ।বিদ্যুৎ মানব সভ্যতাকে অত্যাধিক দ্রুতগতিতে এগিয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞানের দেশের খবর অন্যদেশে নিমিষের মধ্যে পৌঁছে দিচ্ছে। দূরত্ব কমে সারা পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়।কাগজ,মুদ্রণযন্ত্র ইত্যাদি আবিষ্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষা ক্ষেত্রে এনে দিয়েছে ব্যাপক প্রসারতা। পরিবহন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এনেছে গতিময়তা। মূলত বিজ্ঞানের উদ্দেশ্যই হচ্ছে আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রার সুখ-সমৃদ্ধি বর্ধন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে আজ মানুষ অকালমৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। কলেরা,বসন্ত,যক্ষা ইত্যাদি বাড়িতে মানুষকে আর অসময়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয় না।উন্নত মানের ঔষধ, অস্ত্রোপচার ব্যবস্থা,এক্স-রে আল্ট্রাভায়োলেট-রে, অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এসেছে আমূল পরিবর্তন। আধুনিক বিজ্ঞান কৃষি ক্ষেত্রেওঅশেষ উন্নতি সাধন করেছে। প্রাচীন ভোতা লাঙ্গল এর পরিবর্তে আজ ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নত মানের কলের লাঙ্গল ও ট্রাক্টর। পচা আবর্জনা ও গোবর এর পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক রাসায়নিক সার।প্রকৃতির দয়ার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে পানি সেচের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গবেষণার মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে উন্নত মানের বীজ। আবার আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার পুরোটাই বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দ্রুততর ও সহজতর করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করছে নব-নব যানবাহন।দ্রুততম রেলগাড়ি,আধুনিক কনকর্ড,বিমান,মাটির তলায় ধাবমান টিউবরেল সবই বিজ্ঞানের অবদান।বিজ্ঞানের অবদানে আজ আমরা এরোপ্লেনে চড়ে শূন্যাকাশে শত শত মাইল পাড়ি দিচ্ছে যা ছিল একসময় স্বপ্নের ব্যাপার। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ আরাম-আয়েশ।রেডিও,টেলিভিশন,সংবাদপত্র, বৈদ্যুতিক বাতি ও পাখা,টেলিফোন-টেলিগ্রাফ, বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি ও হিটার ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে আমাদের জীবনযাত্রা অত্যন্ত সহজ ও আরামদায়ক হয়ে উঠেছে। অফিস-আদালতে ব্যবহার করা হচ্ছে কম্পিউটার,ফটোস্ট্যাট মেশিন, টেলেক্স ইত্যাদি। বিজ্ঞানের একটি বিস্ময়কর অবদান বৈদ্যুতিক পাখা।আধুনিক জীবনে বাসগৃহ,অফিস-আদালত প্রভৃতিকে আমাদের জন্য আরামদায়ক করে তোলার ক্ষেত্রে এর শীতল হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই একটি ছাড়া গ্রীষ্মের দুঃসহ গরমে আমাদের এক মুহূর্ত কাটানো সম্ভব হয় না।আবার দৈনন্দিন জীবনে আমাদের বাসগৃহ,অফিস-আদালত,কল-কারখানা,নগর জীবন এমনকি পল্লী জনপদকেউ আলোকিত রাখার জন্য আমরা যে জিনিসটির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি তা হচ্ছে বৈদ্যুতিক বাতি। আর এটি হচ্ছে বিজ্ঞানের অসামান্য অবদান।বেতার ও টেলিভিশন বিজ্ঞানের দুটি বিস্ময়কর অবদান।এগুলো সাহায্যে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘটিত ঘটনাবলির খবরা খবর জানতে পারি। তাছাড়া এগুলোতে বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নাটক,গান ইত্যাদি প্রচার করা হয় যা আমাদের জ্ঞানের বিকাশ ও চিত্তবিনোদনে সহায়তা করে। বিজ্ঞানের একটি বিস্ময়কর অবদান কম্পিউটার। এটি রোগীর রোগ নির্ণয়, ব্যবসায় লাভ-লোকসানের হিসাব, যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ,প্লেন ও ট্রেনের আসন সংরক্ষণ এবং সাম্প্রতিককালে পরীক্ষার ফলাফল তৈরি ও প্রকাশের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।আজকাল আমরা অফিস-আদালত,ব্যাংক-বীমা,টেলিযোগাযোগ,রিসার্চ এন্ড এনালাইসিস, পোস্টাল সার্ভিস,প্রকাশনা ইত্যাদি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ব্যবহার করছি। এই বিজ্ঞান একদিকে যেমন মানুষের কল্যাণ সাধন করে আসছে, অন্যদিকে তেমনি এনেছে বিভীষিকা।এটম বোমা,হাইড্রোজেন বোমা ইত্যাদি মারাত্মক মারণাস্ত্র আবিষ্কারের ফলে মানব সভ্যতা আজ ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার বোমা বর্ষণের পর জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের ধ্বংসযজ্ঞ তার বাস্তব প্রমান। মানব সভ্যতা কে পৃথিবীতে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে বিজ্ঞান। সর্বোপরি, বিজ্ঞান আমাদের জীবনে সুখ সমৃদ্ধি আনয়ন করেছে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে করেছে গতিময়। কিন্তু মানুষ যদি বিজ্ঞানের কল্যাণকর শক্তিকে অপব্যবহার করে তবে দোষ বিজ্ঞানের নয়, দোষ মানুষের।মানুষ যদি বিজ্ঞানের শক্তিকে অপব্যবহার না করে শুভবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হয় এবং বিজ্ঞানকে সভ্যতার বিকাশে কাজে লাগায় তবে বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদই হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অথবা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স যা পুরোপুরি নির্ভর মেশিন লেঙ্গুয়েজের উপর। কম্পিউটার নিজে নিজে কোনো ধরনের কাজ করতে পারে না।...