বিখ্যাত বিজ্ঞান গবেষক কলিন কেনান বলেছেন, “মানুষের মনে বিজ্ঞান চেতনার দীপশিখা প্রথম জ্বলে উঠেছিল আজ থেকে প্রায় দশ হাজার বছর আগে, মধ্যপ্রাচ্যে।”সেই সময় সভ্য মানুষ শুধু প্রাত্যাহিক জীবনের প্রয়জনে নয়, নিছক জানার বা বোঝার আগ্রহেই নানা বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে শুরু করে। বর্তমান সভ্যতা মানুষের বহু শতাব্দীর সাধনার ক্রমো পরিণাম।
মানুষ তার যুগ যুগান্তরের সপ্ন ও সাধনার অনবদ্য ফসল দিয়ে তুলেছে সভ্যতার এই বিশাল ইমারত। বিজ্ঞান ও মানুষের অতন্দ্র সাধনার ফসল। কাল ক্রমে মানুষ বিজ্ঞানকে তার সভ্যতার বিজয়রথের বাহন করে শতাব্দীর পর শতাব্দী পর হয়ে এসে উপনীত হয়েছে বর্তমানের পাদপীঠ- তোলে। বলা বাহুল্য মানুষের সভ্যতার এই চরম সমুন্নত এর মূলে রয়েছে বিজ্ঞানের অপরিসীম বিস্ময়।
সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফল অগ্রসর হয় বিজ্ঞান বর্তমানে পূর্ণরূপে সমৃদ্ধি লাভ করেছে। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে বিজ্ঞান নতুন শক্তি নিয়ে অবতীর্ণ হল। শিল্পজগতে নতুন আলোড়নের সৃষ্টি করলো বিজ্ঞান। দ্রুত উৎপাদনের তাগিদ নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কারের হিড়িক পড়ে গেল। বিজ্ঞানের সমস্ত কার্যক্রম হচ্ছে যন্ত্রের সাহায্যে। আধুনিক বিজ্ঞানের অসীম শক্তি মানুষ প্রকৃতিকে যেন হাতের মুঠোর মধ্যে এনে ফেলেছে।
মানুষ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার কে পূর্ণাঙ্গরূপে কাজে লাগিয়েছে ইউরোপে শিল্প বিপ্লব ঘটে যাবার পর থেকে উনিশ শতকে। ওই সময় মানুষ বাষ্পের শক্তিকে নানান কাজে ব্যবহার করতে শিখে। তারপরে ক্রমে ক্রমে বৈদ্যুতিক শক্তিকে কাজে লাগাতে শিখে । এই শতকে আমরা জ্বালানি কয়লা ও পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস এমনকি পারমাণবিক শক্তিতে মানুষের কল্যাণের কাজে লাগাতে পেরেছি। বিজ্ঞান আমাদের ঐহ্যিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ দিয়েছে, গতি দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে। আমাদের নিত্য জীবনযাত্রাকে করেছ আমোদপুর অগ্নাশয় কিন্তু বিজ্ঞান জনমানুষের প্রাণকে হরণ করেছে তাও সহজ ও স্বাভাবিক জীবন চর্চা কে করেছে ব্যাহত তার শরীর ও মন যেন প্রকৃতির আনন্দময় প্রাণ দায়ক সান্নিধ্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। যন্ত্রকে আমরা যত বেশি প্রশ্রয় দেবো ততই জীবনের কৃত্রিমতা অবসাদ বাড়বে। বর্তমান শতকের মানুষ রোবটেরা হয়তো গৃহস্থের বাচ্চা সামলাবে, ঘর-বাসন সাফ করবে, রান্নার কাজ সেরে ফেলবে, কম্পিউটারের নির্দেশে আমরা ঘুম থেকে জেগে উঠবো, তার হিসাব মত চলব ঠিক এমনটা আমাদের কাম্য নয়।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে এক হয়ে গেছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান কে বাদ দিলে আমাদের সবার বেঁচে থাকায় দুরূহ। মানুষ বিজ্ঞানকে ব্যবহার করছে তার নিত্যকর্মে। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান মানুষকে কেবল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যই দিচ্ছে না, প্রতিমুহূর্তে বিজ্ঞানের প্রয়োগ তার মনকে করছে পরিশীলিত, বিশ্ব বিধানের স্বরূপ উপলব্ধিতে প্রণোদিত করছে। আমাদের জীবনে আমরা তাকে বরণ করেছি প্রয়োজনের অনুরাগে।