আজকের পোস্টে আমরা বুরো বাংলাদেশ এনজিও নিয়ে বিস্তারিতভাবে কথা বলতে যাচ্ছি। বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি সম্পর্কে, এখান থেকে কে কে লোন নিতে পারবেন, কি কি ধরণের লোন নিতে পারবেন, কিভাবে লোন নিবেন, লোন নিতে কি প্রয়োজন এসব কিছু আজকের পোস্টে থাকবে।
বুরো বাংলাদেশ এনজিও
‘বুরো বাংলাদেশ’ বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো এনজিও সমূহের একটি। বুরো বাংলাদেশ গত ৩২ বছর পর্যন্ত তাদের সেবা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণদের দিয়ে যাচ্ছে। এখানে আপনি ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। এখান থেকে যে শুধু ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন তা কিন্তু নয়। তারা আরও অনেক সেবা প্রদান করে থাকে। যেমন রেমিট্যান্স গ্রহণ, সঞ্চয় সেবা, প্রশিক্ষণ, এমনকি তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আপনি মোবাইলও কিনতে পারবে। তারা রেমিট্যান্সের টাকার উপর ২.৫% প্রণোদনা পাবেন। আর সঞ্চয় সেবায় আপনি সর্বোচ্চ ১০% পর্যন্ত মুনাফা পেতে পারেন!
বুরো বাংলাদেশ এনজিও থেকে কি কি ধরণের ঋণ নেওয়া যায়?
বুরো বাংলাদেশ নানা ধরণের ঋণ প্রদান করে থাকে। নিচে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।
সাধারণ ঋণ
ব্যবসা বা আয় বৃদ্ধিমুলক কোনো কাজ করার জন্য এই ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। কিংবা ব্যবসার জন্য মূলধনের প্রয়োজন হলেও এই ঋণ নেওয়া যাবে। গ্রাহক সর্বোচ্চ দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ১ বছর। সাপ্তাহিক বা মাসিকভাবে কিস্তি প্রদান করতে হবে। ২৪% সার্ভিস চার্জ দিতে হবে।
জরুরি ঋণ
কোনো অনুষ্ঠান বা কোনো উৎসবে খরচের জন্য এই ঋণ নেওয়া যাবে। এছাড়া চিকিৎসা, শিক্ষার জন্য কিংবা ব্যবসায় জরুরি স্বল্প কিছু টাকা প্রয়োজন হলে এই ঋণ গ্রহণ করা যেতে পারে। সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যেতে পারে। সার্ভিস চার্জ ২৪%। ঋণ পরিশোধের জন্য ৩ মাস পর্যন্ত সময় পেতে পারেন। কিস্তি প্রদান করতে হবে সাপ্তাহিক বা মাসিকভাবে।
পানি ও পয় নিষ্কাশন ঋণ
পানি পান ও অন্যান্য গৃহস্থালির কাজের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জঅন্য এই ঋণ প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট তৈরির জন্যও এই ঋণ নেওয়া যেতে পারে। আপনার এলাকার উপর ভিত্তি করে ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পেরে পারেব। সাপ্তাহিক বা মাসিকভাবে ঋণের কিস্তি দিতে হবে। সার্ভিস চার্জ ২৪%।
কৃষি ঋণ
কৃষকদের নগদ অর্থ সহায়তা ও নতুন প্রযুক্তি বা মালামাল কেনাদ জন্য সহায়তা করতে এই কৃষি ঋণ প্রদান করা হয়। ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থা ও সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে এই কৃষি ঋণ প্রদান করা হবে। ২৪% সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। সাপ্তাহিক বা মাসিকভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে। ঋণ পরিশোধের সময় ১ থেকে ৩ বছর।
মৌসুমি ঋণ
মাঠ পর্যায়ের প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষকদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে মৌসমি ঋণ দেওয়া হয়। গ্রাহক ১ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন। ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত হতে পারেন। সার্ভিস চার্জ ২৪%।
SME ঋণ
নিজ উদ্যোগে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য এই ঋণ দেওয়া হয়। সার্ভিস চার্জ ২৪%। ঋণের পরিমাণ গ্রাহকের অবস্থার উপর নির্ভর করে। ঋণের উপর ভিত্তি করে ঋণ পরিশোধের জন্য ১ থেকে ৩ বছর সময় পাবেন।
SMAP ঋণ
প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের কৃষি ঋণ ও কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। শুধুমাত্র শস্য, গবাদিপশু ও যন্ত্রপাতির জন্য এই ঋণ ব্যবহারযোগ্য। ৫ হাজার থেকে শুরু করে দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। মেয়াদ ১ থেকে ২ বছর।
দুর্যোগ ঋণ
দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবসার ক্ষতি ও পুঁজির ঘাটতি দেখা দিলে এই ঋণ নেওয়া যাবে। সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। সময়সীমা ১ বছর। সার্ভিস চার্জ ১৮%।
ইলেকট্রনিক প্রোডাক্ট ঋণ
সমাজের যেকোনো স্তরের যেকোনো ব্যক্তি স্মার্টফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিকস ক্রয় করার জিন্য এই ঋণ নিতে পারেন। ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। মেয়াদ ৩,৬,৯ বা ১২ মাস। সার্ভিস চার্জ ২৪%।
বুরো বাংলাদেশ এনজিও থেকে কারা লোন পাবেন?
বাংলাদেশের যেকোনো ব্যক্তি বুরো বাংলাদেশ এনজিও থেকে ঋণ পাবেন। কিন্তু অবশ্যই আপনার ঋণের শর্তগুলো মানতে হবে আর প্রতিটি ঋণের শর্তই উপরে দেওয়া আছে। তার পাশাপাশি আপনাকে বুরো বাংলাদেশ এনজিও এর সদস্যপদ লাভ করতে হবে। নিচে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
কি কি কাগজপত্র দরকার ঋণ পাওয়ার জন্য?
ঋণ পাওয়ার জন্য বুরো বাংলাদেশ এনজিও এর সদস্য হতে হবে। সদস্য হওয়ার জন্য আপনার বয়স ১৮ থেকে ৬০ এর মধ্যে হতে হবে। এর জন্য আপনার কিছু কাগজপত্র লাগবে।
আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগবে। তাছাড়া ভর্তি ফি, পাশবই ফি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ফি মিলিয়ে মোট ২৫ টাকা জমা দিতে হবে। তারপর তারা একটি ভর্তি ফর্ম দিবে সেটি পূরণ করতে হবে। এখন সংশ্লিষ্ট শাখা আপনার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখবে।
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি
ঋণ নেওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই সদস্য হতে হবে। তারপর আপনার নিকটস্থ শাখায় গিয়ে আপনি কোন ঋণ নিতে ইচ্ছুক তা জানান। তাহলেই হয়ে যাবে। যদিও আরও কিছু ছোট ছোট শর্ত আছে যেমন সদস্যপদের বয়স দুই সপ্তাহ হতে হবে। সময়মতো তাদের নিরাপত্তা তহবিলে টাকা দিতে হবে ইত্যাদি।
প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা
হাউজ নং -১২/এ, ব্লক- CEN(এফ, ১০৪ রোড, ঢাকা)
বিভাগীয় অফিসের ঠিকানা
চট্টগ্রামঃ দেবব্রত দাসের বাড়ি, হোল্ডিং নং – ১০৮৫/৩ মোদ্দাম মোহরা ওওসা রোড, চট্টগ্রাম।
বরিশালঃ আসালত খান রোড, রূপাতলী, বরিশাল।
খুলনাঃ ১৭০/২, শের-এ বাংলা রোড, খুলনা।
ময়মনসিংহঃ আকুয়া ওয়েরলেস গেট এন্ড মোড় (কাচাঁ বাজারের কাছে), আকুয়া, ময়মনসিংহ।
রাজশাহীঃ পীরসাহেব পাড়া, রাজপাড়া, রাজশাহী।
রংপুরঃ দর্শনা মোড়, রংপুর।
সিলেটঃ মিতালি আর/এ লেন নাম্বার ৭, হোল্ডিং নাম্বার ১৬৪ রয়াংগার রাজবাড়ি সিলেট।
পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।