ভুলের অর্ধাঙ্গিনী ভালোবাসা
————————————-
সৌমিকের হাত শক্ত করে ধরল তৃণা। গতকাল কে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা এখনো তার কাছে দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে। একটা ছোট সিদ্ধান্ত সব কিছু বদলে দিয়েছে। বালির প্রাসাদের মত ঝরে পড়েছে হালকা বাতাসে। তৃণা নিজেকে শান্ত রাখার ব্যার্থ চেষ্টা করছে। সে তার মন কে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে সে এখন ও স্বপ্ন দেখছে। ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন. যার পরিণতি হয়তো বা মৃত্যু। তার জেদ নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে! এ যদি দুঃস্বপ্ন না হয় তবে আগামি কালকের সূর্য তার আর দেখা হবে না।
এমন কি হয়েছিলো আগের রাতে? হয়তো সাধারন কিছু অসাধারনের বেশে।
সৌমিক আর তৃণার বিয়ে ঠিক হয়েছিল এক সপ্তাহ আগে থেকে। সৌমিকের কঠোর বাবা তাদের প্রেম মেনে নিয়ে কোন দাবী ছাড়াই। এক কাপড়ে তৃণা কে বরণ করে নিতে রাজী ছিলেন। রাজী ছিলেন কিন্তু এখন নন।
হঠাৎ এতো বদলের খেলার সৌমিক ও অবাক, বাকরুদ্ধ। কিছুতেই সে মেনে নিতে পারছেন না। তার বাবা এমন সিদ্ধান্ত কিভাবে নিলেন। এই সেই বাবা যিনি সৌমিকের সকল আবদার, সকল অন্যায় আবদার পূরন করেছেন। তার বাবা তার বিয়ে তৃণার সাথে ভেঙ্গে রুপার সাথে ঠিক করেছে। সৌমিক আজ সকালে তার কারণ জানতে পারে। সে বিশ্বাস করতে পারছে না যে তার বাবা এত পাষাণ হতে পারে। রুপার বাবা বলেছেন তার মেয়েকে বিয়ে করলে আগামি মাসে রুপা আর সৌমিক কে আমেরিকায় তার খালাম্মার কাছে পাঠিয়ে দিবে। সৌমিকের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে তাকে জীবিত কবর দিয়েছেন তার বাবা। এ ভুল কবে ভাঙবে?
হঠাৎ এক ফোন কলে বাস্তবে ফিরল দুজনে। সৌমিকের বাবা ফোন করেছে। তৃণা ভীত চোখে তাকিয়ে আছে সৌমিকের দিকে। ফোন ধরল সৌমিক। ওপাশ থেকে কর্কশ গলায় তার বাবা বললঃ
-তুমি কোথায়?
-জী বাবা আমি তো কলেজে।
-অ্যা.. আর কলেজ করতে হবে না। এবার সংসারে মন দাও। পড়ালেখা অনেক হয়ছে।
-তা কি করে হয় বাবা! সামনে আমার পরিক্ষা।
-রাখো তোমার পরিক্ষা। এবার জীবন সংগ্রামের পরিক্ষা জয়ের দিকে মন দাও। তুমি এখন বাসায় আসো।
-কেন বাবা?
-বেয়াদপ!! বাবাকে প্রশ্ন কর। শোন ছেলে আজ তোমার বিয়ে। কিছুক্ষনের মধ্যে কাজি সাহেব চলে আসবেন। মেয়ের পরিবার এরিমধ্যে চলে এসেছেন।
-আমায় না জানিয়ে এতো বড়সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। আমাকে একবারো জিজ্ঞেস করলেন না।
– ও তোমায় সব জানিয়ে করতে হবে বুঝি?! [চিৎকার করে] কই সৌমিকের আম্মা তোমার পোলায় কি কয় হুইন্না যাও। এরে নাকি জিগাইয়া তার বিয়া ঠিক করতে হ্অব। আসলে আমাগোয় ভুল অইছে। পুলারে পুলারে পয়দা করার আগে জিগানো উচিত আছিলো।
-ব্যাস বাবা থামেন। আমি এখুনি আসছি। তবে আপনারা যা চাইছেন তা কিন্তু হবে বা।
-হেহেহে, আমারে ডর দেখাইতাছ বাপজান। হুনো আমি তোমার বাপ এইডা ভুইলবা না। তুমি না আসলে ঘরে বিষের বোতল আছে। সরবতে মিশাইয়া সবাইরে খাবাইয়া দিমু লগে আমি ও খামু। তারপর আমাগো কবর দিয়া তুমি হেই মাইয়াডারে শাদি কইরো। বুঝলা?
সৌমিক ফোন কেটে দিয়ে উঠে দাড়ালো। সহসা তৃণার হাত ছেড়ে সৌমিক কে উঠে দাড়াতে দেখে তৃণা খুব ভয় পেলো।
– তৃণা এবার আমার যাওয়া দরকার।
– কোথায় যাবে তুমি?
-বাসায়। আজ আমার বিয়ে।
কিছু বলতে গিয়ে ও থেমে গেল তৃণা। সৌমিক বলল, “ভালো থাকো। আর এমন কোন ভুল করোনা যা কষ্টের কারণ হয়”. তৃণা শুকনো হাসি দিয়ে বলল,”ভেবো না। আমি তোমার মত কাপুরুষের জন্য জীবন দেবো না। আমি বেঁচে থাকব। তোমার সামনেই কোন রাজপুত্র কে বিয়ে করব”.
সৌমিক চলে যাচ্ছে। আর তৃণা একলা দাড়িয়ে। তৃণার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে “সৌমিক আমি যা বলেছি তা সব অভিমানের। তুমি সুখে থেকো”.
মান অভিমানের খেলায় আজ দুজনেই পরাজিত।
কিছু ভালোবাসা না হয় ভুলে ভরা থাক।