আমাদের জীবনে প্রায় এরকম কিছু ঘটনা ঘটে, যে ঘটনাগুলো আমরা যত বেশী ভুলতে চাই সেই ঘটনাগুলো আরো ততো বেশি মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে । আর আমাদের মন অশান্ত হয়ে ওঠে। কেউ কোন একটা খারাপ কথা বলল বা পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হয়ে গেল বা হয়ত কোন কিছুই হারিয়ে গেল আর দিনের পর দিন আমরা সেই জিনিসটা নিয়ে চিন্তা করতে থাকি,ভাবতে থাকি।
এসব সমস্যা সমাধান হয়তো অল্প সময়ের জন্য হতে পারে। কোন সিনেমা দেখে হয়তো কিছুটা মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেন,গান শুনে হয়তো কিছু সময় ভুলে থাকার চেষ্টা করলেন ,বা পছন্ডের কনো জায়গায় গিয়ে মনকে ভালো করার চেষ্টা করলেন । এগুলো টেম্পারালি সুলোশন। ক্ষণিকের জন্য হয়তো আপনি বেরিয়ে আসতে পারবেন কিন্তু যখনই সেই কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকবেন তখনই আবার সেই জিনিস গুলো মনে পড়বে আর মন অশান্ত হয়ে উঠবে ।
আজ আমরা কোন টেম্পারালি সুলোশনে না গিয়ে এসব সমস্যায় আমরা একদম গোড়ায় এর দীর্ঘ স্থায়ী সমাধান কিভাবে খুঁজে বের করা যায় তা আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো।
এসব সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য সবার আগে আপনাকে যেটা বুঝতে হবে আমাদের মন কল্পনা এবং বাস্তবের মধ্যে কোন পার্থক্য করতে পারে না ।যেমন-আমরা যখন ঘুমাতে গিয়ে রাত্রে কোন স্বপ্ন দেখি তখন অনেক স্বপ্ন আমাদের অনেকের কাছে সত্যি বলে মনে হয় ।
ধরুন, স্বপ্নে একটা বাঘ আপনাকে কামড়াতে দৌড়ে এগিয়ে আসছে,তখন রীতিমত আপনার হাত-পা ঘামতে থাকে তরতর করে কাঁপতে থাকে।হার্টবিট বেড়ে যায় ।
এখন যদি বাস্তবে কোন বাঘ আপনাকে তাড়া করে ঠিক ঐ স্বপ্নের সময় আপনার যে যে অনুভুতি হতো হাত-পা কাপ তো হার্ট বিট বেড়ে যেত বাস্তবে ও ঠিক একই অনুভূতি হবে আপনার ।
অর্থাৎ ঘুমানোর সময় আমাদের মন বাস্তবের মতো কাজ করে ।যখন ঘুম থেকে জেগে উঠি তখন বুঝতে পারি ও এতক্ষণ স্বপ্নে দেখছি ,যাক এবার বেসে গেলাম বাস্তবে যেন এরকম না ঘটে ।
তখনই সাথে সাথে আমাদের মনে কিছুটা শান্তি এসে যায়।ঘুমানোর সময় দুঃস্বপ্নের মধ্য অশান্ত মনকে শান্ত করার উপায় কি ?
তা হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘুম থেকে জেগে ওঠা্ আর জেগে ওঠা মানে কি? জেগে ওঠা মানে হচ্ছে ওই কল্পনার জগত থেকে বের হয়ে আসা।আসল সত্যিটাকে উপলব্ধি করা।
ধরো, আপনি কারো সাথে অনেক বছর ধরে একটা সম্পর্ক ছিলো।হটাৎ কিছুদিন আগে তার সাথে কোন একটা ঝামেলা সৃষ্টি হলো।আপনাদের দুজনের সম্পর্ক তা সেখানেই শেষ হয়ে গেল ।
এরকম ক্ষেত্রে আমাদের বেশিরভাগের নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আসে ,এখন আমি কি করবো,তার কথা বারবার মনে পড়ছে,থাকে আমি কেমনে ভূলতে পারবো,ওকে ছাড়া আমি কেমনে বাঁচবো?
কেন ভাই? সে কি আপনার অক্সিজেন ছিল যে তাকে ছাড়া আপনি বাঁচতে পারবেন না। নাকি থাকে খেয়ে আপনার পেট ভরতো? সে চলে গেলে আপনি না খেয়ে মরে যাবেন।
এসব নেতিবাচক চিন্তা করতে করতে আপনি ওই ঘুমের মতো কল্পনা রাজ্য ঢুকে যাচ্ছেন,যার সাথে বাস্তবের কোনো যোগাযোগ নেই,আসল সত্যি থাকে আপনি দেখতে পাচ্ছেন না ।
আসল সত্যিটা কি যে হা আপনি তার সাথে অনেক বছর ধরে কথা বলছিলেন, একসাথে সময় কাটিয়েছিলেন ,মনের কথা শেয়ার করছিলেন,এগুলো হয়তো আপনার অভ্যাস হয়ে গেছে তো এসব অভ্যাসগুলো পাল্টাতে হয়তো একটু কষ্ট হবে একটু সময় লাগবে, কিন্তু তাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না, তাকে আমি ভুলতে পারব না,আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল এমন তা করার মানে কি?
এগুলোর সাথে বাস্তবের কোনও অর্থ হয় না ।এই সব পাগলামি করার কোন মানে নেই ।
আরো একটি উদাহরণ দিয়ে বলি ধরেন এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তার ব্যাংক একাউন্টে ১০ কোটি টাকা ছিল ।এবং তার ব্যবসা দিন দিন সফল হতে লাগলো ।এভাবে চলতে চলতে একসময় তার ব্যবসায় বিশাল একটা লস খেলো। লস খেতে খেতে একসময় তার ব্যাংক একাউন্টে ১০কোটি টাকা থেকে মাত্র ১০ লক্ষ টাকা ছিল ,এখন লোকটি তো পুরো হতাশায় হাহাকার ,আমিতো বরবাদ হয়ে গেলাম, আমার এতদিনের জমানো টাকা সব শেষ হয়ে গেল, আমি আর জীবনে বড়লোক হতে পারবো না ।সব দুশ্চিন্তা এবং শোকে একসময় আত্মহত্যার পথ বেছে নিল তার পাঁচ তলা ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেলো ।
এখন একবার ভাবুন তো একজন সাধারণ মানুষের বা একজনের রিক্সাওয়ালার যদি ব্যাংক একাউন্টে ১০ লক্ষ টাকা থাকে সে কি কখনো আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে?
ওই ভদ্রলোকটির ব্যবসায় লস খাওয়ার পরেও তার একাউন্টে কিন্তু ১০ লক্ষ টাকাই ছিল তার হতাশা এবং নেতিবাচক চিন্তা থাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল যার কারনে ওই ১০ লক্ষ টাকা তার মাথায় আসলো না।এরকম কত না আমরা প্রতিনিয়ত শুনতে পায়।
আপনার মনকে শান্ত করার একমাত্র উপায় হলো ,নিজেকে নিজে বুঝতে শেখা ।