“মা কে চাই, মায়ের লাশ না”
………………………….
………………………
এইতো সেদিনের ঘটনা। আমার বন্ধু আরিফ। একদিন আমরা সব বান্ধবীরা মিলে আরিফের বাসায় বেড়াতে গেলাম। আরিফও আমাদের সাথে। আরিফ কলিং বেল চাপল। আন্টি গেইট খুলতে একটু লেইট করেছিলেন। গেইট খুলতে লেইট করায় আরিফ তার মাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। আমি অবাক হলাম। রাগে ইচ্ছে করছিল আরিফকে কষে দুটা চড় দেই। ফাজিল। মা’র সাথে কেউ এরকম ব্যবহার করে? আরিফ ততক্ষণে বাইরে চলে গিয়েছিল। আন্টি আমাদের সাথে গল্প করছিলেন। একবার আরিফ পুকুরে পড়ে গিয়েছিল। আন্টি দৌড়ে পুকুরে ঝাপ দিলেন ছেলেকে বাঁচাতে। আর সেই ছেলে কিনা মাকে গালাকালি করে! আন্টি: জানিস মা, আমার স্বপ্ন আমার বুকের মানিক আরিফ একদিন অনেক বড় হবে। বিদেশ যাবে। আমাকেও নিয়ে যাবে। আমার দুঃখ দূর করবে। আমার আরিফ আমাকে কষ্ট দিলেও কিছু মনে করি না। ভাবি! ছোট তো! রাগটা একটু বেশিই করে। কথার এক ফাঁকে আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম-
আমি: আচ্ছা আন্টি! আরিফ যে আপনাকে কষ্ট দেয় আঙ্কেল কিছু বলেন না আরিফকে?
আন্টি: না রে মা! ওর বাবাই তো ওর সামনে আমার গায়ে হাত তুলে।
কথা শেষ করে সেদিন বাসায় চলে আসি। আরিফের উপর ভীষণ রাগ হয় আমার। এভাবে কিছুদিন কেটে যায়। আরিফ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। জানতে পারলাম আন্টির ব্লাড ক্যান্সার। ২ মাস বাঁচবেন বড় জোড়। ছেলেকে জানান নি আন্টি। আমরা নিজের সাধ্যমত টাকা জোগাড় করে আন্টির চিকিৎসা করালাম। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরেও আন্টিকে বাঁচাতে পারলাম না। আরিফকে ফোন দিলাম, “দ্রুত হাসপাতালে আয়। আন্টির শরীরের অবস্থা বেশি ভালো না। ” সে আসে। ততক্ষণে আন্টি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আমি কান্না কন্ঠে বললাম, “আরিফ আন্টি আর নেই। আন্টি মারা গিয়েছেন। এখন কাকে বকা দিবি গেইট খুলতে লেইট করলে? এখন তোকে নিয়ে কেউ স্বপ্ন দেখবে না। আয়! মাকে শেষ বারের মত দেখবি। ” আরিফ কান্না করতে করতে বলে, “মা’র কি হয়েছিল? ” আমি বললাম, “ব্লাড ক্যান্সার”।
আরিফ বলল, ” আমি তো জানি না মায়ের ক্যান্সার।”
আমি: কিভাবে জানবি? তোর লেখাপড়ার ক্ষতি হবে ভেবে আন্টি তোকে বলেন নি।
আরিফ জোরে চিৎকার করে বলে, ” আমি মা কে চাই, মায়ের লাশ না”।