যেকোনো বিষয় এর পড়াশোনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রি ধরা হই পিএইচডি ডিগ্রি।আমাদের দেশে ৩০-৪০ বছর সর্বোচ্চ ৪৫ বছরের ভিতরে মানুষ এই ডিগ্রি নেয়ার চেষ্টা করেন।এর পরে কেউ এইটা নিয়ে ভাবেন না বললেই চলে। কারণ পড়াশোনা কে আমরা বর্তমানে শুধু মাত্র নিজেদের পয়সা উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে মেনে নিয়েছি।যার কারণে একটা বয়সের পরে আমাদের আর পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ কাজ করে না। সত্যি বলতে আমরা কখনোই আসলে সত্যিকার মনের আনন্দে পড়াশোনা করি না বললেই চলে।
কিন্তু একটু আমাদের দেশের বাইরে চিন্তা করলে প্রেক্ষাপট টা বেশ ভিন্ন। উন্নত দেশ গুলো তে অনেকেই চাকরির থেকে অবসর গ্রহণের পরেও সময় টা কাজে লাগান বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করে। অনেকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ডিগ্রিও নেন।
তেমনই এক অদ্ভুত লোক পেলাম যিনি ৮৯ বছর বয়সে কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর মতো কঠিন সাবজেক্ট এ একেবারে পিএচডি করে বসলেন।সত্যি বলতে রীতিমতো অবিশ্বাস্য ব্যাপার। ৮৯ বছর বয়সে পিএইচডি করা কোন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাও আবার কোয়ান্টাম ফিজিক্সে। অন্য লেভেলের পাগল ছাড়া এই ধরণের কাজ অসম্ভব। যাদের এমন প্রচন্ড ইচ্ছেশক্তি থাকে তারা আদতে পাগলই হয়। আর এমন পাগলরাই পারে লক্ষ্য পূরণ করতে।
ম্যানফ্রেড স্টেইনার নামের এই মানুষ টি পেশায় ছিলেন একজন দক্ষ ডাক্তার। কিন্তু সারাজীবন ফিজিক্সের প্রতি ভালোবাসা পুষে রেখেছেন। সত্তর বছর বয়সে ডাক্তারি থেকে অবসর নিয়েছেন। শুরু করেছেন ফিজিক্স পড়া। সে বয়সে আন্ডারগ্রেজুয়েট স্টুডেন্টদের সাথে ক্লাস করেছেন। পর্যাপ্ত কোর্স করেছেন পিএইচডিতে ভর্তির জন্য। ৮৯ বছর বয়সে শেষ করেছেন পিএইচডি। তাও যেনতেনো ইউনিভার্সিটি থেকে নয়। ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে—আমেরিকার আইভিলিগ স্কুল!
সত্তর বছর পর্যন্ত যে ডাক্তারি করেছেন, তারা টাকার কোন অভাব ছিলো না। চাইলেই শুয়ে বসে দিন কাটাতে পারতেন। কিন্তু সেটা করেননি। ইচ্ছের তীব্র তাড়নায় কোয়ান্টাম ফিজিক্স পড়তে গেছেন। পড়েছেন আনন্দ নিয়ে। জেনেছেন আনন্দের জন্য। আর সেই আনন্দ নিয়েই দীর্ঘ দিনের ইচ্ছেকে পূরণ করেছেন। প্রমাণ করেছেন, বয়স একটা সংখ্যা মাত্র। A burning desire is key to success.
ম্যানফ্রেড স্টেইনকে কাছে পেলে একটু চরণ ধুলো নিতাম। তিনি নতুন করে শিক্ষা দিলেন। দেখালেন, জীবনের স্বপ্নকে পূরণ করতে হলে, পাগলের মতো ইচ্ছেশক্তি থাকা চাই। আরো একটা লক্ষনীয় ব্যাপার উপলব্ধির প্রয়োজন আমাদের সবার জ্ঞান অর্জন এর থেকে শান্তির অনুভূতি আর কোথাও তেমন একটা পাওয়া যায় না। যার কারণে ম্যানফ্রেড স্ট্রেইনার নিজের শেষ বয়সে এসেও জ্ঞান অর্জন এর লোভ টা তিনি সামলাতে পারেন নি।ঘুরে বেরিয়েছেন জ্ঞানের গহীন অরন্যে।অথচ আমাদের কাছে পড়াশোনা বা জ্ঞান অর্জন টা হলো শুধু মাত্রই উপার্জন করার একটি হাতিয়ার।
এইটা অস্বীকার করবার উপায় নেই যে বাস্তবিক দৈনন্দিন জীবনে টিকে থাকার জন্য আমাদের নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত নির্দিষ্ট একটা বিষয়ে আমাদের যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে হই।কিন্তু এর মানে এই না যে আমাদের ওইখানেই থেমে যেতে হবে। আমাদের নিজেদের আত্নিক শান্তির জন্য হলেও পড়াশোনা বা জ্ঞান অর্জন চালিয়ে যাওয়া উচিত যেটা ম্যানফেড স্টেইনার এর মতো মানুষেরা করে চলেছেন। এতেই পাবেন নতুন কে জানার আনন্দ,নিজেকে প্রতিদিন নতুন ভাবে আবিষ্কার এর স্বাধীনতা।