আসসালামুয়ালাইকুম সকল কে, আশা করি সকলে ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তাই মনোযোগ দিয়ে আর্টিকেল টি পড়ার অনুরোধ রইল।
সফট ড্রিংকস আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত একটি শব্দ।
বর্তমানে সফট ড্রিংকস পান করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া
খুবই দুর্লভ। তবে কিছু মানুষ আছে, যারা সফট ড্রিংকস পান করে না এবং এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানে।
আমরা প্রায় সবাই কম বেশি সফট ড্রিংকস পান করে থাকি।
হতে পারে সেটা কোন অনুষ্ঠানে অথবা রিচফুড বা ফাস্টফুড
খাওয়ার পরে। এছাড়াও প্রচণ্ড গরমের দিনে রাস্তায় বের হলেই
দোকান থেকে বিভিন্ন কোম্পানির সফট ড্রিংকস পান করে থাকি। বর্তমানে এগুলো পান করা এখন আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু, আসলেই কি সফট ড্রিংকস পান করার ফলে আমাদের শরীরে কোন উপকার হচ্ছে কি না, তা কি আমরা ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখেছি ?
চলুন, সফট ড্রিংকস এর ভয়াবহতা জানার পূর্বে সফট ড্রিংকস এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে আসিঃ
সফট ড্রিংকস এর ইতিহাস সম্পর্কে খোঁজ নিলে দেখতে পাই যে, ১৭ শতকের দিকে পশ্চিমা দেশে এটির প্রথম বাজারজাত চালু হয়, পরে আসতে আসতে এটি সব দেশে বিস্তার লাভ করে। প্রথম অবস্থাতে এটি তৈরি করার জন্য পানি, লেবু এবং মধুর সংমিশ্রণ করে তৈরি করা হত। কিন্তু, যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের মাঝে এর জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য এবং আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য এর টেস্ট, দৃষ্টিনন্দন এর উন্নতিন করার
চেষ্টা শুরু হয়। এর জন্য ব্যাবহার করা শুরু হল বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান। শুরুর দিকে এটি পান করতে বেশ ভাল লাগলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর ক্ষতিকর প্রভাব গুলো সামনে আসতে থাকে।
চলুন, এবার তাহলে আমরা জেনে নেই, এর ক্ষতিকর দিক গুলো সম্পর্কেঃ
১। ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান মিশ্রণঃ
সফট ড্রিংকস তৈরি করার জন্য এতে মিশানো হয় অতি মাত্রায় ক্যাফেইন, কৃত্তিম রং, ঘন চিনি, ইথিলিন গ্লাইকন, ফসফরিক এসিড এর মতো উপাদান। যেটি দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
২। ওজন বৃদ্ধি করেঃ
সফট ড্রিংকসকে মিষ্টি করার জন্য এতে ব্যাবহার হয়ে থাকে সেকারিন, গুলুকোজ, ফ্রূকটোজ, সুক্রোজ এর মতো রাসায়নিক উপাদান। এছাড়াও সফট ড্রিংকস এর একটি ক্যান বা বোতলে চিনির পরিমান থাকে প্রায় ১০ চামচ। যা একজন সুস্থ মানুষের পক্ষে একবারে খাওয়া অনেক ক্ষতিকর। এগুলোর পরিমান অনেক বেশি থাকার ফলে শরীরে প্রচুর ক্যালরি জমা হতে থাকে। এই ক্যালরি বার্ন করার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে ব্যায়াম করতে হয়। যা খুব কম মানুষই করে থাকে। অতিরিক্ত চিনি দেহে ফ্যাট হিসেবে জমতে থাকে, যার ফলে ওজনও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৩। ক্যাফেইন এর ক্ষতিকর প্রভাবঃ
সফট ড্রিংকস তৈরিতে ক্যাফেইনের ভুমিকাও কম নয়। ক্যাফেইন মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে থাকে, যার ফলে সে অনেক সতেজ অনুভব করে, কোন দুর্বলভাব বা অলসতা কাজ করে না। কিন্তু কিছু সময় যাওয়ার পর আবার অবসন্নতা কাজ করা শুরু করে। এছাড়াও ক্যাফেইন গ্রহন করার ফলে তাদের মধ্যে সফট ড্রিংকস খাওয়ার আসক্তি বেড়ে যায়। তাছাড়া ঘুম কম হওয়া, স্বাভাবিক হ্রদস্পন্দন ব্যাঘাত, মহিলাদের গর্ভপাত, জন্মগত শিশুদের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি ইত্যাদি হয়ে থাকে।
৪।ফসফরিক এসিড এর ক্ষতিকারক প্রভাবঃ
যখন আমরা সফট ড্রিংকস পান করা শুরু করি তখন এর মধ্যে থাকা ফসফরিক এসিড আমাদের দাঁতের আউটার লেয়ার এর এনামিল পাতলা করে ফেলে। এছাড়াও ফসফরিক এসিড এর মাধ্যমে সফট ড্রিংকস এর অধিক পরিমান চিনির মিষ্টতা কমিয়ে রাখা যায়, যার ফলে এতো চিনি থাকা সত্ত্বেও আমরা তা পান করতে পারি। এই এসিড অতি মাত্রায় থাকার কারনে, আমাদের দেহের সঞ্চিত ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক এর মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানগুলোকে ক্ষুদ্রান্ত্রে পাঠাতে থাকে,
যার ফলে সফট ড্রিংকস পান করার ১ ঘণ্টার মধ্যে ইউরিন/প্রস্রাব এর জন্য জেতেই হয় এবং এর ফলে দেহ থেকে সব পানি বেরিয়ে যায়। যার কারনে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
৫।হজমের ব্যাঘাত ঘটায়ঃ
আমাদের অনেকেরই কমন ধারনা যে, সফট ড্রিংকস আমাদের খাবার হজমে সহায়তা করে। কিন্তু, এই ধারনাটি আসলে ভুল। বরং এর উলটো টা হয় অর্থাৎ, এটি পান করার ফলে পাকস্থলীর স্বাভাবিক খাবার হজম করার প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়, যার কারনে খাবার হজমের পরিবর্তে খাবার পচানো শুরু করে, যার ফলে পেটে গ্যাস এর সৃষ্টি হয়।
সুতরাং, সবশেষে এই টুকু বলতে পারি যে, এই সফট ড্রিংকসে এমন কিছু নেই যা আমার এবং আপনার শরীরের উপকারে আসবে।
দাঁত এবং হাড় ক্ষয়, পেটে এসিডিটি বা আলসার, ফ্যাটি- লিভার এবং হার্ট-এট্যাক এর মতো মারাক্তক সমস্যা হয়ে থাকে এই সফট ড্রিংকস বা কোমল পানিও পান করার ফলে।
তাই আমরা যতটুকু পারব সফট ড্রিংকস কম খাবো এবং এর পরিবর্তে টাটকা ফলের রস, দুধ পান করার অভ্যাস গড়ে তুলব।
সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকার চেষ্টা করবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।