পাল্কির বিকল্প হিসাবে শুরু হয় রিক্সার প্রচলন। রিক্সার ইতিহাস অনেক পুরানো। রিক্সাড় ইতিহাস প্রাচীন কিন্তু এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আমাদের রাজপথ।বলা হয় আধুনিক রিকশার পিতা হলো সাইকেল। যেই সাইকেলের আবিস্কারক ছিলেন একজন চোর। অর্থাৎ তার পেশা ছিলো চুরি করা। হয়তো চুরির সুবিধার জন্যই সাইকেলে আবিস্কার করেছিলেন। তবে এর পক্ষে তেমন প্রমাণ পাওয়া যায় না।
তবে ১৮৬৬ সালের ২০ নভেম্বর পিয়ের লালেমেন্ট সাইকেল উদ্ভাবন করেছিলেন।এই সাইকেলের পরবর্তী ধাপ হলো রিকশা।২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জ্বালানি সংকটের কারণে জাপানে রিকশার প্রচলন ব্যাপক বেড়ে যায়।
রিকশা শব্দটিও এসেছে জাপানি ‘জিনরিকশা’ শব্দটি থেকে। চীনা ভাষায় জিন শব্দের অর্থ করলে দাঁড়ায় মানুষ, রিকি শব্দটির অর্থ হলো শক্তি; আর ‘শা’ শব্দটির মানে বাহন। অর্থগুলো এক করলে দাঁড়ায় মানুষের শক্তিতে চালিত বাহন।
জাপানে প্রাচীনকালে রিকশা ছিলো দুই চাকার। সামনের দিকে চাকার বদলে একজন মানুষ এটা টেনে নিয়ে যেত। এ ধরনের রিকশাকে বলা হয় ‘হাতেটানা রিকশা’। সেই রিকশার বংশধররা এখন কলকাতায় চলাচল করছে। ২০০৫ সালে পচিমবঙ্গ সরকার হাতে টানা রিকশাকে অমানবিক বলে তা নিষিদ্ধের প্রস্তাব করে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের রিকশা বেশ আধুনিক অর্থাৎ প্যাডেল চালিত। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ১৯১৯ কিংবা ১৯২০ সালের দিকে। ঢাকাতে প্রথম রিকশার লাইসেন্স দেয়া হয় ১৯৪৪ সালে। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্য অনুসারে, ঢাকায় কমপক্ষে ৫ লক্ষাধিক রিকশা চলাচল করে এবং ঢাকার ৪০ শতাংশ মানুষই রিকশায় চলাচল করে। ২০১৫ সালে এটিকে বিশ্ব রেকর্ড হিসেবে তাদের বইয়ে স্থান দেয়।
রিকশার আরেকটি মজার জিনিস হলো তার পেইন্টিং। যার কারণে রিকশা বরাবরই বিদেশীদের নজর কেড়েছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশে ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনের সময় প্রতিটি দলের অধিনায়করা রিকশায় করে মাঠে উপস্থিত হন। বিষয়টি বেশ প্রশংসিত হয়।
আমাদের অনেক রিক্সার পেছনেই এক ধরণের পেইন্টিং বা, চিত্র আঁকানো থাকে। এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। এই রিক্সা চিত্রগুলো আমাদের গর্বের বিষয়। এটিকে আমাদের চিত্রকলার সম্পূর্ণ আলাদা একটি ধারাও বলা চলে। রিক্সাচিত্র বলতে উজ্জ্বল রঙে আঁকা কিছু চিত্রকে বোঝানো হয়। সাধারণত বাংলাদেশ এবং ভারতেই রিক্সার পেছনে এ ধরণের চিত্রকলা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষজ্ঞরা একে ফোক আর্ট, পপ আর্ট বা, ক্র্যাফটের মর্যাদাও দিয়ে থাকেন।
১৯৫০ এর দশকে বাংলাদেশে রিক্সাচিত্রের প্রচলন শুরু হয়। রিক্সাচিত্রে ফুল-ফল, পশু-পাখি, নদী-নালা, প্রকৃতি এমনকি জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকাদের ছবিও আঁকানো হয়ে থাকে। কখনও কখনও রিক্সাচিত্রে রিক্সাচালকের ধর্মীয় বিশ্বাস বা, সামাজিক কোন বক্তব্য প্রতিফলিত হত। তবে বর্তমানে কম্পিউটারের সাহায্যে ছবি তৈরি করে, টিনের ধাতব প্লেটে ছাপ দিয়ে খুব সহজেই রিক্সাচিত্র তৈরি করা হয়। ফলে দেশের ঐতিহ্য বা, প্রকৃতি আর সেভাবে সেখানে ফুটে ওঠেনা। ফলে রিক্সা চিত্রশিল্পীরা তাদের কর্মক্ষেত্র হারাচ্ছেন, পাশাপাশি এই শিল্পও তাঁর অতীত গৌরব হারাতে বসেছে।