আসসালমু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আচ্ছা আপনি কি অতিমাত্রায় স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন? অনেক চেষ্টাতেও স্মার্ট ফোনের আসক্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারছেন না? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। আজকে আমি আপনাকে দেখাবো কিভাবে আপনি স্মার্ট ফোনের আসক্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন।
কোভিট-১৯ আমাদেরকে দেখিয়েছে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আমরা স্মার্ট ফোনের উপর কতটা নির্ভরশীল। এই জন বিচ্ছিন্ন বিশ্বকে একমাত্র কাছাকাছি নিয়ে এসেছে এই স্মার্ট ফোন। এই বিশ্ব মহামারিতে স্মার্ট ফোন আমাদেরকে একাধিক উপায়ে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এই মহামারির সময় মানুষ সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের পরিবারের লোকেদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে, লেখাপড়া করতে, আনন্দ বিনোদন উপভোগ করতে এবং সময় কাটানোর জন্য ফোনে প্রচুর সময় ব্যয় করেছে ।
এর ফলে তারা বাড়িরে ভিতরে নিজেকে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত হয়েছে। ফলে তারা অতিমাত্রায় স্মার্ট ফোনের প্রতি আসক্ত হয়েছে। যা অনেক চেষ্টা করেও আর নিজেকে স্মার্টফোন ব্যবহার থেকে রক্ষা করতে পারছে না। আজকে আমি আপনাদেরকে এমন কিছু টিপস দিব যেগুলো আপনাকে স্মার্ট ফোনের আসক্তি থেকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। চলুন তাহলে মূল আলোচনায় যাওয়া যাকঃ
অতিমাত্রায় স্মার্টফোন আসক্তি থেকে বাঁচার উপায়
বর্তমান সময়ে অতিমাত্রায় স্মার্টফোন ব্যবহার মাদকদ্রব্যের অতি ব্যবহারের মতোই ভয়ঙ্কর। কিন্তু তবুও বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ অতিমাত্রায় স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে চলছে। আমাদের পরিবারের বড়রা থেকে শুরু করে শিশুবাচ্চারা যে স্মার্ট ফোনের প্রতি ব্যাপকভাবে আসক্ত হয়েছে তার জন্য আমরা সবাই দায়ী। আজকের এ পোস্টটি আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে স্মার্ট ফোনের আসক্তি থেকে মুক্ত করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে।
স্মার্টফোন আসক্তির লক্ষণসমূহ
প্রয়োজন অনুযায়ী ফোন ব্যবহার করা এবং দায়িত্বহীনভাবে ব্যবহার করার মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য লোক ফোন ব্যবহার করে । কিন্তু অতিমাত্রায় ব্যবহার করা সত্যিই একটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আপনি যদি অতি মাত্রায় ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে নিচের বিষয়গুলো আপনাকে সনাক্ত করবে আপনি স্মার্টফোনে আসক্ত কিনা? চলুন জেনে নেওযা যাকঃ
ফোন আসক্তির লক্ষণ ও উপসর্গ সমূহ
- ফোন আসলে বা ম্যাসেজ আসলে তা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা
- অন্যসব কাজের মধ্যে ফোন ব্যবহারের বিষয়টি মাথায় রাখা
- সোস্যাল মিডিয়ায় নতুন কোনকিছু না থাকা সত্ত্বেও রিফ্রেশ করা
- আপনার কাছ থেকে কেউ ফোন নিলে, চার্চ না থাকলে বা ফোন নষ্ট হয়ে গেলে অস্বাভাবিক আচরণ করা
- বারবার ফোন ব্যবহার করতে না চাওযা সত্ত্বেও বারবার ফোন ব্যবহার করা
- কোন কারণে ফোন ব্যবহার কম হলে রাগ, ক্ষোভ এবং হতাশা কাজ করা
- আপনার ফোনটি কেউ নিতে চাইলে না দেওয়ার নানা অজুহাত তৈরি করা
অতিমাত্র্রায় স্মার্টফোন ব্যবহার থেকে নিজেকে রক্ষা করার ১০ টি উপায়
এসব উপসর্গ গুলো পড়ার পর যদি আপনার মনে হয় যে এর তিনটি বা চারটি লক্ষণ আপনার মধ্যে দেখা যায় তাহলে ভাববেন আপনি প্রাথমিকভাবে স্মার্টফোনে আসক্ত। আপনি স্মার্টফোন আসক্ত কিনা এবার আপনি নিশ্চিত হতে পেরেছেন। এসব থেকে বাঁচার জন্য আপনি নিচের টিপস এবং ট্রিক্সগুলো অনুসরণ করতে পারেন। চলুন শুরু করা যাকঃ
১. আপনি যখন ফোন ব্যবহার করবেন তখন তার উদ্দেশ্যকে বিবেচনা করুন
আমরা ফোন অতিমাত্রায় ব্যবহার করার ফলে ভুলেই গেছি যে ফোনগুলো কোন উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ওহায়াটআপ সহ বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়াগুলোর প্রভাবে আমরা প্রায় ভুলেই গেছি যে ফোন তৈরি হয়েছেল দূরের মানুষের সাথে কল করার জন্য বা যোগাযোগ করার জন্য।
আপনি যখন ফোন ব্যবহার করবেন তখন এর আসল উদ্দেশ্যটিকে মাথায় নিয়ে ব্যবহার করুণ। এবং সাথে সাথে এটা ভাবুন যে ফোন ব্যবহার আপনার উপকারে আসছে কিনা। যদি কখনো মনে করেন যে এই মহূর্তে কোন কারণ ছাড়া আপনি ফোনটি ব্যবহার করছেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
২. সোস্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা
সোস্যাল মিডিয়া আপনাকে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে স্মার্টফোনে ধরে রাখে। যা আপনার আসক্তি জন্মানোর জন্য যথেষ্ট । আপনি যদি স্মার্টফোনের আসক্তি থেকে নিজেকে বাঁচাতে চান তাহলে আপনাকে সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা থেকে সরে আসতে হবে। এজন্য আপনি আপনার ফেসবুক একাউন্ট ও ইনস্টাগ্রাম একাউন্টকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারেন। যা আপনাকে স্মার্টফোন আসক্তি থেকে বাঁচতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে।
৩. অ্যাপ নোটিফিকেশনগুলিকে সীমিত বা নিষ্ক্রিয় করুন
বিভিন্ন অ্যাপগুলো থেকে নোটিফিকেশন আসা আপনার ফোন আসক্তির সবচেয়ে বড় কারণ। কেননা আপনার ডিভাইসে ইনস্টল করা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের অ্যাপসগুলো অবিরামভাবে আপনাকে নোটিফিকেশন পাঠাতে থাকে যা আপনাকে অনেক ক্ষণ যাবৎ স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে বাধ্য করে। আপনি যদি এসব আসক্তি থেকে নিজেকে বাঁচাতে চান তাহলে আপনাকে অ্যাপ নোটিফিকেশনগুলোকে সীমিত রাখতে হবে নয় ফোন থেকে একিবারে নিষ্ক্রিয় করতে হবে।
৪. অ্যাপ ব্যবহার সীমিত বা ব্লক করতে অ্যাপ ব্যবহার করুন
যদি আপনি কোন নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যবহার করতে আসক্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য সহজ সমাধন হচ্ছে এমন কিছু অ্যাপ রয়েছে যেগুলো অন্য অ্যাপগুলোর ব্যবহার বা অ্যাপগুলোকে ব্লক করার ক্ষমতা রাখে। এক্ষেত্রে আপনি সেই অ্যাপগুলো ব্যবহার করে আপনি ফোন ব্যবহার কমাতে পারেন।এজন্য আপনি AppBlock অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন। অ্যাপব্লক অ্যাপটি আপনাকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো ব্লক করতে সাহায্য করবে।
৫. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে আনইনস্টল করুন
আপনাকে আসক্তি করতে পারে এমন অ্যাপগুলোকে আপনার ফোন থেকে মুছে ফেলুন। কারণ, এমন কিছু অ্যাপ রয়েছে যেগুলো আপনার মোবাইলে থাকলে আপনাকে আসক্তির দিকে ঠেলে দিবেই। এমন অ্যাপ বা অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে আপনি আপনার ফোন থেকে আনইনস্টল করুণ। যা আপনাকে ফোনের আসক্তি থেকে রক্ষা করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে।
ফোনে অ্যাপস রিমুভ করা খুবই সহজ। হোম স্ক্রিনে বা আপনার অ্যাপের তালিকায় আপনি যে অ্যাপটি সরাতে চান তা খুঁজে বের করুন এবং ড্রপডাউন মেনু প্রদর্শিত না হওয়া পর্যন্ত এটিতে একটি আঙুল দিয়ে চেপে ধরে রাখুন। আনইনস্টল নির্বাচন করুন এবং ওকে চাপুন। এভাবে আপনি আপনার অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে আপনার ফোন থেকে মুছে ফেলতে পারেন।
৬. মাইন্ডফুলনেস / মেডিটেশন অ্যাপ ইনস্টল করুন
মানসিক স্বাথ্যের জন্য মেডিটেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে। মেডিটেশনের মাধ্যমে আপনি আপনার মানসিক উন্নতি এবং মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারেন। মেডিটেশন আপনাকে মাইন্ডফুলনেস ভাবে এবং উৎসাহ সহকারে কোন কাজ করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে। বর্তমানে অনেক মাইন্ডফুলনেস ও মেডিটেশনের অ্যাপ রয়েছে যেগুলো ইনস্টল করে ব্যবহার করলে আপনি মেডিটেশনের অনেক টিপস পাবেন।
৭. আপনার ফোনে গ্রেস্কেল মোড চালু করুন
গ্রেস্কেল কার্যকর ভাবে ফোনের স্কিন থেকে সমস্ত রঙ মুছে দেয় এবং এবং ফোনটিকে নিষ্প্রাণ দেখাতে সাহায্য করে এতে করে আপনি বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে পারন। কারণ মানুষের মন স্বাভাবিকভাবে রঙের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আর ফোনে থাকা বিভিন্ন রঙের অ্যাপসগুলো ব্যবহার করতে থাকে। গ্রেস্কেল মোড চালু করলে আপনি এটা থেকে রেহাই পাবেন।
৮. সহকর্মীদের চাপ এড়িয়ে চলুন
বর্তমান সময়ে প্রায় সবাই স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে। আপনার সহকর্মীরাও ব্যবহার করে নিশ্চই। আপনার যেসকল সহকর্মী আপনার অফিস টাইম এক সাথে থাকার পরও অবসর সময়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নানা সমস্যার অজুহাতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাদের চাপকে সবসময় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনি স্মার্টফোন ব্যবহারের আসক্তি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে আনতে সক্ষম হবেন ইনশাল্লাহ।
৯. কাছে ফোন না রেখে ঘুমানোর অভ্যেস করুন
আপনি যখন সারাদিনের ক্লান্তিশেষে রাতে একটু শান্তিতে ঘুমাতে যাবেন কিন্তু তখন যদি আপনার পাশে আপার স্মার্টফোনটি থাকে তাহলে আপনি ঘুমানো ছেড়ে কিছুক্ষণ ফোন চাপা শুরু করবেন। এই কিছুক্ষণ আপনাকে কয়েক ঘন্টায় নিয়ে যেতে পারে। এজন্য আপনি যখন রাতে ঘুমাবেন তখন মোবাইল ফোনটি পাশে না রেখে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলেন।
১০. আপনার সমস্যার কথা শেয়ার করুন
যেধরনের আসক্তিই হোক না কেন তা চিকিৎসাযোগ্য। আপনি যদি মনে করেন আপনি একা এ আসক্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারছেন না তাহলে আপনি চাইলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। আপনার সমস্যার কথা আপনার আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব যাদের কাছে শেয়ার করুন। তাদের কাছে সাহায্য চান। আপনি খুক সহজে এ আসক্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।
পরিশেষেে
আশা করি আমি আপনাকে স্মার্টফোন আসক্ত থেকে আপনি কিভাবে নিজেকে সেভ করবেনতা বোঝাতে পেরেছি। আপনি যদি উপরোক্ত বিষয়গুলোকে অনুসরণ করেন তাহলে আপনি অতিমাত্রায় ফোন ব্যবহারের আসক্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন বলে আমি মনে করি। আমার এ পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকলে আপনি আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন। সুস্থ্য থাকুন। খোদা হাফেজ।