Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

অনুষঙ্গ নদীর পাড়ে একদিন

প্রকৃতির একটি প্রধান অনুষংগ নদী। ঢাকা মহানগরীতে যারা দিন গুজরান করেন, তাদের প্রায় সকলের জন্যই নদীর কাছে বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ খুব সীমিত। হাতে গোনা যায় এরকম গুটিকয়েক নদীর পাড়ের একটি হল কেরানীগঞ্জ আরশি নগরের উত্তর বালুচর সংলগ্ন গুদারা ঘাট। আজ শনিবার বিশেষ প্রয়োজনে অফিস খোলা ছিল। বিকাল সাড়ে তিনটায় অফিসেরর কাজ সেরে রাস্তা ফাঁকা থাকায় মাত্র ৪০ মিনিটে প্রাইভেট কারে চলে যাই আরশীনগর গুদারাঘাটে। বসিলা ব্রিজ পার হয়ে মিনিট দশেক সময় লাগে গাড়িতে। সব শ্রেনী, লিংগ ও পেশার মানুষ এসেছে নানান পোশাকে। মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজের ছাত্র, গৃহবধু, প্রেমিক যুগল, আশেপাশের মুরব্বী শ্রেনীর মানুষ, আড্ডাবাজ তরুন যুবারা, কেউ বাদ নেই। সেলফিবাজরা তো আছেই, এরা আলাদা এক শ্রেনীর মানুষ। একটু বাতাস, শান্তি আর স্ব্স্তি আর বৈচিত্র্যের খোঁজে।

ইঞ্জিন নৌকায় খেয়া পারাপার ৬ টাকা, সময় পাঁচ মিনিট। বড়সড় নৌকায় ২০/২৫ জন আরামসে বসতে পারে। ঘাটে ছোটখাট দোকানে চা রুটি, বিস্কুট বিক্রি হচ্ছে, এক বৃদ্ধ সিগারেট টানছে মনের সুখে। ওপারে ঝাউচর, গুদারাঘাট, হাজারীবাগে ট্রলার থামে।
নানা রকম পাখির ডাক, আর কাকের কা কা তো আছেই। নদীর মধ্য ছোট এক প্রকার পাখি উড়ছে, একেবারে পানির খুব কাছে নেমে আসছে ড্রাইভ দেয়ার ভংগীতে। ঘাটে অযান্ত্রিক নৌকা আছে কয়েকটি, একটি পাল তোলা নৌকাও দেখা গেল। রিজার্ভ করে এক ঘন্টার জন্য নদীর বুকে ঘুরতে চাইলে ৩০০ টাকা গুনতে হবে । দুরে নদীর ওপারে দেখা যায় অনেক বহুতল বিল্ডিং।নদীর তীরে কাশ গাছের ঝোপ দেখা যাচ্ছে, আর কিছুদিন পর ফুল ফুটবে। গৃহস্হের পোষা কবুতর উড়াউড়ি করছে নদীর কুলে, নদীর পাড়ে
বেওয়ারিশ কুকুর ও দেখা গেল দুই তিনটা। একজন বেশ বয়স্ক মানুষ একটি কুকুরকে তাড়িয়ে দিল ঢিল ছুঁড়ে। মটর সাইকেল আর ইন্জিন নৌকা স্টার্ট দেয়ার মিলিত শব্দে প্রকুতির নীরবতা ক্ষুন্ন হচ্ছে। মাদ্রাসারকয়েকজন ছাত্রও এসেছে নদীর পাড়ে বেড়াতে। ছইওয়লা ট্রলারের দেখাও মিলল। পানিতে কিছু গন্ধ আছে, অবশ্যই সহনীয় মাত্রার।

বিশ পঁচিশজন হলেই ট্রলার ছেড়ে দেয়। ওপারে মিলবে পুরান ঢাকার বিখ্যাত বাকরখানি।
দোকানের সামনে গোটা বিশেক কবুতরকে খাবার দেয়া হয়েছে, পরম আগ্রহে তারা তা খেয়ে নিচ্ছে।অনেকক্ষন পর নদীতে কয়েকটি পাতি হাঁসের দেখা মিলৈ।
এদেরকে হেলেদুলে এগিয়ে যেতে দেেখা গেল। গৃহস্হ বাড়ি থেকে থেমে থেমে চির আনন্দময়, চির নুতন মোরগের ডাক শুনা যাচ্ছে। এক ঠ্যাং উচিয়ে সেটিকে দিয়ে ঘাড় চুলকাতে দেখা গেল এক ছাগীকে । এমভি নুরে আলম নামে এক বড় জাহাজ ঢেউ তুলে সদরঘাট বা আর দূরের কোন গন্তব্যে এগিয়ে যাচ্ছে।
ঘাটে বাধানো বেঞ্চ আছে কয়েকটা, আর একটি ছোট বট গাছ যোগান দিচ্ছে নির্মল বাতাসের।
তরুন ও শিশুরা নৌকা থামার সাথে সাথে লাফ দিয়ে নেমে যাচ্ছে পাড়ে। ৃ
সামনে দুপা ছড়িয়ে এক কুকুর বসে আছে আরামে। এই ভ্যাপসা গরমের মধ্যে নদীর পাড়ে মৃদুমন্দ বাতাসে বিকালে দু এক ঘন্টা কাটিয়ে ক্লান্ত, একঘেয়ে নাগরিক জীবনকে আনন্দ আর এনার্জি দিয়ে রিফিল করে নিতে পারবেন এখানে সহজেই।
ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, কলাবাগান, মোহামম্দপুর, ঝিকাতলার ও আশেপাশের বাসিন্দারা বসিলা বাস/ ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে চলে যাবেন বাসে / টেম্পুতে করে। ১০/২০ টাকা খরচ হবে।জ্যাম না থাকলে সময় ৩০ মিনিটের মত লাগবে। তারপর শেয়ারের সিএনজিতে উঠে আরশী নগরের মোড়ে নামবেন। সেখান থেকে ১০ টাকার শেয়ারের সিএনজি বা ২০ টাকা রিকসা ভাড়ায় বালুরচর নদীর পাড়। বসিলা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট সময় লাগবে।
এমন আহামরি কোন জায়গা না, তবে মহানগরীর যান্ত্রিক, একঘেয়ে, নিরানন্দময় জীবনে প্রকৃতিপ্রেমি মানুষের জন্য এই জায়গাই হতে পারে নির্মল আনন্দ আর বিনোদনের এক চমৎকার উৎস।
বেড়াতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ থেকে সবারই বিরত থাকা উচিত। চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল যেখানে সেখানে না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলুন।

Related Posts

11 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No