বীণা গুপ্তা সব সময় নিয়তিতেই বিশ্বাস করতেন। আর বিশ্বাস করতেন সেই নিয়তি নিয়ন্ত্রণকারী ঈশ্বরকে। অমিত গুপ্ত, তার স্বামী। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে বীণার এমন স্বামী হবে যে কিনা বাউন্ডেলে আর একরোখা। নিষ্ঠুর প্রকৃতির এক মানুষ। একটি বিকল্প জীবন ধারাকে অনুসরণ করতে সমাজের প্রচলিত ব্যবস্থাকে অমিত প্রত্যাক্ষান করে কলেজের লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছিল।
কলেজ জীবনে বীণা দেখতে অপরুপ সুন্দরী ছিল। বীণার বাবা মা ভেবেছিল, অমিতই তার মেয়ের জন্য একমাত্র উপযুক্ত ছেলে। তাদের দেখা-শোনার জন্য যদিও বীণার পরে তাদের আরও চার কন্যা ছিল। বীণা আসলেই ভাগ্যবতী ছিল যে, তাকে কোন যৌতুক ছাড়াই বিয়ে করার জন্য একজন ব্যবসায়ী রাজি ছিল।
বীণা তার বাবা-মার শুধু বাধ্য মেয়েই ছিলনা, বরং ঐ অল্প বয়সেও নিজের স্বপ্ন গুলোকে বিসর্জন দিতে শিখেছিল। সে সব সময় তার নতুন জামা আর খেলনা গুলো তার ছোট বোনদের দিয়ে দিত। তার সবথেকে ছোট বোনটিকেও সে চকলেটসহ নানা রকম জিনিষ উপহার দিত। তার কোন চাহিদাই ছিল না। এমনকি তার জন্মদিনেও সে পুরোনো জামা কাপড় পরেই পালন করতো। পরিবারের কাছ থেকে যদিও সে তেমন স্নেহ আর ভালোবাসা পেত না তারপরেও সে সবাইকে খুব ভালোবাসতো।
তাই ছোট্ট নিঃসঙ্গ নিরিবিলি শহরের অমিত গুপ্ত কে বিয়ে করে সংসার করাকেই সে তার ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছিল।বীণা আরও পড়াশোনা করে আইনজীবী হতে চেয়েছিল। কিন্তু তার শশুড় বাড়ীর লোকজন, বিশেষ করে তার স্বামী অমিত চেয়েছিল সে যেন ঘরোয়া বধু হয়েই সংসার করে। স্বার্থত্যাগী বীণা তাই নির্দিধায় তার পড়াশোনা বন্ধ করে একজন ভালো স্ত্রী, একজন ভালো পুত্রবধু, সেজা কথায় সেবাদাসী হয়েছিল।
ত্রিশ বছর বয়সে বীণার যা যা করার কথা ছিল, বিশ বছর বয়সেই সে তার সবকিছু করার চেষ্টা করে। সে তার স্বামীকে ভালোবাসে, তার কথা মতো চলে, সামন্যতম বিরক্তির কারন যেন না হয় সে ব্যাপারে সাবধানও থাকে সব সময়।
কিন্তু সংসারের জন্য যতই করুক না কেন, তার শ্বশুড়বাড়ির লোকদের গালিগালাজ আর স্বামীর কাছ থেকে মারধরই পেয়ে এসেছে। চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি-লাথি, বেল্ট আর বেতের আঘাত, মানসিক নির্যাতন আর যৌন নিপীড়ন ছিল তার নিত্য পাওয়া। কিন্তু তার পরেও বীণা সব কিছুকে মেনে নিয়েছিল তার নিয়তি হিসাবে।
এমনি করে বছর পার হয়ে গেল। অমিত গুপ্ত তার ছোট্ট শহর ছেড়ে শহরে চলে আসেন। যদিও অমিতের বাবা-মা, আত্নীয়-স্বজন, বন্ধ-বান্ধব কেউই চায়নি ওরা তাদের ছেড়ে চলে যাক। তারপরেও তারা তাদের ছেড়ে শহরে চলে গেলো। ….(চলবে)