আচ্ছা, মনে করুন আপনি রাস্তায়,আপনার কিছু খেতে ইচ্ছা করলো;দোকান থেকে কিনলেন কিছু একটা -চিপস,বিস্কুট, আইসক্রিম…. বা এক ঠোঙা বাদাম কিংবা ঝালমুড়ি…. যেকোন কিছু।খাওয়ার পর সচরাচর আপনি কী করেন?মানে অপ্রয়োজনীয় সেই বিস্কুট বা আইসক্রিমের খালি প্যাকেটটা,ঝালমুড়ির ঠোঙাটা-সেটা কী করেন?ভাবছেন এটা আর জিজ্ঞেস করার কী আছে, যেটা কাজে লাগে না,আবর্জনা-ফেলে দেই!
এবার অন্য একটা কথা জিজ্ঞেস করি,আপনি ঢাকার বাসিন্দা, ধরুন সাধারণ মধ্যবিত্ত,মানে সবসময় প্রাইভেট কার আর কিছু ‘অভিজাত'(কথিত) এলাকার মাঝেই আপনার যাতায়াত নয়; রাস্তায় হাঁটছেন,এমন দুর্লভ অভিজ্ঞতা কি কারো আছে যে কখনোই রাস্তার পাশ থেকে ভেসে আসা দুর্গন্ধে নাক চাপা দিতে হয়নি? ফুটপাত ধরে হাঁটতে গিয়ে মাঝপথে নেমে পড়তে হয়নি উটকো ময়লা-আবর্জনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে? অথবা খুব কম মানুষই বোধহয় পাওয়া যাবে যারা নিজেদের জানা/শোনা/দেখা অন্যান্য বিভিন্ন উন্নত দেশ ও শহরের নানা বিষয়ের মধ্যে সেখানকার ঝা চকচকে সুন্দর রাস্তা ও পরিবেশের সাথে আমাদের ঢাকার দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার পার্থক্য খেয়াল করেননি।
‘সচেতন নাগরিক’ হিসেবে হয়তোবা কেউ কেউ আমাদের এই সমস্যাগুলো উপলব্ধি করেছেন, এর পিছনের কারণগুলো নিয়ে কখনোবা ক্ষোভও প্রকাশ করেন। কিন্তু কখনো কি চোখ মেলে একবার দেখেছেন? আমাদের চারপাশের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ভেসে আসা দুর্গন্ধ, চলাচলের অসুবিধা – এসবকিছুর উৎসের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে সামান্য আপনার ‘ফেলে দেওয়া’ সেই ঝালমুড়ি বা আইসক্রিমের প্যাকেটটাও কিন্তু রয়েছে! শুধু তাই নয়, প্লাস্টিক, পলিথিন বা বিভিন্ন পচনশীল, দুর্গন্ধযুক্ত ও আপনার দৈনন্দিন জীবনে ভোগান্তি সৃষ্টিকারী যেসব বর্জ্যপদার্থ; চোখ মেলে একবার খুঁজে দেখুন, দেখবেন এর মধ্যেই পেয়ে যাবেন আপনার বাসার অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিংবা কখনো বাসের জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলা আবর্জনাগুলো।
অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন এসব নিয়ে আর এত বলার কী মানে আছে; যে শহরে ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টবিন খুঁজে পাওয়াই দুস্কর, আবার ডাস্টবিন যদিবা বসানো হয়, ময়লা ফেলার আগেই সেটাও চুরি হয়ে যায়!
কিন্তু অনেকক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য হলেও ঢাকার সামগ্রিক চিত্র কিন্তু এমন নয়। এই একই ঢাকার কোনো জায়গা ঝকঝকে সুন্দর, আবার কোনো জায়গা হয়ে যায় ভাগাড়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে কেউ যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলতে পারে না, সেখানকার সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার কারণে? আবার গুলশান, বনানীর মতো কিছু জায়গার চিত্র তুলনামূলক আলাদা, উচ্চবিত্তদের/অভিজাত এলাকা বলে? তাহলে আমাদের পক্ষে কি সম্ভব নয় অভিজাত মানসিকার উদ্যোগে চারপাশের পরিবেশের সুশৃঙ্খলতার ব্যবস্থা করা? এলাকাভেদে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা করা; না হয় আর কিছু আপনি নাই পারুন, রাস্তায় কোনো ডাস্টবিন নাই থাকুক, বিস্কুট বা বাদামের প্যাকেটটা ব্যাগের এক কোণায় রেখে দিয়ে বাসায় এসে ডাস্টবিনে ফেলা – খুবই কি কঠিন? এটা ঠিক, একদিকে আমাদের সমস্যা একটা নয় বরং অনেক, অন্যদিকে রাতারাতি কোন অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয় যখন পাশাপাশি যথাযথ কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তবুও ব্যক্তিগতভাবে,প্রত্যেকের রোজকার কিছু সামান্য অভ্যাসের পরিবর্তন তো করাই যায়। হয়তো কারো কারো মনে হতে পারে -ধুর!সামান্য ময়লা ফেলা নিয়ে এত মাথাব্যথা? কিন্তু ব্যাক্তিগত এই ‘সামান্য ‘ অসচেতনতাগুলোই যখন দিনশেষে জন-ভোগান্তির বৃহৎ বোঝায় রুপান্তরিত হচ্ছে,তখন পারবেন কি এর মূলে মিশে থাকা নিজের দায়ভারটি অস্বীকার করতে? নাকি নিজের মাঝে একটু পরিবর্তনের মাধ্যমে সামগ্রিক যে প্রাপ্তি- কোনটি আপনার জন্য সহজ,একবার তুলনা করে দেখবেন কি?