সুপ্রিয় পাঠকগণ, আসসালামু ওয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আশা করি ভাল আছেন। করোনা মহামারির এই সময়ে আসুন আমরা সবাই মাস্ক পরিধান করি ও অন্যকেও করায় এবং বিনা প্রয়োজনে বাইরে না যায়। দেশকে ভালবাসি।
আমি আপনাদের সামনে আজকে এমন একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই যেটা গোপনে আপনার আমার অনেক ক্ষতি করে কিন্তু আমরা খেয়াল করি না। অকারণে অযৌক্তিকভাবে আমাদের সুসম্পর্কগুলোকে নষ্ট করে দেয় এবং মন খারাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিষয়টা হলো রাগ । কতটা অযৌক্তিকভাবে আমরা রাগ করি সেটা আমি আপনাদের সামনে একটা বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই।
কোন একজন শিক্ষক পরিস্থিতির শিকার হয়ে খুব জরুরী প্রয়োজনে এক ছাত্রের কাছে পেনড্রাইপে করে একটা সফটওয়্যার আনতে যান। সময়টা সকাল ১০টা তারিখটা মনে নেই তবে জুন মাসের ২০ তারিখ হতে পারে। ছা্ত্রকে ফোন দিয়ে শিক্ষক রওনা দেন। ভাঙ্গা ও কর্দমাক্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে শিক্ষক ১০টা ২০ মিনিটে সেই ছাত্রের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দুরুত্বের এক রাস্তার মাথায় গিয়ে দাঁড়ায়। কারণ শিক্ষকটি সেই ছাত্রের বাড়িটি চেনেন না। সেখানে পৌছে শিক্ষক ছাত্রটিকে ফোন দিয়ে বলেন যে তিনি পৌছে গেছেন। ছাত্রটি স্যারকে অনুগ্রহ করে একটু অপেক্ষা করতে বলেন আর বলেন,“ স্যার আমি ১০ মিনিটের মধ্যে চইলা আসমু”।
শিক্ষক ঠিক ১৫ মিনিট পর আবার ছাত্রটিকে ফোন দিলেন কিন্তু ছাত্রটি ফোন রিসিভ করল না। শিক্ষক ভাবলেন হয়তো কাছাকাছি চলে আসছে এজন্য রিসিভ করল না। আরো ১০ মিনিট পার হয়ে গেলেও সে না আসায় শিক্ষক আবারো ফোন দেন কিন্তু তখনো ছাত্রটি ফোন রিসিভ করল না কেটেও দিল না আরো ১০ মিনিট পর শিক্ষক বিরতিহীনভাবে ফোন দিলেন বেশ কয়েকবার কিন্তু কেউ ফোন রিসভ ও করল না কেটেও দিল না। এদিকে সকাল ১১ টায় স্যার এর একটা জরুরী মিটিং আছে । স্যার ভাবতে লাগলেন কেন এমন হচ্ছে। তিনি ভাবলেন কিছুদিন আগে ছাত্রটিকে ক্লাসে বকা দিয়েছেন এজন্যই হয়তো এরকমটা করছে। আবার ভাবলেন বিপদ ও তো হতে পারে কিন্তু বিপদ হলেও তো কেউ না কেউ ফোন রিসিভ করবে অথবা ফোন বন্ধ থাকবে।
অবশেষে স্যার বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে আসলেন। মিটিং শুরুর পর ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে সেই ছাত্র স্যারকে ফোন করে খুব বিনয়ের সাথে বললেন “স্যার প্লিজ রাগ করবেন না ঠিক যখন আমি আপনার কাছে আসার জন্য বের হবো ঠিক তখনই আমার মা পা পিছলিয়ে বারান্দা থেকে পড়ে যান। আমি তাড়াতাড়ি করে মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য মোবাইলটা সাথে নিতে পারিনি আর আপনার কাছে পৌছাতেও পারিনি। আমি আজ বিকেলে আপনার কাছে সফটওয়্যারটা পৌছে দিব।”
স্যার একটু হেসে বললেন,“কোন কারণ না জেনেই শুধু শুধু তোমার উপর কেন রাগ করবো? আমি বরং কারণ জানার অপেক্ষায় ছিলাম। যাই হোক তোমার মা কেমন আছেন এখন।”
আচ্ছা পাঠকগণ আপনারাই বলেন আপনার আমার মতো সাধারণ মানুষ সেই অপেক্ষা আর মোবাইল রিসিভ না করা, কেটে না দেয়া এগুলোর কারনে কি আমরা রেগে যেতাম না? আমার মনে হয় আমরা অধিকাংশই রেগে যেতাম । শুধু রেগেই যেতাম না মনে মনে অনেক গালিও দিতাম। কিন্তু আসলেই তো সেই ছাত্রের কোন দোষ নেই।
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ । আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে অনুপ্রেরণা যোগানোর জন্য অনুরোধ রইল।