অর্কিড ফুল সম্পর্কে গুরুত্বপূণ তথ্য
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারকাতুহু
স্বাগতম আপনাদের কে জানাই অর্কিড ফুলের শুভেচ্ছা। আশা করি আপনারা সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন ও সুস্থ আছেন। ফুলকে কেই না ভালবাসে চলুন আজকে একটি বিশেষ ফুল সম্পর্কে জেনে নেই। তবে লেখার শুরুতেই বলছি এটা আমার প্রথম লেখা তাই ভুল-ত্রুটি অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ফুলটির নাম হল অর্কিড।
আমরা অনেকে অর্কিড ফুল কে দামী ফুল হিসেবে জানি। অর্কিড ফুল আসলেই একটা অসাধারণ ফুল। এটি অন্যান্য ফুল এর চেয়ে একটু ভিন্ন ধরনের একটা ফুল এবং এই ফুলের স্তায়িতকাল অনেক বেশি হয়। অর্কিড ফুলের সুবাস যেন মন কে ভুলি দায়,মনকে করে সজিব,শিহরিত। অনেক বড় বড় দেশে এই ফুল অনেক পছন্দ করে তেমনি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ ও এর ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এর চাষ হয়। আপনাদের কেও আমি বিভিন্ন অর্কিড ফুল সম্পকে জানাবো।
পরিচিতিঃ
বিজ্ঞানী রব্রাট ব্রাউন ১৮৩১ সালে প্রথম অর্কিড পাতার কোষে নিউক্লিয়াস আবিস্কার করেন। ১৯৬৪ সালে বিজ্ঞানী জিঅরগে মরেল প্রমাণ করে দেখান যে সিম্বিডিয়াম নামক অর্কিড প্রজাতির থেকে বছরে প্রায় ৪০ হাজার চারা দেয়া সম্ভব। বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলে এর চাষ হয় তাই এর বাসস্থানও এক জায়গায় সীমাবদ্ধ নয়। চীন,মালয়েশিয়া,শ্রীলংকা,সিঙ্গাপুর,তাইওয়ান,দক্ষিণ আমেরিকা,শ্রীলংকা,বার্মা,ফিলিপিনস,মেস্কিকো,ইন্ডিয়ায় এমনকি হিমালয়ে ও একে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে রাজশাহী,গাজীপুর,ময়মনসিংহ,যশোর,চট্টগ্রাম,পার্বত্য চট্টগ্রাম,বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়। বিশ্বের অনেক দেশে একে সেরা ফুল হিসেবে বিবেচনা করা হয় যেমন-চিন,কাতার। বাংলাদেশে ২০০৮ সালে রাজশাহী অঞ্চলের ঘাসবনে অর্কিড ফুলকে দেখা যায়। এই ফুল দীর্ঘদিন সজীব থাকে বলে এটি কাটফ্লাওয়ার হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। অর্কিড ফুলের প্রায় ৮৮০ টি গণে ২১,৯৫০ থেকে ২৬,০৪৯ টি প্রজাতি রয়েছে।
এর বৈজ্ঞানিক নাম: অর্কিডেসি
উচ্চ শ্রেণীবিন্যাস: অ্যাস্পারাগলস
বংশবিস্তারঃ
অর্কিডের বংশবিস্তার দুই উপায়ে সম্ভব। যৌন ও অযৌন উভয় পদ্ধতিতেই অর্কিডের বংশবিস্তার করা যেতে পারে। তবে বেশী ভাগ সময় অযৌন উপায়ে এর বংশবিস্তার করা হয়ে থাকে। সাধারণত এর অঙগজ বংশবিস্তার কেইকিস,ডিভিশন,অফসেট,এবং কাটিং সহ আরও বিভিন্ন ভাবে করা হয়ে থাকে এবং এটি ফেব্রুয়ারি মাসে করা হয়। এছাড়াও প্রতি বছর টিস্যু কালচারের মাধ্যমে সিমবিডিয়াম,ফেলেনপসিস,ডেনড্রোবিয়ামের অসংখ্য চারা উৎপাদন করা হয়। সাধারণত টিস্যুকালচার পদ্ধতির মাধ্যমে চারার বর্ধনশীল অঙ্গ থেকে চারা উৎপাদন হয়। এই চারাগুলো মূল গজানোর পর ল্যাবরেটরি থেকে বের করে চারাগুলোকে প্রায় ২ সপ্তাহ বাইরের পরিবেশের সাথে খাপ খাই এ নিতে হয়। পরবর্তীতে একে পরিবেশে স্থানান্তর করতে হয়।
প্রকারভেদঃ
অর্কিড বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে ভিন্ন ভিন্ন রকমের অর্কিড দেখা যায়। যেমন-ডেনড্রোবিয়াম,ভ্যান্ডা,এরিডিস,ফেলেনপসিস,ক্যাটেলিয়া,ডেনড্রোবিয়াম,অনসিডিয়াম, সিমপোডিয়াম, রিনকোস্টাইলিস ফায়াস, সিমবিডিয়াম, লেডি স্লিপার,সিলোজিনি টমেনটোসা, অনসিডিয়াম সহ আরও অনেক প্রজাতির অর্কিড দেখা যায়।
চাষ পদ্ধতিঃ
সাধারণত অর্কিড ফুলকে উষ্ণ এবং আদ্র দুই আবহাওয়াতে চাষ করা যায়। অর্কিড ফুলকে চাষ করার জন্য দো-আঁশ মাটি ব্যবহার করতে হবে এবং বায়ু চলাচল এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। বাঁশের ঝুড়িতে,ঝুলন্ত বাস্কেটে,টবে,গামলাতে একে চাষ করা যেতে পারে প্রয়োজনমতো পানি দিতে হবে। সাধারণত ২০-৩০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় অর্কিড ভালো জন্মে। অর্কিড গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য টিএসপি,ইউরিয়া,ও এমওপি সার এক চা চামচ ব্যবহার করতে হবে। তবে এর দৈহিক বৃদ্ধির নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। ছোট ছোট চারা গাছে প্রচুর পানি দিতে হয়।
রোগবালাইঃ
অর্কিড ফুল রোপণের পর পিঁপড়া,পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রায় ১০-১৫ দিন পর পর গাছে-সেভিন পাউডার ছড়িয়ে দিতে হবে। অর্কিড ফুল রোগাক্রান্ত হলে প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ০.৫ মিলি.টিল্ট অথবা এক চা চামচের আধা চামচ ডাইথেন এম-৪৫ ভালোভাবে পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৭-১০ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে পারেন।
ডেনড্রোবিয়াম অর্কিডঃ
অর্কিড প্রজাতির মধ্যে সব চেয়ে বড় প্রজাতি হল ডেনড্রোবিয়াম অর্কিড এর প্রায় ১২০০ প্রজাতি আছে এটি সব হাওয়ার জন্য উপযোগী। ডেনড্রোবিয়াম অর্কিড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে বেশি পাওয়া যায়। ডেনড্রোবিয়াম অর্কিডকে কেইকিসের মাধ্যমে আলাদা করে ছোট পটে লাগিয়ে চারা তৈরি করে রপন করা হয়। এটি বছরে ২-৩ বার ফোটে।ডেনড্রোবিয়াম অর্কিডকে পানিতে রাখা হলে অনেক দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। ডেনড্রোবিয়াম অর্কিড কে আলোতে রাখতে হয় কিন্তু কম আলোতে এর ফুল দেরিতে হয়।
বিভিন্ন অর্কিড ফুলের দামঃ
ক্যাটলিয়া গ্রোত্রের অর্কিডের দাম ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার।
ফিলোনপসিস অর্কিডের দাম ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা।
সিলোজিনি টমেনটোসা অর্কিড ফুলের দাম ৩৫০ টাকা।
কলি সহ অর্কিড ফুলের দাম ৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।
বাণিজ্যিক দিক দিয়ে অর্কিড ফুলঃ
ফুল সুন্দর যের প্রতীক তাই তো সবাই অর্কিড ফুলকে এত পছন্দ করে অর্কিড একটি অভিজাত শ্রেণির ফুল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দিক দিয়ে এই ফুল অনেক এগিয়ে প্রতি বছর বিশ্বের ৫০টি দেশে কমপক্ষে চার কোটি ডলার মূল্যের অর্কিড রপ্তানি করছে বাংলাদেশের উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু নানা রকম অর্কিড ফুল উৎপাদনের উপযোগী তাই এর চাষ করে বাংলাদেশ ও অর্কিড ফুল বিদেশে রপ্তানী করছে বিশ্বের প্রধান তিনটি অর্কিড শোর মধ্যে তাইওয়ানে তাইওয়ানিজে ইন্টারন্যাশনাল অর্কিড শো অনুষ্ঠিত হয় এবং এটি মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার বিভিন্ন নার্সারিতে এই অর্কিড ফুল পাওয়া যায়।