– হৃদয়, আজ না আমাদের এখানে মেলা বসেছে..
– সিরিয়াসলি! তো, তুই যাচ্ছিস না?
– আরে কেমনে যাই বল? বন্ধুরা সবাই পিকনিকে গিয়েছে।
– ও! তাহলে তো খুব খারাপ হলো। যাসনি কেন তাদের সাথে বেড়াতে?
– মন চায়নি তাই।
– ও আচ্ছা.. তুই খেয়েছিস দুপুরে?
– না, খাবো। আচ্ছা একটা কথা বলি?
– হ্যাঁ বল।
– তুই আসবি?
– আরে আমি কেমনে! আসি আমার প্রাইভেট আছে তো সাড়ে ৩টায়।
– আরে রাখ তোর প্রাইভেট। তুই শুধু আয়। তোকে আমি গাড়ি ভাড়াটা সহ দিয়ে দেব।
– হাহা! প্রেমিকা যখন বড়লোক!
– হ্যাঁ হ্যাঁ জানি জানি। তোর এরকম প্রেম ভালবাসাগুলা দেখলে মানুষ তোকে আমাকে জুতা দিয়ে মারবে..
নতুন কেনা Nokia 6.1 Plus মোবাইলটায় সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাপস গুলো ইন্সটল করছিলাম। কিন্তু হোয়াটস্যাপ ইন্সটল করার সাথে সাথেই পুরনো মেসেজগুলো পেয়ে যাই। এক প্রকার হতভম্ব হয়ে যাই আমি। কিছুক্ষণ সেন্স কাজ করছিলনা আমার। বুঝলাম না, কখন যে নতুন কেনা হ্যান্ডসেট টা হাত থেকে পড়ে গিয়েছে। ভাগ্যিস ল! সেটে গরিলা গ্লাস প্রটেকশন ছিল। না হয় গুড়ো গুড়ো হয়ে যেত সব।
আমাদের সম্পর্কটা ভেঙেছে বেশিদিন হয় না। বাস্তবতা আমাদেরকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে। । আসলে যে রাজ্যে রাণি নেই, সে রাজ্যের রাজাকে বধ করতে বেশি সময় লাগে না। একাকীত্ব, বিষণ্নতা, আর হতাশা নামের দেশদ্রোহীরা অনায়াসেই মনের রাজ্যের রাজা কে বধ করে মনভূবনটা দখলে নিয়ে ফেলে।
সমবয়সি সম্পর্ক গুলো যেন ধর্ষণের চেয়েও মারাত্মক অপরাধ। এ সমাজ তাদেরকে বাঁচতে দেয় না। আমাদের পরিবার, আমাদের সমাজ, আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ যেন সত্যিই আমাদের না। বাস্তবতার এই লম্বা বেড়াজালের কোথাও যেন আটকা পড়ে আছে শত শত অভাগা আর অভাগীদের হাহাকার; যারা কোন এক সময় সমবয়সী সম্পর্কে জড়িত ছিলো। মুরুব্বি গোত্রের কিছু সামাজিক প্রাণীদের কান নিয়েছে চিলে, তাই সেসব হাহাকারও আর কারো শোনা হয়না। সময়ের ধামাচাপায় আমরাও ভুলতে বসি আমাদের সেই পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো।
কোন কারণে একদিন যোগাযোগ করা না হলে আমাকে হরেক রকমের শাস্তি পোহাতে হতো। আর আজ ২ টা বছর কেটে যায়, তার আদালত বন্ধ! আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এমন অনেক মানুষ থাকে, যারা সময়ের স্রোতে ভেসে আসে, আবার সময়ের স্রোতেই ভেসে যায়। কারো মন ভুবনে সূচিত হয় তাজমহল, আবার কারো ক্ষেত্রে রচিত হয় কারবালা…
তবে আমার বেলায় হয়েছে একটু ভিন্ন রকম কান্ড। সে একদিকে তাজমহল বানিয়ে অন্যদিকে কারবালা কাহিনী রচনা করেছ। এহেন রচয়িতার নাম জানতে চান?
থাক আজ নয়, অন্য কোন একদিন বলব.. অপেক্ষায় থাকুন..
– হৃদয়.. কি হয়েছে বাবা?
– না মা, কিছু না তো..
– বড় করে আওয়াজ হলো যে বরং?
– না মা, ওটা কিছু না। তোমার কিছু লাগলে বল..
– না, কিছু একটা পড়ার আওয়াজ শুনতে পেলাম; তাই দেখতে এলাম কি হলো না হলো..
– হা হা! কিছু হয়নি মা। তুমি তোমার কাজে যেতে পারো..
রান্নাঘর থেকে আমার মা এসেছিলেন। সত্যি বলতে নিজের চাইতেও তিনি আমাকে বেশি ভালোবাসেন। আমার সামান্য খুশিতে তার স্বর্গ লাভ হয়, আবার কখনো মৌন হয়ে বসে থাকলে কেমনে জন্য তিনি সেটা বুঝে যেতেন! আসলে মা তো, মায়েদের নাকি ঈশ্বরপ্রদত্ত আলাদা একটা শক্তি থাকে। তাঁরা হয়তো প্রকাশ করেননা সহজে, কিন্তু সব বুঝে যান..
প্রাক্তন এর কথা শোনালে হয়তো তাঁর হৃদয়ে বড়সড় একটা স্ট্রোক হয়ে যেত। তাই কখনো বলিনি যে আমার কেউ ছিলো, আবার আমার সে নেই..
বিশ্বাস করুন, প্রাক্তনকে কখনো আমি দুঃখ পেতে দিতাম না। অন্য কোথাও হতে দুঃখ পেলে বরং তার কষ্টের ভাগীদার হতাম। সমবয়সী হলেও সে আমার চেয়ে একবছরের ছোট ছিল। লোকালয়ে আমরা বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতাম। অথচ বাস্তবে যেকোন ক্ষেত্রে আমরা একে অপরের জন্য অপরিহার্য ছিলাম। অশ্লীলতা তো দূরের কথা, ভালোবাসি শব্দটাও কেউ কাউকে বলতাম না সহজে। এতটাই পুতপবিত্র ছিলাম আমরা।
তবু কেন আমাদেরকে আলাদা হতে হলো? বাস্তবতা কেন আমাদের সাথে এমন আচরণ করলো? কেন সে আজ আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনা? কেনইবা আজ আমি সাহস পাই না তার খোঁজ নেওয়ার?
উত্তরগুলো দিতে পারবেন কেউ?
ইমো অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের কথা বলা শুরু হয়। আর তার শেষ হয় হোয়াটসঅ্যাপে করা কিছু এসএমএস এর মাধ্যমে। আসলে সামনাসামনি কথা বলার সাহস তার হয়নি। বিদায় কালেও সে এটা বলেছে, “ভালো থেকো…”
ভালো থাকাটা যদিও আর হয়ে উঠেনি কিন্তু আজও ভালবাসি তাকে। পাঠক শুনতে চান এই নির্মম নিস্তব্ধ ভালোবাসার শুরুটা কিভাবে হয়েছে?
আচ্ছা একটু জিরোতে দিন আমাকে.. আমি হাঁপিয়ে গেছি। পুরনো কথা যতবার ভাবি, আমি হাঁপিয়ে যাই। দয়াকরে পরবর্তী পর্বের জন্য একটু অপেক্ষা করুন…
দেরী হবেনা.. শীঘ্রই আসছে…