সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন। আজকে কথা বলবো অহংকার নিয়ে – অহংকার নিয়ে ৫টি ইসলামিক উক্তি। সেইসাথে অহংকার নিয়ে একটি বাস্তব ছোট গল্প তুলে ধরবো। আগেই বলেছি, অজকের এই আর্টিকেলটা লিখবো অহংকার নিয়ে। মনে রাখবেন, অহংকার কখনো ভালো সুফল বয়ে আনে না। বরং বিনাশ ডেকে আনে। তাই অহংকার থেকে বাঁচুন।
অহংকার কি?
অহংকার হলো আরবি ‘কিবরু’র প্রতিশব্দ। হাদিসের পরিভাষায় অহংকার হলো- সত্যকে অস্বীকার করা, মানুষকে হেয় করা। অতিরিক্ত গর্ববোধ করা। নিজেকে অন্যের তুলনায় বড় জানা এবং অন্যকে তুচ্ছ-নিকৃষ্ট মনে করাই অহংকার। অহংকার করা পাপ। বলা হয়েছে- আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না।
অহংকার নিয়ে একটি বাস্তব ছোট গল্প
কথায় আছে, অহংকার পতনের মূল। একটি বাস্তব ঘটনা বলি। নামটি কাল্পনিক ব্যবহার করছি।
এক সময় আফজাল সাহেব সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। সেখান থেকে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। ছাত্রজীবনেও একসময় রাজনীতি করেছেন। সেই সুবাদে খুব তাড়াতাড়ি দলে নাম লেখান। উচ্চপদে যান বছর দুয়েকের মধ্যেই। বাড়ি, গাড়ি, সম্পত্তি কোনো কিছুর অভাব নেই। সারাজীবনই ব্যক্তিগত জীবনে বেপরোয়া ছিলেন তিনি। উনার অধীনস্থ কর্মচারীর সাথে কখনোই ভালো ব্যবহার করতেন না।
এমন হয়েছে, আত্ম অহংকার আর দম্ভ এতটাই বেশি ছিলো যে, মাটিতে পা পড়তো না তার। ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে শুরু করে একাধিক মামলা আছে তার নামে। যখন- তখন অহংকার আর জেদের বশে মারামারি আর হাতাহাতিতেও জড়াতেন।
এত অভিযোগের কারণে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এখন ছেলেমেয়েরা বিদেশে থাকে। খোঁজ নেয় না।স্ত্রী গত হয়েছেন। উনি একলাই গ্রামের বাড়িতে থাকেন আর নিজের অহংকার আর স্বভাবের কারণে আফসোস করেন। চোখের পানি ফেলেন।
শেষ পর্যন্ত তার অহংকারই তাকে নিঃস্ব করেছে। বলাই বাহুল্য, ছেলে বা মেয়ে সবার জন্যই অহংকার করা গুনাহ। আল্লাহ বারবার এই বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
আমাদের চারপাশে খুঁজলে এরকম আরও অনেক ঘটনা পাওয়া যাবে। ইতিহাস সাক্ষী আছে। অহংকার আর জেদের বশে প্রচুর সাম্রাজ্য আর ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ধ্বংস ডেকে এনেছে। তাই নিজের চিত্তকে সংযত করুন। অহংকার থেকে বাঁচুন।
অহংকার নিয়ে ৫টি ইসলামিক উক্তি:
- তিনটি সত্তা মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। লোভ, হিংসা ও অহংকার। — ইমাম গাজ্জালি (রঃ)
- নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না।- আল কোরআন
- অহংকার পতনের মূল।— আল হাদীস
- অহংকার হচ্ছে, সত্যকে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা। — সহিহ মুসলিম
- অহংকার যদি হয় পতনের মূল! তদ্রুপ – সৎ নম্রতা আল্লাহর ভয় সুখের মূলধন। – আল হাদিস
অহংকারের কুফল:
- অহংকার করলে পরকালে শাস্তি পেতে হবে।
- অহমিকার জোরে মানুষ অনেক সময় আসল আর ঠুনকো জিনিসের পার্থক্য ধরতে পারে না।
- অহংকার আর অহংকারী ব্যক্তি নিজের, পরিবারের আর সমাজের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে।
- অহংকার মানুষের চরিত্রে কালিমা ফেলে দেয়।
- অহংকারের বশে মানুষ অনেক সময় খেই হারিয়ে ফেলে। কি করবে বা বলবে দিশা খুঁজে পায় না।
- অহংকারীদের মুখে সাধারণত লাগাম থাকে না।
অহংকার নিয়ে নিজের কিছু মতামত:
অহংকার করা পাপ। ছেলে অথবা মেয়ে উভয়ের জন্যই অহংকার ধ্বংস ডেকে এনে। সম্পদ, টাকা- পয়সা কখনো সুখ ডেকে আনতে পারে না। সুখ থাকে মানুষের মনে। এই দুনিয়ায় কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। অহংকার করলে তার ফল ভোগ করতেই হবে।
কাউকে অহংকার করতে দেখলে কি করবেন?
কাউকে অহংকার করতে দেখলে তাকে বোঝাবেন। সংযত হবার জন্য অনুরোধ করবেন। ছেলেদের জন্য সম্পদ, আয়- রোজগার আর বাহ্যিক সৌন্দর্য্য নিয়ে অহংকার করতে বারণ করা হয়েছে। একইভাবে মেয়েদের রুপ, যৌবন আর সৌন্দর্য্য নিয়ে অহংকার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
অহংকার পতনের মূল। সেইসাথে নীতিবাক্য আর বাস্তব ঘটনার উদাহরণ টেনে এনে অপরকে বোঝান। এই জগতে কোনো কিছুই চিরকাল টিকবে না। দেহে এই প্রাণখানিও চিরকাল থাকবে না। তাহলে এত অহংকার কিসের?
অহমিকা বা অহংকার পতনের অন্যতম কারণ। তা কেবল বিনাশ ডেকে আনে। তাই অহংকার না করে বরং শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
উপরে উঠতে চাইলে অহংকারী নয় বরং বিনয়ী হতে হবে। সুন্দরভাবে কথা বলতে পারতে হবে। অনেক সামর্থ্য থাকা সত্বেও অহংকার করা যাবে না। আত্ম সংশোধনের মাধ্যমে অহংকারী স্বভাব ত্যাগ করতে হবে।
উপসংহার:
অহংকার করা ভালো নয়। অহমিকা থেকে বাঁচুন। আল্লাহর রহমতের জন্য দোয়া করুন। আর বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করুন।
এই ছিলো আজকের মতো। সবাই ভালো থাকুন আর অহংকার করা থেকে বিরত থাকুন।