আউটসোর্সিংয়ের নামে পাতা ফাঁদ থেকে বাঁচুন:
কেমন আছেন সবাই আশা করছি সবাই ভালো আছেন
সম্প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্ব করোনা ভাইরাসের সংক্রমণেৱ কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে অর্থনীতিৱ চাকা। আর এই সময়ে কিছু কুচক্রী মহল মেতেছে মানুষের কে ঠকানোৱ ব্যবসায়। তারা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে অনেক মানুষের কষ্টের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর তাদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে দেশের অনেক সহজ-সরল যুবক ও যুবতী। আর এই সব কুচক্রী মানুষ গুলো মানুষ ঠকানোর জন্য বেছে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোকে।
তারা সহজে ইনকাম করার প্রলোভন দেখিয়ে হ্যাক করে নিচ্ছে সহজ-সরল মানুষদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর আইডি গুলো। আর এই আইডি গুলো ফেরত দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
আপনারা হয়তো দেখে থাকবেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে সম্প্রতি বিভিন্ন পোস্টে ছড়া ছড়ি হয়ে পড়ছে যে, ” ফ্রি করোনা বট, ফ্রী করোনা টাকা , আয় করুন 500 টাকা কিছু সহজ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, ফ্রিতে নিয়ে নিন 500 টাকা বিকাশে ” এই ধরনের পোস্ট গুলো। আর অনেকে সহজ সরল ছেলে ও মেয়ে এই ধরনের লোভনীয় পোস্ট দেখে নিজের অজান্তেই কুচক্রী মহলের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছে।
আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলছি আমি নিজেও দেখেছি এই সকল পোষ্ট আর তাদের দেওয়া লিংকে প্রবেশ করেছিলাম ।আমিও ভেবেছিলাম হয়তো এগুলো সত্য হয়তো কিছুটা পূরণ করে লটারির মাধ্যমে টাকা দিতে পারে কারণ দীর্ঘ দুই মাস ধরে ঘরে বসে আছি টিউশনি গুলো নেই বললেই চলে তাই ভেবেছিলাম হয়তো ফ্রিতে 500 টাকা পেলে ক্ষতি কি। লিংকটি ছিল কিছু সহজ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আয় করুন 500 টাকা নিয়ে নিন বিকাশে এই ধরনের। লিংকটিতে প্রবেশ করার পর দেখি সত্যিই কিছু প্রশ্ন সম্বলিত একটি পেজ প্রদর্শিত হয়। সেই পেজে ছয়টির মত প্রশ্ন ছিল আর প্রশ্ন গুলো খুবই সহজ ছিল যেমন ফেসবুকের নির্মাতা কে ,আর কয়েকটি প্রশ্ন নিজের মতামত জানতে চেয়েছিল অনেকটা সার্ভের মত। সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যখন পরবর্তী পেয়ে গেলাম তখন দেখি তিনটা বক্স দেখাচ্ছে যেখানে বলা আছে যথাক্রমে, আপনার বিকাশ নাম্বার দিন, ফেসবুক আইডি টা দিন। এই দুইটা অপশন যখন পূরণ করে তৃতীয় অপশনে যায় আমি দেখি যে ওখানে লেখা আছে যে আপনার ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিন। আর এটা দেখার সাথে সাথে সেই পেজটি আমি ক্লোজড করে দিই আর সেই পোস্ট দেওয়া ব্যক্তির আইডিটি ফেসবুকে রিপোর্ট করে দিই।
যদি আমি ওই পেজে আমার ফেসবুক আইডিটি এবং পাসওয়ার্ডটি দিতাম তাহলে হয়তো তারা আমার ফেসবুক হ্যাক করে সেখান থেকে ওলট-পালট পোস্ট করতো বাহ বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিয়ে আমাকে হেনস্থার শিকার করে আমার থেকে টাকা আদায় করত।
অনেকেই হয়তো বলবেন যে এইসব পেইজ থেকে তারা টাকা পেয়েছেন। আমি তাদেরকে বলবো এখান থেকে টাকা পাওয়া যেতে পারে তার প্রথম প্রথম অনেক জন ব্যক্তিকে টাকা দিবে কিন্তু এটা কাটতে দিবে তাদের এ সাইটটি প্রমোশনের জন্য। আর পরবর্তীতে তারা আপনার আইডিটি হ্যাক করে তার দ্বিগুণ টাকা উসুল করে নিতে পারে। ধরুন ওরা 5000 টাকা ইনভেস্ট করল 500 টাকা করে দিয়ে দিয়ে, কিন্তু পরবর্তীতে ওরা 5000 টাকার বিনিময়ে 20 হাজার টাকা বা এর বেশি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতে পারে। আর এও হতে পারে ওরা আপনার আইডিটি হ্যাক করে অনেক দিন পর্যন্ত চুপ করে আপনার আইডিটি অবজারভেশনে রাখতে পারে, কারণ ওদের কাছে আপনার আইডির পাসওয়ার্ড তো আছেই তাই ওরা সহজে আপনার আইডিতে অ্যাক্সেস করতে পারবে। আপনার আইডিটি অবজারভেশনে থাকা অবস্থায় যদি আপনার আইডিতে কোন গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ ওরা পায় সেই মেসেজটি দিয়ে ওরা হয়তো আপনাকে ব্ল্যাকমেল করতে পারে। ফেসবুক হ্যাক করে ব্ল্যাকমেল করার ঘটনাও কিন্তু কম নয়।
তাই উল্টা পাল্টা লিংকে গিয়ে নিজের কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিবেন না। যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চাই তাহলে বুঝে নিতে হবে যে সেটি হয়তো আপনাকে ক্ষতি করতে পারে। আপনি নিজেই চিন্তা করুন আপনাকে ফ্রিতে কেমনে ওরা 500 টাকা দিতে পারে? পাঁচ শত টাকা কি এতই সহজ লভ্য যে সবাইকে দেওয়া সম্ভব?
বাংলাদেশে দিন দিন তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উন্নতি করছে আর সেই সাথে এই তথ্য প্রযুক্তির খারাপ ব্যবহার করে কিছু ব্যক্তি নিজের লাভের জন্য অন্যের ক্ষতি করে চলছে। এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যে ফেসবুক হ্যাক করে ব্ল্যাকমেইল করার কারণে অনেক ছেলে মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
আর হ্যাঁ আপনি অবশ্যই সপ্তাহে একদিন করে হলেও নিজের ফেসবুক আইডির নাম টা দিয়ে নিজের আইডি থেকে বা অন্য কারো আইডি থেকে সার্চ দিবেন আর দেখবেন আপনার আইডির কোন ডুপ্লিকেট আইডি আছে কিনা। অনেক ব্যক্তি ডুপ্লিকেট আইডি করে হয়রানি করার জন্য কিন্তু কিছু ব্যক্তি আছে ডুপ্লিকেট আইডি করে আপনার অরজিনাল আইডি ক্লোন করে হ্যাক করার জন্য। তাই সতর্ক হোন।
আউটসোর্সিং করা খারাপ কোনো কাজ নয় কিন্তু এমন জায়গায় আউটসোর্সিং করুন যে সাইট গুলো অবশ্যই টাকা পেইড করে এবং বেআইনি কোন কাজ করে না। আপনি হয়তো ভাবছেন যে আপনি কিভাবে বুঝবেন সেই সাইটটি রিয়েল সাইট নাকি ফেইক সাইট । আমার তবে আমার পক্ষ থেকে শুধু এটাই বলব যে রিয়েল নাকি ফেক সেটা জানার জন্য আপনি সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ইউ টিউব-এ সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন। আপনি সেখানে আপনার কাঙ্ক্ষিত ফল বা রিভিউটি পেতে পারেন।
নতুন কোথাও আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং করার আগে রেজিস্ট্রেশন করার সময় ভালভাবে দেখে নিন তারা কি চাচ্ছে তারা কোনো গুরুত্বপূর্ণ পাসওয়ার্ড চাচ্ছে না তো এগুলো লক্ষ্য রেখে তবেই সেসব সাইটে রেজিস্ট্রেশন করুন এর আগে নয়।
যদি কোন ধরনের ঘাপলা দেখেন তবে অবশ্যই সব সাইট থেকে দূরে থাকুন কারণ আপনাকে এসব সাইটে কাজ করতে হবে এমন কোন কথা নেই। এইসব সাইটে আপনি কাজ না করেও আপনি শান্তিতে থাকতে পারবেন আর যেভাবে চলছে সেভাবেই চলতে পারবেন এসব ভুয়া সাইটে কাজ করলে আপনার মানসিক শান্তি ও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক ক্ষেত্রে বেড়ে যায়।
আর মনে রাখবেন পৃথিবীতে সহজে টাকা ইনকাম করার কোন পদ্ধতি নেই শুধুমাত্র বেআইনি কাজ ছাড়া যদিও বেআইনি কাজ করে ইনকাম করতেও কিছুটা হলেও কষ্ট করতে হয়। যদি দেখেন যে সহজেই ইনকাম করা যাচ্ছে হাজার হাজার টাকা তখনই বুঝে নিবেন এগুলো সব ভুয়া সাইট। এগুলোতে ইনকাম হবে কিন্তু আপনার না, যে সাইট তৈরি করেছে শুধুমাত্র তারই ইনকাম হবে। কথায় বলে সস্তায় তিন অবস্থা কিন্তু এসব সাইটের বেলায় এই প্রবাদ হয়ে ওঠে ফ্রীর তিন অবস্থা।
অর্থ উপার্জন যদি এতই সহজ হতো তবে সকলেই তাদের চাকরি ছেড়ে দিয়ে এইসব আউট সোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং এর পিছনে দৌড়াত। আউট সোর্সিং মূলত 10 টাকার কাজ আপনার দিয়ে 5 টাকায় করিয়ে নেওয়া। আর তার জন্য চায় দক্ষতা। তাই আগে দক্ষ হয়ে উঠুন তারপর আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং এর পথে আসুন। এই দক্ষতার মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন আপনার কাঙ্খিত ফল। তারপরেই আপনি ইনকাম করতে পারবেন হাজার হাজার টাকা।
যাই হোক যদি আমার লেখায় কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তবে অবশ্যই তা শোধরানোর জন্য কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দেবেন।
নিরাপদে ঘরে অবস্থান করুন , সুস্থ থাকুন অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবেন না। ধন্যবাদ।