মানুষ মানবতা মনুষ্যত্ব: বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে প্রায় ৭৮০ কোটি মানুষ, কিন্তু মানবতার অনেক অভাব। মৃত্যু হয়ে গেছে মনুষ্যত্বের।চারেদিকে শুধু জীবন্ত লাশ ঘুরে ফেরে। আবার আমরাই গর্ব করে বলি মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব । পৃথিবীতে থাকা জীনসপত্র হলো ব্যবহারের জন্য আর মানুষ হলো ভালোবাসার জন্য। কিন্তু বর্তমান সময়ে কঠোর বাস্তব হলো জড়বস্তুকেই ভালোবাসা হয় আর মানুষকে ব্যবহার করা হয়। একজন মানুষ অন্য মানুষকে ব্যবহার করে শুধু নিজের স্বার্থে, নিজের প্রয়োজনে। ব্যবহারের সময় বলে তুমি আমার কাছে দেবদূত,আর প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে বলে “তুমি কে?”
আমরা যখন বাজার করতে যাই তখন দোকানি একটা প্যাকেট দেয়, প্রয়োজনীয় দ্রব্য, মালামাল বহন করার জন্য । বাড়ীতে আসার পর জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা হলে আমরা সেই প্যাকেটটিকে ফেলে দেই অথবা তেমন গুরুত্ব দেই না। তখন প্যাকেটটির জায়গা হয় ডাস্টবিন। অনুরূপভাবে একজন মানুষ ততক্ষন আপনাকে সম্মান দিবে যতক্ষণ আপনাকে দিয়ে তার কোন উপকার হচ্ছে। কাজ শেষ হয়ে গেলে ছুঁড়ে ফেলে দিবে ,আর এসময় একজন মানুষ অনেক কষ্ট পায়।এমন পরিস্থিতির স্বীকার হয় সরল সাদাসিধে মানুষগুলো,যারা একটু প্রশংসা পাওয়ার আশায় উপকার করতে যায় । আর এসব কাজ সেই করে যে কোন রকম বিবেচনা না করে অন্যের উপকার করতে চায়,আর সে এমন চরম মূল্য পায় শুধুমাত্র আত্মমর্যাদাবোধের অভাবে। আপনাদের এটাই বলতে চাই ,”একজন মানুষের আত্মমর্যাদাবোধ থাকা গুরুত্বপূর্ণ”।
জেনে নিন এই আত্মমর্যাদাবোধ কি?
আপনার জীবনে আপনার পছন্দ অপছন্দের কোন দাম নেই, কিন্তু আপনার বন্ধু, প্রেমিক-প্রেমিকার পছন্দ অপছন্দ গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আপনি ভাবেন, মানিয়ে নেওয়া টাই জীবন। কিন্তু পৃথিবীতে সবার পছন্দ অপছন্দ সমান নয়। হতেই পারে আপনার পাশের মানুষ টির দুই একটা অপছন্দ মানিয়ে নিতে পারেন এবং সেই মানুষটিও যখন আপনার দুই একটা অপছন্দ মেনে নিবে। সেটাই হলো প্রকৃতপক্ষে মানিয়ে নেওয়া এবং এই মানিয়ে নেওয়া টাই জীবন। কিন্তু মনে রাখবেন খারাপ কিছুর সাথে মানিয়ে নেওয়া ঠিক নয়,তাই নিজের আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিবেন না।
কখনোই ওপাশের মানুষগুলো কে খুশি করার জন্য তার পছন্দ-অপছন্দ মেনে চলা কে মানিয়ে নেওয়া বলে না, এটাকে দাসত্ব বলে।আর এই প্রক্রিয়া চলতে চলতে এমন এক পর্যায় আসবে যখন আপনি কেবল একজনের হুকুমের গোলাম হয়ে যাবেন। আর ঠিক এই মুহূর্তে যখন সে আপনাকে ছেড়ে যাবে , তখন সেই আঘাত সহ্য করা অনেক কঠিন হয়ে যায়। এবং মানসিক শক্তি হারিয়ে যায়। তখন আপনার পরিস্থিতি হয়ে যায় জড়বস্তুর মতো। পরিশেষে বলা যায়,”কাউকে সাহায্য করা ,আর কারও ব্যবহারে আসার মাঝে অনেক পার্থক্য আছে”।
ধরুন আপনার একজন বন্ধু এসে বলল ,ভাই এই কাজটা করে দাও।আপনি একদিন তার কাজ করে দিলেন। পরেরদিন আবার আপনাকে বলল, আপনি পুনরায় তাঁর কাজ করে দিলেন। এভাবে প্রতিদিন সে আপনাকে দিয়ে যখন কিছু না কিছু করে নিবে তখন আপনি তার ব্যবহারের বিষয় হয়ে দাঁড়াবেন।
আর এভাবেই কেউ বন্ধুত্বের নামে, ভালোবাসার নামে, সম্পর্কের নামে বা টাকা দিয়ে মানুষ মানুষকে ব্যবহার করে। তাই সবসময় মনে রাখবেন,”যে কাজ আপনার মন করতে চায় না সেই কাজ কখনোই করবেন না”। সামনের মানুষ টা যেই হোক না কেনো,যখন আপনার মন নেই তখন না বলতে শিখুন।এতে নিজেকে তার কাছে ছোট ভাববেন না। কারণ সেও মানুষ আর আপনিও মানুষ।আর মানুষ হিসেবে আপনার অধিকার আছে , নিজের মতামত প্রকাশ করার।তারও আত্মমর্যাদা আছে ,আর আপনারও আত্মমর্যাদা আছে।তাই যদি তার সামনে মাথা নত করেন, তাহলে আপনার মাথায় লাথি মারা তার কাছে সহজ হয়ে যাবে। আর যদি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন, তাহলে আপনার ঘাড়ে চড়া বা লাথি মারা সহজ হবে না।
পরিশেষে বলতে চাই, নিজের কাছে নিজেকে সম্মান করতে শিখুন। নিজের আত্মমর্যাদা রক্ষা করুন। যখন আপনার আত্মমর্যাদা থাকবে তখন সমগ্র পৃথিবী আপনাকে সম্মান করবে,নয়তো আপনাকে কেউ দাম দিবে না।
ধন্যবাদ।