আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে আপনার জীবনের ঠিক কতটুকু সময় আপনার নিজের? কি বুঝতে পারলেন না আমি কি বলতে চাইছি? তো চলুন একটু ভেঙে বলা যাক।
আপনার জীবনের কতটা সময় আপনার নিজের, আপনি জীবনে কতটা সময় স্বাধীন ভাবে বসবাস করতে পারেন। আপনি কি এই পৃথিবীতে জীবন উপভগ করছেন, নাকি শুধু বেঁচে আছেন। গড় হিসাবে দেখতে গেলে আমরা এই পৃথিবীতে ৭২ থেকে ৭৯ বছর বাঁচার সুযোগ পায়। কিন্তু আমরা কি কখনোই এত বছরের স্বাধীনতা পাই? বিষয়টি একবার ভেবে দেখুন।
জীবনে আমাদের প্রত্যেকের কোনো না কোনো দায়িত্ব থাকে যা আমরা ইচ্ছা করলেও বাদ দিতে পারি না। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সবথেকে দরকারি জিনিস হলো আমাদের শরীর, আর এই সরিরে দরকার বিশ্রাম। প্রতি রাতে যদি আমরা গড়ে ৮ ঘণ্টা করে ঘুমায় তাহলে জীবনের প্রায় ২৩ বছর আমরা গুমানোর জন্যই খরচ করে ফেলি। তারপর আমাদের জীবনের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে পড়াশোনা। কেউ যদি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্তও পড়াশোনা করে তবে তার মানে ১২ বছর সে স্কুল কলেজে পড়াশোনা করেছে, সপ্তাহে যদি ২ দিন করে ছুটি ধরা হয় তবুও ১৭ হাজার ২৮০ ঘণ্টা আমরা স্কুলে কাটিয়েছি। তাছাড়া হোম ওয়ার্ক, টিউশন তো আছেই। সব কিছু হিসাব করলে সেখানে আমাদের ৩ বছর খরচ হয়েছে।
তাহলে জীবনের বাকি থাকে আর ৫০ থেকে ৫৫ বছর। আপনি যদি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন তাহলে আরো ৫ বছর যোগ করতে পারেন। তাহলে আর বাকি থেকে ৪৮ বছর। তারপর ধরুন আপনি ফুল টাইম একটি জব করেন, সেখানে আপনি সপ্তাহে কমপক্ষে ৪০ ঘণ্টা কাজ করেন। ধরা যাক আপনি বছরে ২ সপ্তাহ ছুটি পাবেন। সাধারণ মানুষ ৪০ থেকে ৪৫ বছর কাজ করে। তাহলে আপনি এখানে প্রায় ৯০ হাজার ঘণ্টা নিজের কর্ম জীবনকে সমর্পিত করবেন। তার অর্থ দাড়াই প্রায় ১০ বছরের সমতুল্য। তাহলে জীবনের আর বাকি থাকে মাত্র ৩৮ বছর।
পৃথিবীর যে জায়গায় আপনি বসবাস করেন না কেন, কাজে যাওয়ার জন্য আপনাকে বাড়ি থেকে কর্ম স্থলে যাওয়ার জন্য যাতায়াত তো করতেই হবে। গড় হিসাব করলে প্রতিদিন ৯০ মিনিট করে হলে তাহলে জীবনের ২ বছর আমরা অফিসে যাতায়াত করতেই কাটিয়ে ফেলি। তাহলে জীবনের আর পড়ে থাকে ৩৬ বছর। তাছাড়া আমাদের জীবনের খুব বড় একটা অংশ জুড়ে রয়েছে খাওয়া দাওয়া। সাধারণভাবে হিসাব করলে প্রতিদিন প্রায় আমরা ৭০ মিনিট করে শুধু খাওয়া দাওয়ার পেছনে খরচ করি। ৭৯ বছরের খাওয়া দাওয়ার সময় যদি যোগ করা যায় তাহলে প্রায় ৪ বছর খরচ হয় খাওয়া দাওয়ার পেছনে।
শুধু যে এগুলো করেই আমাদের জীবন অতিবাহিত হয় তা কিন্তু নয়। ছোট বড় যেকোনো বিষয় যেমন ঘর গোছানো, বাড়ির অন্যান্য কাজ, আড্ডাবাজি, বাথরুমে যাওয়া, টিভি দেখা, মোবাইল নিয়ে সময় কাটানো, ভিডিও গেম খেলা ইত্যাদি এসব সময়কে বাদ দিয়ে তো আমাদের জীবন অতিবাহিত হয় না। সেজন্য এগুলোর পেছনে আরো বড় একটা সময় চলে যায় আমাদের জীবন থেকে। এসব সময় বাদ দিলে আমাদের জীবনে পড়ে থাকে আর ১৪ থেকে ১৬ বছর। কিন্তু আপনি কি ভাবছেন জীবনের এই ১৪ থেকে ১৬ বছর আমরা সুখে শান্তিতে কাটাতে পারবো? না তা কখনোই সম্ভব না। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের অনেকের মাঝেই বিভিন্ন রোগের সাক্ষাত হয়। কিছু কিছু সাময়িক তো আবার কিছু কিছু স্থায়ী রোগ হিসেবে আমাদের শরীরে মৃত্যু পর্যন্ত বাসা বাঁধে।
এজন্য জীবনের এই ছোট সময়টাকে উপভোগ করতে নিজেকে কিছুটা সময় দিন। নিজের পরিবারের মানুষদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সময় কাটান। নিজের ধর্মচর্চা করুন এবং কোনো কাজে যদি আপনি সফল হতে চান অন্যের সিদ্ধান্তের থেকে নিজের সিদ্ধান্তকে বেশি প্রাধান্য দিতে শিখুন। তাহলে দেখবেন ছোট এই জীবনটাই অনেক সুখের হয়ে উঠেছে।