আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই বেশ ভালোই আছেন।
একটু দুশ্চিন্তা হয় তাদের জন্য, যাঁরা ট্রাইপোফোবিয়ায় আক্রান্ত। আমাদের চারপাশের অনেক মানুষই এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত। আপনিও কি ট্রাইপোফোবিয়ার ভিকটিম?
চলুন জেনে নেওয়া যাক..
ভয় মনের অবচেতন স্তরের একটি বিশেষ মানসিক অবস্থা, যার নির্দিষ্টতা আছে। কিন্তু ভয় যখন নির্দিষ্টতা অতিক্রম করে, একে ভয়রোগ/ ভীতিরোগ/ ফোবিয়া বলে।
আজ আমরা ট্রাইপোফোবিয়া বা বহুছিদ্র ভীতি নিয়ে আলোচনা করবো। পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ট্রাইপোফোবিয়া: ট্রাইপোফোবিয়া অর্থ বহুছিদ্র ভীতি। সাধারণত যেসব মানুষ বাস্তবে কিংবা স্থিরচিত্রতে অনেকগুলো কালো ছিদ্র (যেমনঃ মৌচাক) দেখা মাত্রই শরীর ঘিনঘিনে হয়ে অথর্ব হয়ে যায়, বা তাঁরা ভয় পেয়ে যায়, তারা এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত বলো স্বীকৃত। তাঁরা সাধারণত ওইসব জিনিস এড়িয়ে চলেন, যেখানে মৌচাক জাতীয় কোনকিছু রয়েছে। তাঁরা বলতে গেলে মোটেও সে জাতীয় বস্তু বা কোনকিছু দেখতে পারেননা। একবার চোখ পরলেই শরীরের ঘিনঘিনে ভাবের জন্য তাঁদের জান বেরিয়ে যায়। তাঁদের মূলত একটাই ভয়, সেটা হচ্ছে পরপর ও পাশাপাশি অনেকগুলো ছিদ্র সম্বলিত কোন দ্রব্য, স্থান, ছবি, রোগ বা বস্তু। সবসময়ই তাঁদের মনে এই ভয়টাই কাজ করে যে, হয়তো এক্ষুণি আমার শরীরটা এরকম হয়ে যাবে! হয়তো এক্ষুণি ছিদ্রগুলোর মতো কিছু একটা তৈরি হয়ে যাবে! কি হবে আমার!
আমি আমার একটা অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। যদিও আমি কখনো এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ছিলামনা।
একদিন আমার এক খালাতো বোন আবদার করছিলো মোবাইলে তাকে গেম খেলতে দিতাম। আমি তাকে সাবওয়ে সার্ফার্স নামক গেম দিলাম খেলার জন্য। সে কিছুক্ষণ খেললো। আমি বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম, সে কাঁপছে..
লক্ষ্য করে দেখলাম তার চেহারাটা বিকৃত হয়ে গেছে। খুব খারাপ বা জঘণ্য কিছু দেখলে স্বাভাবিকভাবে মানুষের যেমন ফিলিংস হয়, প্রায় তেমনিই।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি হলো। জবাবে কিছু না বলে আমাকে শুধু মোবাইলটা দেখালো। দেখলাম ফেসবুক থেকে নোটিফিকেশন এলো, যেটা সে ক্লিক করে দেখেছে। সেখানে এক লোকের শরীরের চিকেন পক্সের পরবর্তী অবস্থা দেখা যাচ্ছিলো। আমি ধরেই ফেললাম, আমার বোনের ট্রাইপোফোবিয়া রয়েছে। পরে বুঝিয়ে শুনিয়ে আমি তাকে স্বান্তনা দিই..
এই জাতীয় ফোবিয়া বা ভয়ে মানুষ নিজেদেরকে একটু স্ট্যাটাসফুল করে রাখতে পছন্দ করে। তাঁদের নিজেদের স্বভাবে একটু অহংকার ভাব পরিলক্ষিত হয়। বিশেষভাবে তাঁরা একটু বাস্তববাদী টাইপের হয়। পাঠকের শুনতে অবাক লাগছে হয়তো!
তবে জেনে রাখা উচিৎ যে, এই ভয় মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে গেলে মানুষ অন্যান্য আরও ফোবিয়া বা ভয়রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। যেমনঃ এব্লুটো ফোবিয়া বা স্নান, ধোয়া-মোছা অথবা পরিষ্কার করার ভয় রোগ।
এই ফোবিয়ায় কমবেশি সবাই-ই আক্রান্ত। তবে জেনে রাখুন এটি বিশেষ কোন রোগ নয়। অতিরিক্ত ছিদ্রভীতি নিয়ে অতিরিক্ত ভয় থাকলে সেটা নিবারণে কিছু ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া উচিত। যেমনঃ
১. বুক ভরা নিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে বারবার অনেকগুলো ছিদ্রযুক্ত ফটোর দিকে তাকানো।
২. ব্যাপারটাকে সহজে নেওয়া। অর্থাৎ আপনার কিছুই হতে যাচ্ছেনা, এমনটা ভাবা। ভাবতে না পারলেও ভাবার চেষ্টা করা।
৩. নিয়মিত হাসা ও হাসির চর্চা করা, ইত্যাদী।
কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনিও যদি এই ফোবিয়ার ভিকটিম হয়ে থাকেন..
পরবর্তী পোস্টে আরও একটি ফোবিয়া বা ভয়রোগ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো ইনশাআল্লাহ। সেই সাথে থাকবে সেই ফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপগুলোও।
Related Tags:
ফোবিয়া কি?
ফোবিয়া কাকে বলে?
Trypophobia
ট্রাইপোফোবিয়া
মৌচাক দেখলে ভয়
অনেকগুলো ছিদ্রযুক্ত কিছু দেখলে ভয়
কালো ছিদ্রযুক্ত কিছু দেখলে ভয়
ট্রাইপোফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ