এক বোকা লোকের একটা চালাক গাধা ছিলো। চালাক এজন্য যে, গাধাটা অনেক কিছুই বুঝতে পারতো। অন্য গাধাদের মতো বোকা ছিলো না। সে আবহাওয়ার খবর বলতে পারতো। তবে মানুষের মতো করে, “আজকের দিনটি প্রধানত কিংবা আংশিক শুষ্ক থাকবে” —এভাবে বলা নয়। কেননা, এভাবে মানুষরা বলে। আর মানুষরা, অর্থাৎ মানুষের মধ্যে যারা আবহাওয়াবিদ; তারা আবহাওয়া নিয়ে যা বলে, তার কোনটিই অবশ্যি কোনদিনই পুরোপুরি সঠিক হয় না। তারা যদি বলে, আজকে আবহাওয়া খুব চমৎকার থাকবে; আজ রোদ ঝলমলে দিন। তাহলে দেখা যায় যে, সেদিন রোদ তো দূরের কথা; আকাশ কালো করে ঝুমঝুম বৃষ্টি নামে। আর যেদিন বলে, ঝুমঝুম বৃষ্টি হবে; তো সেদিন দেখা যায়, ঝলমলে দিন আর চারিদিকে ঝকঝকে রোদ।
বোকা লোকের ঐ চালাক গাধাটা চমৎকার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারতো। ঝড়বৃষ্টি হওয়ার অনেক আগেই সে বিকটভাবে ডাকাডাকি শুরু করে দিতো। যা দেখে তার ঐ বোকা মালিকও খুব সহজেই বুঝতে পারতো যে, আজ ঝড়বৃষ্টি হবে। হতোও তাই। এমনকি বন্যা হওয়ার আগে গাধাটা পায়ের খুর দিয়ে মাটিতে এমনভাবে আঁচড়াতো আর নাকেমুখে এমনভাবে ভোস ভোস করতো যে, তা দেখে তার মালিক ঐ বোকা লোকটাও বুঝতে পারতো যে, মারাত্মক বন্যা হবে। ঐ এলাকার লোকজনও গাধাটার বিকট ডাকাডাকি আর মাটি আঁচড়িয়ে ঝড়বৃষ্টি ও বন্যার পূর্বাভাসে বিশ্বাস করতো। সেজন্য তারা গাধাটার মালিক ঐ বোকা লোকটাকে হিংসে করতো যে, তার আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারে এমন দারুণ একটা গাধা আছে।
একদিন এক লোক ঐ গ্রামে খবর নিয়ে এলো যে, যারা সঠিকভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারে, সরকার তাদের আবহাওয়ার পূর্বাভাষক হিসেবে আবহাওয়াবিদ পদে সরকারি চাকরি দিচ্ছে। গাধাটার মালিককে ঐ লোকটা বুদ্ধি দিলো যে, যদি সে শহরের আবহাওয়ার সরকারি অফিসে তার গাধাটা কে নিয়ে গিয়ে ইন্টারভিউ দেওয়ায়, তাহলে তার গাধাটির নির্ঘাত আবহাওয়াবিদ পদে সরকারি চাকরি হবে। কেননা, সবাই জানে যে, তার গাধাটি খুব ভালো আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারে।
বোকা লোকটি মনে করল, সত্যিই তো তার গাধা খুব ভালো আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারে। তাই সে একদিন তার গাধাটিকে নিয়ে চলল শহরের দিকে। শহরে গিয়ে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে করে একসময় শেষ সে তার গাধা নিয়ে আবহাওয়া অফিসে পৌঁছে গেলো। আবহাওয়া অফিসে ঠিক তখনই আবার আবহাওয়ার পূর্বাভাষক হিসেবে আবহাওয়াবিদ পদে নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ চলছিলো। ঠিক সেখানে সে তার গাধাটিকে নিয়ে হাজির হলো। গাধা নিয়ে তো তাকে কোনোভাবেই ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিলো না। কিন্তু লোকটি তার গাধাটিকে নিয়ে ঢুকবেই। সেটা নিয়ে সেখানে রীতিমত একটা হৈ চৈ হট্টগোল শুরু হয়ে গেলো।
হৈ চৈ আর হট্টগোল শুনে ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে সেখানে প্রধান আবহাওয়াবিদ উপস্থিত হয়ে জানতে চাইলেন— কি ব্যাপার, কি হয়েছে? সিকিউরিটি গার্ড আর অফিস পিয়ন প্রধান আবহাওয়াবিদকে জানালো— এই যে দেখেন স্যার, এই লোকটা তার গাধাকে নিয়ে এসেছে আবহাওয়ার পূর্বাভাষক পদে আবহাওয়াবিদ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য। তাই স্যার আমরা তাকে ঢুকতে দিচ্ছিলাম না। প্রধান আবহাওয়াবিদ তখন ওই লোকটিকে বললেন, ওরা যা বলছে তা কি সত্যি?
গাধার মালিক ঐ বোকা লোকটি তখন বলল যে, জ্বি স্যার, সত্যি। আমার গাধাটি খুব ভালো আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারে। ঝড়বৃষ্টি হওয়ার আগে সে বিকটভাবে ডাকাডাকি ও চিল্লাচিল্লি করে, আর বন্যার আগে সে ভোস-ভোস করে মাটিতে পা ঠোকে, তাতে আমি বুঝতে পারি যে বন্যা কিংবা ঝড় বৃষ্টি হবে। তাই আমি আমার গাধাটাকে নিয়ে এসেছি আবহাওয়ার পূর্বাভাষক হিসেবে আবহাওয়াবিদ পদে তার নিয়োগ লাভের জন্য।
গাধার মালিক ঐ বোকা লোকটির এই কথা শুনে প্রধান আবহাওয়াবিদ বললেন— আচ্ছা ঠিক আছে, তোমার গাধাটাকে আমাদের ভাইবা বোর্ডে ঢুকতে দাও। লোকটা সাথে সাথে তার গাধা নিয়ে ভাইভা বোর্ডের ঢুকতে যাচ্ছিলো, কিন্তু প্রধান আবহাওয়াবিদ বললেন— না তুমি না, শুধু তোমার গাধাটি ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢুকবে। কেননা, তুমি তো আর আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারো না। তোমার গাধা আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারে। তাই আমরা তার ইন্টারভিউ নেবো। লোকটা বাধ্য হয়ে তার গাধাটিকে আবহাওয়াবিদ পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢুকিয়ে দিলো।
একঘন্টা পর প্রধান আবহাওয়াবিদ ইন্টারভিউ বোর্ডের বাইরে এসে ওই লোকটিকে জানালেন যে— সুসংবাদ, তোমার গাধাটির আবহাওয়াবিদ পদে সরকারি চাকরি হয়ে গেছে। তোমার গাধা আসলেই খুব ভালো আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারে। আমরা পরীক্ষা নিয়েছি। সে খুব ভালোভাবে পাস করেছে। তাই তার আবহাওয়াবিদ পদে চাকরি হয়েছে।
বোকা লোকটি তখন প্রধান আবহাওয়াবিদকে বললো— স্যার, আমার গাধাটা? তাকে নিয়ে আমি বাড়ি যাব। প্রধান আবহাওয়াবিদ বললেন— কিসের গাধা? খবরদার, তাকে নিয়ে আর কোনদিন কথা বলবে না। সে এখন আর তোমার গাধা না। সে এখন জাতীয় সম্পদ। সে এখন একজন সম্মানিত আবহাওয়াবিদ। তার কথা তুমি পুরোপুরি ভুলে যাও। সে এখন একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরিজীবী।