আমরা যারা নব্বই দশক বা তারো আগে জন্ম নিয়েছি আমাদের শৈশব সত্যিকার অর্থেই ছিলো অতুলনীয়।
এখনকার যুগের বাচ্চাদের মতো প্রযুক্তি নির্ভর ও ঘরবন্দি জীবন যাপন করলে সত্যিকার অর্থেই হাপিয়ে উঠতাম হয়তোবা।
বেশিরভাগ পরিবারই ছিলো তখন যৌথ পরিবার। একক পরিবারের সংখ্যা ছিলো হাতেগোনা গুটিকয়েক। দাদা-দাদী, চাচা-চাচী, ভাই-বোন, কাজিন সবাই মিলে একসঙ্গে থাকার যে আনন্দ ছিলো সেটা কোনোভাবেই ভুলার মতো না। কম সংখ্যক মেয়েরাই চাকুরী করতো। মা-চাচীরা একা হাতে ঘর ও সংসার এর দেখভাল করতেন। বাবারা ভোর হলেই কাজের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যেতেন। আর আমরা ফজরের সময় উঠেই হাত মুখ ধুয়ে নামাজ পড়ে মক্তবে চলে যেতাম। বাড়িতে এসে কিছু খেয়েই স্কুলের উদ্দেশ্যে রওণা হতাম। বিকেলে দাঁড়িবান্ধা, কাবাডি, ফুটবল আরো কতো শত খেলা খেলতাম, তার জুড়ি নেই! বৃহস্পতিবার রাত তো আমাদের জন্য ছিলো চাঁদরাত! সন্ধ্যায় সব বন্ধুরা মিলে কতো গল্প করতাম! শুক্রবার ঈদের দিনের মতোই আনন্দকর ছিলো। বাড়ির ছেলেরা সবাই মিলে জুমুআর নামাজ আদায় করতে যেতাম। বাড়িতে মা-চাচীরা সেদিন পোলাও কোরমা রান্না করতেন। নামাজ পড়ে এসে একসাথে খেতে বসতাম, সেই আনন্দ আজকাল দামী রেস্টুরেন্টে বসেও হয়তো পাওয়া যাবে না! তারপর সবাই টিভির সামনে বসে যেতাম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি দেখতে। পাড়ার ছেলেমেয়েরা যাদের বাড়িতে টিভি ছিলো না তারাও সবাই চলে আসতো আমাদের বাড়ি! সবাই মিলে একসাথে ছবি দেখার আনন্দ এখন নামীদামী সিনেমা হলে গিয়েও হয়তো পাওয়া যাবে না!
সদ্য কৈশোর শেষ হওয়া কিশোর-কিশোরীও তখন প্রেমে পড়তো! তবে তাদের লজ্জা বর্তমান যুগের চেয়ে নিতান্তই বেশি ছিলো হয়তোবা! তাই ভালোবাসলেও বলা হয়ে উঠতোনা বেশিরভাগ! একে অপরের চোখের ভাষা তারা পরতে ও বুঝতে পারতো হয়তো! তখনকার যুগে চিঠির আদান-প্রদান এর চল ছিলো খুব।
একজন অপরজন থেকে অনেক দূরে থাকলেও একটা চিঠির অপেক্ষা তাদের ভালোবাসা বাড়িয়ে দিতো বহুগুন কেননা অপেক্ষা করার মধ্যেও তো ভালোবাসার প্রতিফলন হয়! তারা কিন্তু একে অন্যেকে ভুলে যেতো না! বর্তমান যুগের যোগাযোগের মতো এতো সহজলভ্য তখন মোটেও ছিলো না। তাও একটা চিঠির মধ্যে দিয়ে যে আবেগের প্রকাশ পেতো বর্তমান যুগের মোবাইল ফোনে চ্যাট কিংবা ভিডিও কলের চেয়ে সেটা অনেক অনেক বেশি!
যায় দিন গুলো আসলেই অনেক অনেক ভালো থাকে, কিন্তু আসে দিনগুলো যে খারাপ সেটাও কিন্তু নয়! বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণের আমরা অনেক অসম্ভবকেই তো সম্ভব করছি, বিদেশে বসে দেশের মানুষের খবর নিচ্ছি মিনিটের মধ্যেই যেটা হয়তো আমার আগের প্রজন্ম কল্পনাও করতে পারেনি! কিন্তু বিজ্ঞানের কল্যাণ যেমন আছে ঠিক তেমনি তার অভিশাপও ভয়াবহ। সে ব্যাপারে অবশ্যই আমাদের সচেতন থাকতে হবে! আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিজ্ঞানের অভিশাপ ও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্বতো আমাদেরই!!