আজকাল আমরা যন্ত্রের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। এটা ঠিক যে, যন্ত্র, প্রযুক্তি আমাদের জীবন অনেক সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু সেইসাথে আমাদের মৌলিক আনন্দগুলো হারিয়ে গেছে। আগের দিনে বিকেল হলেই খেলতে যাওয়া, লোডশেডিং হলেই পড়া বন্ধ করে দেয়ার অজুহাত দেয়া, পড়ার বইয়ের নিচে গল্পের বই রেখে পড়া, বাইরে হাঁটতে যাওয়া এসব দিন এখন আর নেই।
তখন টেলিফোন ছিলো। আর বোতামওয়ালা ফোন তখন বেশ দামি ছিলো। এত সাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইনে কাজ, অনলাইনে সময় দেয়া এসব তখন ছিলো না। বই পড়া, গান শোনা, প্রকৃতি দেখা, ডায়েরি লেখা এসব কাজের জন্য সময় দেয়া হতো। কিন্তু সেইসব মৌলিক আনন্দ কোথায় যে হারিয়ে গেছে! মোবাইল গেমস, ভিডিও দেখা, মেসেজ করা, কথা বলা, লেখা, ছবি কিংবা ভিডিও পোস্টের বাইরে কি আর কিছু নেই? এটা ঠিক যে, অনলাইনে এখন নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। অনেক সুযোগ রয়েছে স্বাবলম্বী হবার। কিন্তু সেইসাথে জীবন থেকে মৌলিক আনন্দগুলো হারিয়ে যাচ্ছে!
কিছুদিন আগে খবরে দেখিয়েছিলো- বর্তমানে যুবসমাজ অনেক বেশি প্রযুক্তিতে আসক্ত। এর বেশিরভাগই অনলাইন গেমস কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সময় কাটাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে বাচ্চাদের চোখের ক্ষতি হচ্ছে। খুবই কম বয়সে চোখে চশমা দিতে হচ্ছে। বৃদ্ধিতে এবং বিকাশে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
সেইসাথে ব্যবহারিক দক্ষতা কমে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, শরীরে ব্যথাসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ছোট ছেলেমেয়েদের সামাজিক দক্ষতা এবং বিকাশে সমস্যা হচ্ছে।বাবা- মায়েদের সাথে কথা বলার সময় তারা বলেন- আমাদের সময় এত প্রযুক্তি ছিলো না। আমরা একবার বাইরে গেলে ঘরে আনতে অনেক কষ্ট করতে হতো আমাদের বাবা- মাদের। এখনকার ছেলেমেয়েরা ঘর থেকেই বের হতে চায় না। স্কুল থেকে এসেই গেমস খেলতে বসে যায় মোবাইল অথবা কম্পিউটারে।
এখন আসি করণীয় সম্পর্কে কথা বলা যাক-
১.প্রথমত নিজের মৌলিক আনন্দগুলোকে কখনো নষ্ট হতে দিবেন না। মোবাইল, ল্যাপটপ ছেড়ে একটা ভালো বই পড়তে পারেন।
২. কোথাও বেড়াতে গেলে মনের আনন্দে যান। কিন্তু নিজে উপভোগ করতে শিখতে হবে। সারাদিন ছবি তোলা, আপলোড করা, ভিডিও করে আপলোড করা এসব কমিয়ে আনুন। চুপচাপ প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করুন।
৩. একদিন কোনো পোস্ট না করলে কিছুই হবে না। নিজের শখের কাজে সময় দিন। নিজেকে নিয়ে ভাবুন। পরিবারকে সময় দিন। চাইলে বসে গল্প করতে পারেন।
৪.কোথাও খেতে গেলে কি কি পদ খাচ্ছেন বা পরিবেশটা কেমন সেসব ছবি তুলে পোস্ট করার চেয়ে বরং খাবারের স্বাদ নিন। বন্ধু বা পরিবারের সাথে খেতে গেলে তাদের সাথে সময়টা উপভোগ করুন।
এভাবে যন্ত্রের প্রতি নির্ভরতা কমে আসবে। জীবনের মৌলিক অর্থ খুঁজে পাবেন। হয়তো এত একঘেয়ে মনে হবে না জীবনকে।
সবাই ভালো থাকুন আর মৌলিক আনন্দ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।