সেও একদিন বাবা মায়ের খুব আদরের সন্তান ছিলো। তার নাম ছিলো মহিউদ্দীন,,বাবা তাকে ভালোবেসে মহি বলে ডাকত। বাবা-মা না খেয়ে,, না পরে তার সন্তানের জন্য সব কিছু করে যেতেন। ঠিক সন্তানের আনন্দ যেন বাবা মায়ের আনন্দ। রাতে কারেন্ট না থাকায় মা তাকে পাখা দিয়ে বাতাস করতেন তখন মহি মাকে বলত মা,ওমা আমায় গল্প শোনাও না।
মা তখন মহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে গল্প বলতে থাকেন। এতক্ষণে মহি মায়ের আদর পেয়ে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়। বাবা-মা মহিকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখত বাবা বলতেন মহিকে ডাক্তার বানাব ও সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের পাশে থাকবে,,, সে একজন আদর্শ নাগরীক হবে সে সমাজ কল্যাণমূলক কাজে নিয়জিত থাকবে।
বাবা- মা অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে মহিকে পাশের গ্রামের নামকরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাকে ভর্তি করে দেন। মহিদের পাশের বাড়িটা ছিলো রাসেলের। তারা একই শ্রেণীতে পড়ত,, ক্লাসের টিফন হলেই তারা এক দৌড়ে আবুল চাচার দোকানে গিয়ে নাস্তা করে আবার ক্লাসে যেতো।
স্কুলের সকল শিক্ষক মহিকে খুব ভালোবাসতো ও ছিলো খুব ভদ্র আর মেধাবী।। প্রত্যেক পরিক্ষায় সে ভালো ফলাফল করতো। মহি যখন দশম শ্রেণীতে সে সময়ের কথা…. বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল মহি মায়ের ঘরে গিয়ে দেখে মা শুয়ে আছে।।। মা,মা বলে ডেকে মায়ের পাশে গিয়ে বসে মহি,,, কপালে হাত রেখে বুঝতে পারে গরমে পুরে যাচ্ছে খুব জ্বর এসেছে মা ভালোভাবে কথা বলতে পারতেছিলো না।
বাবা বাজারে ছিলো বৃষ্টি কারণে বাড়িতে আসতে পারেনি,,কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি থেমে যায়। সে দৌড় দিয়ে বাজারে গিয়ে ডাক্তারকে ডেকে আনে। ডাক্তার জ্বর মেপে মহিকে কিছু ওষুধ দিয়ে যায়। একটু পরে মহির বাবা বাড়িতে আসে। তার বাবাও কিছুদিন থেকে অসুস্থ।।
সেদিনের মতো মহি ঘুমাতে যায়।।।সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে সে মায়ের ঘরে যায়। মাকে রাতের থেকে বেশি অসুস্থ লাগছিলো। তারপর সে মাকে হালকা খাবার খাওয়ানোর পরে ওষুধ খাওয়ায়ে দেয়।। মহি মাকে বলে,মা আমি ক্লাস যাচ্ছি ক্লাস শেষ করে কোথাও দেরি করবোনা বাড়িতে চলে আসবো।
এই বলে সে চলে যায়,,, ক্লাসে যাওয়ার কিছু সময় পরে মহি তার বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারে তার মা মারা গেছে,,ঐ কথা শুনার পরে মহির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল সে দৌড়ে বাড়িতে গেলো। বাড়িতে মানুষে ভর্তি একটু পরেই মায়ের জানাযা। মহি খুব কান্না করছিলো নিজের হাতে মাকে কবরে রেখে মাকে মাটিতে শায়িত করলো,,মহির বাবা আগে থেকে অসুস্থ ছিলো ওনার যেন আরো অসুস্থতা বেরে গেল।
মা মারা যাওয়ার দুইদিন পর মহির বাবাও মারা যায়,,,মহি বাবা- মা হারানোর কষ্টে কিছু খাচ্ছিল না ছোটবেলার কথা মনে করে প্রায় সময় সে কান্না করত,,,,মহি দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছিলো।।। এক বছর পরে মহির মস্তিষ্কজনিত সমস্যা দেখা দেয়,, সে আর বাড়িতে থাকতে চায় না।
যেখানে সেখানে পাগলের মতো ঘুড়ে বেড়ায়। ছোট বাচ্চারা তাকে রাস্তায় দেখলে পাগল বলে ডাকে,,,সেই অমায়িক ছেলেটি যার কথা শুনে অনেকেই মুগ্ধ হতো,,,যারে নিয়ে অনেক স্বপ্ন বুনতেন বাবা- মা ।।। আজ সে পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।সে কি খাচ্ছে…কোথায় তার কাটতেছে রাত… তার এখন আবাসস্থল রাস্তার পথঘাট…।।।।।
মহির মতো হাজারো পাগল আছে। যাদের একটা পরিচয় ছিলো তারা অনেকের মতো স্বপ্ন দেখছিলো।।। মস্তিষ্কজনিত সমস্যার কারনে তারা বেছে নিয়েছে পথঘাট,,,,,,আমাদের সকলের এ কথা স্বরন করা উচিত আমরা সবাই মানুষ এখানে কালো ধলো সকলেই সমান।