তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নতির ফলে প্রযুক্তি আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। এই তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির ফলে আমাদের জীবনযাত্রা যেমন সহজ হয়েছে তেমনি নানা রকম সমস্যার জন্ম দিয়েছে। বন্ধুরা নিশ্চয় ইতিমধ্যে আপনারা বুঝতে পেরেছেন আমি আজকে আপনাদের সামনে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে আলোচনা করব।
কম্পিউটার, রেডিও টেলিভিশনের পাশাপাশি বিজ্ঞানের নব আবিষ্কার অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন। কম্পিউটার রেডিও কিংবা টেলিভিশন আমাদের যতটা ক্ষতি সাধন করেছে তার চেয়ে অধিক পরিমান ক্ষতি সাধন করেছে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন। বর্তমান আমরা অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের প্রতি এতটাই আসক্ত হয়েছি যে, এটি ছাড়া আমাদের এক মুহূর্ত চলে না। বর্তমানে সবাই আমরা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করি। এর মধ্যে আমরা কিছু মানুষ আছি এর প্রতি এতটাই আসক্ত হয়েছি যে নিজের পরিবার পরিজনদের প্রতি খেয়াল রাখার সময় টুকু পাইনা
বন্ধুরা আপনারা কি ভেবে দেখেছেন আজ থেকে 20 বছর আগে আমাদের পারিবারিক বন্ধন কতটা অটুট ছিল। তখন কিন্তু ফোন বা স্মার্টফোন এর ব্যবহার এতটা ছিল না যতটা এখন। এখন আমাদের প্রত্যেকের হাতে স্মার্টফোন। স্মার্টফোন থেকে কি কোন লাভ হয়েছে? আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে আমি উত্তরে বলব যতটা লাভ হয়েছে তার চেয়েবেশি ক্ষতি হয়েছে। আমার হাতে স্মার্টফোন আছে কিন্তু আমি আমার আত্মীয় স্বজনকে এক মিনিট ফোন দেওয়ার সময় পাই না।সেই আমি অযথা ইউটিউব ফেসবুক এর পিছনে স্মার্ট ফোন দিয়ে দিনের অধিকাংশ সময়ব্যয় করছি।
দৈনিক আমেরিকার একটি জার্নালে প্রকাশিত খবর আমাকে খুবই ব্যথিত করেছে। সেখানে ভিডিও আকারে দেখানো হয়েছে বাবা-মা এবং তাদের দুটি সন্তানকে। দিনের অধিকাংশ সময় ওই বাবা-মা স্মার্টফোনের পিছনে সময় ব্যয় করে। তাদের সন্তানকে একমুঠো ভাত খাওয়ানো কিংবা আদর করার মত সময় তাদের কাছে নেই। ওই বাবা-মা স্মার্টফোনের প্রতি আসক্ত হয়েছে যতটা ততটা আসক্ত হয়নি তার সন্তানের প্রতি। আপনি কি একবার ভেবে দেখেছেন ভবিষ্যতে এই সন্তানের কাছে আপনি কি আশা করবেন? আপনি যে আশা ভরসা নিয়ে সন্তানকে জন্ম দিয়েছেন আপনার সন্তান কি পারবে আপনার আশা পূরণ করতে? আমি উত্তরে বলব না। এর জন্য কে দায়ী? নিশ্চয়ই বাবা-মা।
আপনারা হয়তো ভাবতে পারেন আমি স্মার্টফোনের বিরুদ্ধে। আমি কিন্তু স্মার্টফোনের বিরুদ্ধে নয়। নিশ্চয়ই স্মার্টফোনের পক্ষে। আমরা অবশ্যই স্মার্টফোন ব্যবহার করব কিন্তু খেয়ালরাখব এর প্রতি যেন আসক্ত না হই। আমাদের সমাজে অধিকাংশ লোক আছে যারা স্ত্রী কন্যা, বৃদ্ধ বাবা-মা তাদের প্রতি সময় না দিয়ে স্মার্ট ফোনের পিছনে অযথা সময়ব্যয় করি। আজ কেন বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হচ্ছে? কেন এত পারিবারিক দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে? এর পিছনে অনেক কারণ দায়ী থাকলেও অন্যতম একটি কারণ হিসেবে স্মার্টফোনকে ধরাই যায়।
আমাদের বাবা-মাদের উচিত প্রযুক্তির প্রতি বেশি আকৃষ্ট না হয় সন্তান আত্মীয়-স্বজনদের সময়দেওয়া। তাদের নীতি নৈতিকতাশিখানো। সন্তানের সাথে বন্ধুর সম্পর্ক গড়ে তোলা। বড়দের সম্মান করা ছোটদের স্নেহ করা শেখানো। পাশাপাশি বাস্তব জীবনে সন্তানকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য নিজের সাথে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। আপনি নিজে সালাম দেবেন তাহলে আপনার সন্তান সালাম দেওয়া শিখবে। আপনি রাস্তায় গরিব মিসকিন কিংবা পথ শিশুদের সাহায্য করবেন। তাহলে আপনার সন্তানের মধ্যে সামাজিকীকরণের বিকাশ ঘটবে। শিশুরা সাধারণত অনুকরণপ্রিয়। আপনি যা করবেন আপনার সন্তানও তাই শিখবে। তাহলে আপনাকে আর বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে না।
আমরা যদি সন্তানদের ইসলাম ও নীতি-নৈতিকতার পাশাপাশি প্রযুক্তির সুফল সম্পর্কে ধারণা দেই। সেই সন্তান কখনো খারাপ হবে না। আপনি যদি স্মার্টফোনের প্রতি আসক্ত হন তাহলে অল্প বয়সেই আপনার সন্তান স্মার্টফোন চাইবে। আর আপনার সন্তান স্মার্ট ফোন পেলেই আপনি যা করেছেন সেও তাই করবে। সমাজবিজ্ঞানী কিংবা অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে সন্তান খারাপ হওয়ার পিছনে সবচেয়েবেশি দায়ী হচ্ছে বাবা-মা। কারণ আপনার সন্তান তো একদিনে খারাপ হয়নি। আপনার সন্তান কোথায় কার সাথে মিশে এসকল ব্যপারে আপনার খেয়াল রাখা উচিত। আমি তো বলেছিলাম স্মার্টফোনের কথা। আপনি সময়দিয়েছিলেনস্মার্টফোনের পিছনে আপনার সন্তানের পিছনে নয়। তাহলে তো অপরাধ বিজ্ঞানীদের কথা সত্য।
সবশেষে আমি বলতে চাই আসুন আমরা স্মার্টফোনের প্রতি আসক্ত না হয় নিজের পরিবারের প্রতি আসক্ত হয়ে সন্তান, বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী এদের সময় দেই। তাহলে আমরা হয়তোবা ভবিষ্যতে ফিরে পাব আমাদের পারিবারিক বন্ধন। পরিবারের সবাই হাসি খুশি ভাবে বেড়ে উঠবে। আমার আজকের কন্টেন্টেরশিরোনামঃ আমি যদিঅ্যান্ড্রয়েডস্মার্টফোনহতাম। এই অ্যান্ড্রয়েডস্মার্টফোনহওয়ার চিন্তা কিন্তু আপনার সন্তানদের মধ্যে লুকিয়ে থাকে যখন আপনি স্মার্ট ফোনের পিছনে সময় দেবেন। সন্তান ভাববে আমি যদি স্মার্ট ফোন হতাম তাহলে স্মার্টফোনেরমতো আমার বাবা-মা সব সময় আমাকে সাথে রাখত।
আসুন আমি, আপনি সবাই সন্তানকে স্মার্টফোন হতে না দিয়েআদর্শ মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেই। তাহলে ভবিষ্যতে আপনাকে আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে না। কারণ আজকের সন্তান আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আজকে সন্তানকে নীতি-নৈতিকতাশিখান তাহলে ভবিষ্যতে আপনার সন্তান নিজের দেশ এবং জাতির অহংকার এ পরিণত হবে।
ধন্যবাদ সকলকে,
এসকল নিত্য নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে Grathor.com এর সাথেই থাকুন।