সেদিন মামার কাছ থেকে কথাগুলো শুনে তার অনেক ভালো লাগে। সে এক অদ্ভুদ কল্পনার জগতে ডুবে যায়। তার মধ্যে দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি এক ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। সেই ভালোবাসা তার মনে গভীরভাবে দাগ কাটতে থাকে। তার ছোট্ট মনটায় ধ্বনিত হতে থাকে এদেশের আকাশ বাতাসে ভেসে বেড়ানো সেই মুক্ত পরিবেশের কোলাহল।
তখন থেকে সে প্রতিদিন মামার কাছে মিলিটারিদের সম্পর্কে জানতে আসে। সে ভাষা আন্দোলনসহ বাঙ্গালীদের নানা সাহসীকতার কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে পারে।
এদিকে হঠাৎই গ্রামে এক বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। মানুষ দলে দলে গ্রাম ছেড়ে পালাতে থাকে। তার কারণটা হলো এই, শনিবার রাতে গ্রামের দুইজন লোককে মিলিটারি ধরে নিয়ে হত্যা করে। মিলিটারিদের সন্ধেহ তারা মুক্তিযোদ্ধা। তারপর থেকেই গ্রাম ছেড়ে মানুষ পালাতে থাকে। দলে দলে মানুষের গ্রাম ছেড়ে পালানোর দৃশ্যটা সাকিল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে দেখছিলো। এদের মধ্যে সাকিলের কালু চাচাও ছিলেন। জীর্ণ-শীর্ণ চেহারা। বৃদ্ধ বয়স। যে কেউ দেখলে তার মায়ার পড়ে যাবে। চেহারাটা খুব মায়াবী। তিনি গ্রামের বাজারের একজন ভিক্ষুক। সাকিলকে খুব আদর করেন। সাকিল ওনাকে এই ভিড়ের মাঝে দেখে এগিয়ে যায়।
– কালু চাচা তুমি কোথায় যাচ্ছ?
– কোথায় আর যাবো বাবা, এই বয়সে কোথাও যাওয়ার জোর আছে? আমার যাওয়ার কোনো ঠিকানা নেই। যেখানে দু চোখ যায় সেদিকেই যাচ্ছি।
– কি বলো, তোমাকে ওরা কি করবে?
সাকিলের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে কালু চাচা প্রশ্ন করে-
– সাকিল তুই কোথাও যাবি না?
– না, আমি কোথাও যাব না। আমি যুদ্ধ করবো।
সাকিলের মুখে এ কথা শুনে কালু চাচার মুখে ভেসে উঠে কৃতঙ্গতার হাসি। সেদিন সাকিলের মাথায় হাত বুলিয়ে তিনি চললেন আপন গন্তব্যে।
সেদিন থেকেই সাকিল গ্রামে গ্রামে নিজেকে যোদ্ধা বলে বেড়ায়। “আমি যোদ্ধা, আমি যোদ্ধা” ধ্বনিতে গ্রামের আকাশ বাতাস ধ্বনিত হয়। গ্রামের মানুষ তার ধ্বনিতে আশা খুজে পায়।
কিন্তু কিছুদিন পরেই হঠাৎ যেন গ্রামটি নিঃস্তব্ধ হয়ে যায়। “আমি যোদ্ধা, আমি যোদ্ধা” বলে কেউ আর চিৎকার করে না। গ্রামটি যেন অপরিচিত কোনো গন্তব্যে চলে গেল।
ভালোবাসি মা তোমার প্রিয় জন্মভূমি,
ভালোবাসি তোমার সোহাগে ভরা, মায়াবী আচলখানি।
তোমার হাসিটুকু রক্ষা করতে মা,
বাংলার সাহসী যুবক ছেলেরা
তাজা রক্ত ঢেলে দিতে দ্বিধা করবে না।
শুধু মা তোমার হাসিটুকু দেখতে ব্যাকুল,
অতৃপ্ত আত্মাখানি
ভালোবাসি মা অনেক ভালোবাসি,
তোমার আচলখানি।
তোমাকে ভালোবেসে যারা রক্তগঙ্গায় ভাসিয়েছে স্রোতধারা,
স্যালুট তাদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্বরণ,
তোমাদের আত্মত্যাগে আমাদের সূচনা,
তোমাদের আমরা কবু ভুলে যাবো না।
স্বরণে রবে তোমাদের আত্মত্যাগের কথা।
প্রতিটি অন্তরের গভীর