লজ্জাবতী এক আশ্চর্য গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এর সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হলো এর স্পর্শকাতরতা। সামান্য একটু ছোঁয়া লাগলেই এর পাতা বন্ধ হয়ে যায়। লজ্জাবতীর পাতাগুলো তেঁতুলপাতার মতো চিরল চিরল। পাতার ডাটের গোড়ায় ফাঁপা জায়গায় পানি থাকে বলে সামান্য একটু ছোঁয়া পেলেই ডাটের গোড়া থেকে পানি নিচের কাণ্ডে সরে যায়। আবার নির্দিষ্ট একটি বিরতিতে পানি জমা হলে পাতা আবার সোজা হয়ে যায়।
লজ্জাবতীর জন্মস্থান আমেরিকার মেক্সিকোতে হলেও বর্তমানে এটি সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দেশের প্রায় সর্বত্রই এই লজ্জাবতী দেখা যায়। গ্রামীণ পথের দু’ধারে ঘাস ও ঝোপের সাথে বিক্ষিপ্তভাবে প্রচুর লজ্জাবতী গাছ দেখা যায়। গ্রামীণ জনপদে লজ্জাবতী গাছের ভেষজ হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।
লজ্জাবতীর ফুল, পাতা, কাণ্ড ও মূলে প্রচুর পরিমাণে অ্যালকালয়েড থাকে। লিগুমিনাসি গোত্রের এই গুল্মের পাতা ও মূলে ট্যানিন, এড্রিনালিন, টিউগুরিনসসহ অনেক রাসায়নিক পদার্থ থাকে। ঐ সব রাসায়নিক পদার্থ মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপযোগী ও উপকারী। ফলে দাঁতের ক্ষতের চিকিৎসায় লজ্জাবতীর পাতার রস ব্যবহৃত হয়। লজ্জাবতীর মূলের রস গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে পুরনো আমাশয় দূর হয়। সেক্ষেত্রে দশ গ্রাম পরিমাণ লজ্জাবতীর মূল পিষে পানিসহ গরম করেও খাওয়া যেতে পারে।
ঘামের দুর্গন্ধ এবং শার্টের বগলের নিচে হলুদ দাগ দূর করতে লজ্জাবতীর ফুল, পাতা, কাণ্ড ও মূলের রসের কোনো বিকল্প নেই। অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভূগে থাকে। এই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্ত হতে চাইলে সাত আট গ্রাম পরিমাণ শেকড়ের রস তিন কাপ পানিতে সিদ্ধ করে তিনবেলা খাওয়ার পরে খেতে হবে।
অনেকে অর্শের ও ভগন্দরের সমস্যার কারণে মলত্যাগ করতে অনেক কষ্ট পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে সাদা লজ্জাবতীর মূল পিষে পানিসহ গরম করে চৌদ্দদিন খেতে হবে। তাহলে অর্শের ও ভগন্দরের সমস্যার অনেক উপশম হবে। সাদা লজ্জাবতীর মূল যৌন রোগের মহৌষধ। পুরুষদের যৌনাকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করতে সাদা লজ্জাবতীর মূলের কোনো জুড়ি নেই। শুধু তাই নয়, সাদা লজ্জাবতীর মূল অত্যন্ত বলবর্ধক ও প্রশান্তিদায়ক।
সে কারণেই প্রাচীনকাল থেকেই হেকিম ও কবিরাজগণ সাদা লজ্জাবতীর মূল বলবর্ধক ও প্রশান্তিদায়ক হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। সাদা লজ্জাবতীর বিচির তেল অত্যন্ত যৌন উত্তেজক ও বলবর্ধক। বিশেষ করে এই তেল পুরুষদের বিশেষ অঙ্গকে সবল ও সুদৃঢ় করে। যৌন আকাঙ্খা তীব্র ও প্রলম্বিত করে।
আশ্চর্য লজ্জাবতীর বিস্ময়কর উপকারিতার শেষ নেই। নারীদের সন্তান প্রসবের নানারকম জটিলতা দূর করে সাদা ও লাল লজ্জাবতী দুটোই। তবে খাওয়ার জন্য লাল এবং যৌনাঙ্গে সাদা লজ্জাবতীর শেকড়ের নির্যাস ব্যবহার করাই উত্তম। সন্তান প্রসবের পর জরায়ু এবং যোনীপথের নানা বিচ্যুতির জন্য সাদা লজ্জাবতীর বিচির তেল অত্যন্ত উপযোগী ও উপকারী।
এক্ষেত্রে লজ্জাবতীর বিচির তেল চামচে নিয়ে আগুনের আঁচে কুসুম কুসুম গরম করে সেই তেল এক মাস নিয়মিত ব্যবহার করলে উপশম হবে। শিশুদের কফ-কাশি-সর্দি-জ্বরে লজ্জাবতীর শেকড়ের রস অনেক উপকারী। বয়োঃবৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট এবং কাশিতেও লজ্জাবতীর মূল অনেক কার্যকরী। লজ্জাবতীর গুণের কোনো শেষ নেই। লজ্জাবতী আসলে একটি বিস্ময়কর ম্যাজিক গুল্ম।
সাফিকা শাহরিন হক। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।