আসছে Super fast কোয়ান্টাম কম্পিউটার!
কি শিরোনাম পড়ে কি চমকে গেল? মোটেও চমকাবেন না। কারণ আর হয়তো বছর দশকের মধ্যেই আসছে এক সত্যিকারের সুপার ফাস্ট কমম্পিউটার। যা বর্তমান সময়ের যেকোন কমম্পিউটারের তুলনায় পাচ ছয় গুন বেশী দ্রুত যেকোন জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারবে এক তুড়িতেই।এই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করবে ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম জগৎ।
কম্পিউটার দেখতে কেমন? সাধারণত ডেস্কটপ কম্পিউটারে চৌকোনা বাক্সের সিপিইউ থাকে। থাকে মনিটর-মাউস। কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরা এমন এক কম্পিউটার তৈরি করতে ঘাম ঝরাচ্ছেন, যা দেখতে হবে অনেকটা উল্টো কেকের মতো! চার-পাঁচ স্তরের কেক উল্টো করে ঝুলিয়ে দিলে যেমন হয়, ঠিক সেরকমের। থাকবে অনেক ধাতব সিলিন্ডার ও প্যাঁচানো তার। আর সবকিছুর নিচে থাকবে ছোট একটি চিপ। কিম্ভূতকিমাকার এই জিনিসকেই বলা হচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই কম্পিউটার বদলে দেবে পুরো প্রযুক্তিদুনিয়াকে!
এখনকার কম্পিউটার ব্যবস্থার থেকে সম্পূর্ণ নতুন এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার। যেসব গাণিতিক সমস্যা মানুষতো দূরে থাক, হালের সুপার কম্পিউটারের করতেও বছরের পর বছর লাগে, সেসব সমস্যা এক নিমিষেই সমাধান করতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। নতুন নতুন ওষুধ ও পদার্থ আবিষ্কারেও আসবে বৈপ্লবিক গতি। এক কথায় কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রযুক্তিবিশ্বে এক নতুন যুগের সূচনা করবে। পুরো কম্পিউটার ব্যবস্থাই বদলে যাবে।
আবার কোয়ান্টাম কম্পিউটারের অসুবিধাও অনেক। বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুরো বিশ্ব মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত জীবনের ছোট ছোট অনুভূতি প্রকাশ করা থেকে শুরু করে ব্যাংকের সব কাজও নির্ভরশীল ইন্টারনেট এর ওপর। বর্তমানের এই ইন্টারনেট ব্যবস্থা কিছু নির্দিষ্ট এনক্রিপশন অনুসরণ করে। ক্রিপ্টোগ্রাফি বা সংকেত লিখন পদ্ধতি ব্যবহার করে এসব এনক্রিপশন তৈরি হয়। এনক্রিপটেড থাকার কারণে ইন্টারনেট ব্যবহার নিরাপদ থাকে এবং ব্যবহারকারীর তথ্য হ্যাক হওয়া প্রতিরোধ করে। সমস্যা হলো, ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম কম্পিউটার হালের ইন্টারনেট এনক্রিপশনের যমে পরিণত হবে। এক নিমিষেই বর্তমানের ইন্টারনেট ক্রিপ্টোগ্রাফি হ্যাক করতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। তাই কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রযুক্তি যদি অসৎ হ্যাকারের হাতে পড়ে, তবে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর তথ্য ঝুঁকিতে পড়ে যাবে! এমনকি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিরাপদ থাকবে না। গোপন গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা তথ্যও আর গোপন রইবে না।
গবেষকদের মতে এ কম্পিউটারটি তৈরি করতে খরচ পড়বে ১০ থেকে ২০ লাখ পাউন্ড। তবে বাস্তব জগতে ব্যবহারিক কাজের জন্যে এরকম একটি যন্ত্র তৈরিতে খরচ পড়বে তারচেয়েও বেশি।আর কোয়ান্টাম কম্পিউটার–সংক্রান্ত গবেষণায় সবচেয়ে বেশি হুড়োহুড়ি করছে আমেরিকা, রাশিয়া, ইংল্যান্ড ও চায়না। কিন্তু তার চেয়েও বেশী হুড়োহুড়ি করছে গুগল, আইবিএম, মাইক্রোসফটসহ নানা টেক জায়ান্ট। কারণ খুবই স্পষ্ট। যে প্রতিষ্ঠান এই প্রতিযোগিতায় জিতবে অর্থাৎ প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করতে পারবে, সেই প্রতিষ্ঠানই নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবসায় একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এটি অনেকটা জ্যাকপট জেতার মতো! তাই দেদার খরচ হচ্ছে কোয়ান্টাম গবেষণায়।
আজকে এই পর্যন্তই বন্ধুরা। আমার লেখার মধ্যে যদি কোন ভুলভ্রান্তি থেকে থাকে তবে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি। আগামীতে আরও ভালো লেখা চেষ্টা করবো। ধ্যনবাদ সবাইকে।