আমদের বর্তমান সময়ে ‘ইগো’ একটি পরিচিত শব্দ। যদিও এর অনেক অর্থ হতে পারে তবে এটি বলতে আত্মঅহংকার বুঝায়।যেসব মানুষের খুব বেশি ইগো রয়েছে তারা কখনো শান্তিতে থাকতে পারে না।জীবনে এগুতে সমস্যা হয়।শিল্পী মেরিনা আব্রামোভিচ বলেছেন যে মুহুর্তে আমরা আমাদের নিজস্ব মহত্ত্বে বিশ্বাস করতে শুরু করি, আমরা সত্যিকারের সৃজনশীল হওয়ার ক্ষমতাকে নষ্ট করি। তাহলে কীভাবে আমরা এই বিষাক্ত ইগো এবং স্বার্থপরতা দূরে রাখব? কীভাবে আমরা ইগোকে “মাধ্যাকর্ষণ আইনের মতো আমাদেরকে চুষে ফেলা থেকে” আটকাতে পারি? প্রাথমিক উত্তর সহজ: সচেতনতা। তবে তার পরে, এটি কঠোর পরিশ্রমের বিষয়। । এই বিষাক্ত ইগো দূর করার কিছু উপায় রয়েছে।নিচে সেগুলো আলোচনা করা হল।
১. শিক্ষার্থিদের মানসিকতা গ্রহণ করুন
এপিক্টেটাস বলেছেন যে তাকে শেখানো অসম্ভব যে মনে করে সে জানে।যখন আমরা ইগোকে আমাদের বলতে দেই যে আমরা পৌঁছে গেছি এবং সবকিছু করে ফেলেছি, এটি আমাদের এগুতে বাধা দেয়। আপনি যে বিষয়ে কিছুই জানেন না এমন একটি বিষয়ের উপর একটি বই নিন।একটি লাইব্রেরি বা একটি বইয়ের দোকান দিয়ে হাঁটুন – আপনি কতটা জানেন না তা মনে করিয়ে দিন।
২. প্রচেষ্টার উপর ফোকাস করুন – ফলাফল নয়
আমরা প্রচেষ্টা করার পুর্বে আগে ফলাফল নিয়ে বেশি ভাবি।ভাবনাটা অনেকটা এরকম এটা করে আমার আসলে কি লাভ।সাফল্য আপনাকে করে তুলতে পারে তিব্র অহংকারি যদিও দেখা যাবে আপানার চেয়ে অনেক বড় কেউ অনেক সাফল্য অর্জন করছে স্বাভাবিক ভাবে।আপনার নিজের সর্বচ্চ প্রচেষ্টা করাই গুরুত্বপূর্ণ।বাহ্যিক পুরস্কার অর্থাৎ সাফল্য তেমন একটা বিষয় না।
৩. আবেগের উপর উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দিন
আবেগ উত্তপ্ত হয় এবং জ্বলে যায়। উদ্দেশ্যযুক্ত লোকেরা এটিকে যুক্তির সাথে মিলিত করে নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রিস্টোফার ম্যাকক্যান্ডলেস আবেগপ্রবণ হয়ে বনে গিয়েছিলেন কিন্তু সেটার ফলাফল ভাল হয় নি, তাই না? গণিতবিদ জন ন্যাশ ছিলেন আবেগপ্রবণ কিন্তু তিনি উদ্দশ্যকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন।স্বচ্ছ উদ্দেশ্য থাকলে ভালো।আবেগ দিয়ে পৃথিবী চলতে পারে না।
৪. কথা বলার স্বাচ্ছন্দ্য এড়িয়ে চলুন এবং কাজের মুখোমুখি হন
অতিরিক্ত কথা বলার মাধ্যমে অন্যের কাছে নিজেকে প্রকাশ করার প্রবণতা কমিয়ে দেখতে পারেন। যদিও প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলার মাধ্যমে স্যোসাল মিডিয়ায় ফেইক আকর্ষণ তৈরি করা খুব মজা দায়ক মনে হতে পারে। তবে মিথ্যা আত্মতৃপ্তি আরো বেশি ক্ষতিকর।সবচেয়ে বেশি ভালো হয় যদি আপনি লোক দেখানোর প্রবণতা কমিয়ে দেন।
৫. নিজকে হারানোর আগে অহংকারবোধ দূর করুন
সিরিল কনোলি লিখেছেন, “দেবতারা যাদের ধ্বংস করতে চান, তারা প্রথমে প্রতিশ্রুতিশীল বলে।” তেমনি মন আপানাকে ধ্বংস করার আগে আপানকে অহংকারী করে তুলবে।প্রাথমিক অহংকার যেন আপনাকে বিপথে নিয়ে যেতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনাকে প্রতিদিন নিজেকে মনে করিয়ে দিতে হবে যে কত কাজ বাকি আছে, আপনি কতটা করেছেন তা বিষয় নয়। আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে নম্রতা হল অহংকারের প্রতিষেধক।
৬. নিজেকে মহৎ ভাবা বন্ধ করুন- মহৎ ব্যক্তিরা নিজেকে মহৎ ভাবে না
আমারা অনেকে নিজেক খুব বেশি মহৎ ভাবি এবং নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি।একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। একজন নারী বিপদে পরলে সবাই খুব দ্রুত এগিয়ে যেতে পছন্দ করি।কারণ এখানে মহত্তের পরিচয় দেয়া খুব সহজ।প্রকৃত মহৎ ব্যক্তিদের সাধারণত তেমন চোখে পরে না।তারা লোক দেখাতে পছন্দ করে না।
৭. অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দূর করুন- এটি ইগো সৃষ্টির প্রধান কারণ
আপনি যখন কোন ধরণের সাফল্য অর্জন করেন তখন আপনি ভাবতে পারেন যে ভবিষ্যতে সাফল্য গল্পের স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত । এটি ব্যর্থতার একটি সরল পথ।এটি আপনাকে খুব বেশি উদাসীন এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস নিজেকে মনে করিয়ে দেন যে তার বিলিয়ন ডলারের বেহেমথের জন্য “কোনও সুখের মুহূর্ত” ছিল না, সে পত্রিকায় যাই পড়ুক না কেন। বর্তমান মুহুর্তে ফোকাস করুন, গল্প নয়।
৮. নিজেকে এবং অন্যদের পরিচালনা করতে শিখুন
জন ডিলোরিয়ান একজন উজ্জ্বল প্রকৌশলী ছিলেন কিন্তু একজন ব্যর্থ ব্যবস্থাপক (মানুষ এবং নিজের)। একজন নির্বাহী তার পরিচালনার শৈলীকে “রঙিন বেলুন তাড়া করা” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি ক্রমাগত বিভ্রান্ত ছিলেন এবং একটি প্রকল্প অন্যটির জন্য ত্যাগ করেছিলেন। স্মার্ট বা সঠিক বা প্রতিভাবান হওয়াই যথেষ্ট নয়। ইগো আপানাকে অন্যদের সাথে কথা বলার ইচ্ছা দূর করে দিতে পারে।যেমন আপনি নিচু পর্যায়ের কর্মচারীর সাথে কথা নাও বলতে পারেন সম্মান চলে যাওয়ার ভয়ে। তখন আপনার প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হবে।