Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

একজন বেকার যুবকের আত্মকাহিনী।

রাফি আমার রুমমেট। যদিও ও আমার বড়ো বাট আমাদের বন্ধুত্বের গভীরতা অনেক। সেজন্য ওকে নাম ধরেই ডাকি। রাফি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে চাকরির জন্য চেষ্টা করতেছে, পাশাপাশি মাস্টার্স পড়তেছে। ওদিকে আমি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

 

বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যই আমার ঢাকা আসা। ছাত্র হিসেবে  যথেষ্ট মেধাবী, কিস্তু তারপরও কেনো যানি ওর চাকরিটা হচ্ছিলই না। প্রত্যকটা চাকরির পরিক্ষায় উত্তির্ন হতো, ভাইবাতেও টিকতো তারপরও ওর চাকরি হতোনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম ও পড়ার টেবিলে। ভর্সিটি থেকে এসে দেখতাম ও বই পড়ছে। কোচিং থেকে এসেও দেখি ও বই নিয়ে বসে আছে।

এককথায়  ও সারাদিনই বইয়ের কাছে থাকতো।  খুব কম সময়ই ছিলো ওকে বই ছাড়া আমি দেখেছি।  অনেক রাত জেগে পড়াশোনা করতো। মাঝেমাঝে আমার ঘুমে সমস্যাও হতো।  কিন্তু ওকে কিছু বলতাম না, বুঝতেও দিতাম না।  কেননা, চাকরিটা ওর ভিষণ দরকার ছিল।

ওর বাবা একজন কৃষক ছিলেন।  কয়েকমাস যাবত সে প্যারালাইস হয়ে ঘরে শোয়া। রাফির ছোট তিন বোন ও এক ভাই আছে। একবোন কে কোনোমতে বিয়ে দিয়েছে। বাকি দুজনও বিবাহ উপযুক্ত। ছোট ভাই ক্লাস এইটে পড়ে। সবমিলিয়ে বড় সন্তান হিসেবে ওর কাধে অনেক দায়িত্ব। টিউশন করে নিজের খরচ দিয়ে অল্পকিছু বাড়িতে পাঠাতে পারে।  অভাবের দায়ে রাফির মা মানুষের বাসায় কাজ করে।  সেখান থেকে যা পায় তা মিলিয়ে কোনো রকম দিন কাটে ওদের।

রাফি যতোবারই চাকরির পরিক্ষা দিয়েছে, রুমে এসে কনফিডেন্সের সাথে আমাকে বলতো এবার চাকরি টা আমার হয়েই যাবে।  কিন্তু যখন রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং রাফির নাম না আসে তখন ওর চেহারাটা মলিন হয়ে যায়।  কান্না জরিত কন্ঠে বলে শাকিল, বিশ্বাস কর আমার সবগুলো উত্তর সঠিক হয়েছে।   আমি লিখে দিচ্ছি তুই মিলিয়ে দেখ ।  প্রায় পাগলের মতো বিলাপ করতে করতে উত্তরপত্র আমার হাতে তুলে দেয়।

কয়েকদিন যাবতই লক্ষ্য করছি, রাফি অন্যমনস্ক হয়ে বসে থাকে। কোন কাজেই যেন ওর মন বসেনা।  জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলেনা। অনেক জোরাজোরির পর জানতে পারলাম    ওর সদ্যবিবাহিত বোনের শ্বশুর বাড়ি থেকে যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছে। সবকিছু ওর চোখের   সামনেই ঘটতেছে, অথচ ও কিছুই করতে পারছেনা।

রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটা, রাফির ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো।  ও কান্না জরিত কন্ঠে কাকুতি করে আমার কাছে টাকা ধার চাইলো।  যেহেতু মাস শেষ হয়নি, ওর টিউশনির টাকা পায়নি।  হঠাৎ করে নাকি ওর বাবার অসুস্থতা বেড়ে গেছে। আমার কাছে ১৭০০ টাকা ছিলো, আরও ৩০০ টাকা মেনেজ করে ওর হাতে দুই হাজার টাকা দিলাম।

সকালে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো।  যাওয়ার সময় আমাকে জরিয়ে ধরে প্রচুর কান্না করলো।  মনে হচ্ছে ওর কোন প্রিয়জন হারিয়ে গেছে। কোনোমতে ওকে সামলিয়ে, স্টেশনের উদ্দেশ্য রওনা হলাম। কেন যানি বুকের টা হাহাকার করতেছে।  রুমে ফিরে দেখি আব্বুর নামবার থেকে অনেকগুলো কল আসছে। ফোন চার্জে রেখে স্টেশনে গেছিলাম। বড়মামা নাকি স্টোক করছে। ওই মুহূর্তে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলাম।  গাড়িতে উঠে রাফিকে এসএমএস করে জানিয়ে দিলাম। ফোনে বলার মতো অবস্থাতে আমি ছিলাম না।

চারদিন আইসিইউ তে থাকার পর   মামা মারা গেল।  এক সপ্তাহ যেন ঘোরের ভিতর চলে গেল। রাফিকে কল দিয়ে পেলাম না। এতোদিনে ওর রুমে চলে আসার কথা।  মন কে শান্তনা দিলাম, হয়তো ও ব্যস্ত আছে বা মন খারাপ।

সন্ধ্যার পরে আরেক রুমমেটের   কল আসে।  দুই মিনিট কান্না করার পর কোনোমতে জানালো, রাফি আর আমাদের মাঝে নেই। কথাটা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। কাউকে না বলে ওই অবস্থা তেই ঢাকা চলে আসলাম। ততক্ষণে ওর লাশ মর্গে নিয়ে গেছে। রুমে ঢুকে ওর বিছানার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।  মনেই হচ্ছেনা, রাফি আর দুনিয়াতে নেই।

ওর বালিশটা বুকেে চেপে ধরে কান্না করতেছি, হঠাৎ নজর পড়লো বিছানায় পড়ে থাকা একটা  সাদা খামের ওপর। খামের ভিতর কিছু টাকা এবং একটা চিঠি। চিঠি টা ছিল আমার উদ্দেশ্যে লিখা।

চিঠি পরে জানতে পারলাম,  যৌতুকের জন্য অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ওর বোন সুইসাইড করে। বোনের মৃত্যুর জন্য ওর পরিবারসহ আত্মীয়স্বজনরা সবাই ওকে দোষারুপ  করছে। বাবা অসুস্থ, বোনদের বিয়ে দিতে পারছেনা। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেও বেকার।  এতো ভালো পারিক্ষা দিয়েও চাকরি না পাওয়া, সবকিছু মিলিয়ে অনেক হতাশায় ভুগছে। তাই ও সিদ্ধান্ত নিলো সুইসাইড করবে, অবশেষে তাই হলো।

আমাদের সমাজে এরকম অসংখ্য বেকার রাফি আছে এবং অনেক রাফি হতাশ হয়ে জীবন শুরু করার আগেই এভাবেই ঝরে পড়ছে। মৃত্যু কোনো সমস্যার সঠিক সমাধান হতে পারে না।   মানুষের জিবনে সমস্যা থাকবেই, সেই সমস্যা কে মোকাবেলা করে  সামনে এগিয়ে যাওয়ার নামই হচ্ছে জিবন।

 

Related Posts

10 Comments

  1. প্রতিদিন আমাদের চারপাশে এমন শত রাফি ঘুরে বেড়ায়,তাদের মাথায় কত বিরাট বোঝা তা উপলব্ধি ক্ষমতা আমাদের নেই,আফসোস।

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No