Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

একটি অশ্বত্থ বট গাছের দুঃখে ভরা জীবন

হে ক্লান্ত প্রথিক কে তুমি? এসেছো আমার কাছে জানতে, কেন আমি এখানে যুগ যুগ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। ইতিপূর্বে কেউ তো জানতে চায়নি আমার সম্পর্কে, মনে হয় তুমি খুব উৎসুক আমার সম্পর্কে জানতে। শুনবে তবে আমার কথা? বস, বস আমার পাশে, শোন আমার জীবনের গল্প। আমি সেই গাছ যার কাছে আসে মাঠের শত শত কৃষক, দেশ দেশান্তর থেকে আসা পথ চলা ক্লান্ত পথিক একটু বিশ্রামর জন্য। আমি সেই গাছ যার উপর বসে বিশ্রাম করে হাজারো ক্লান্ত পাখি। আমি সেই গাছ যে অবিরাম ছায়া দেই প্রকৃতির প্রাণিকুলকে। এভাবেই আমি যুগ যুগ ধরে প্রকৃতির উপকার করে আসছি কখনো বা রোদে আবার কখনো বা বৃষ্টিতে। বয়স আমার কম নয়। যুগ যুগান্তের সাক্ষী আমি। আমি দেখেছি পঞ্চাশের মন্বন্তর দেখেছি ভাষা আন্দোলন শহীদদের বুক চেরা রক্ত আমি দেখেছি বঙ্গ বঙ্গ দেখেছি বর্বর পাক-বাহিনীর হত্যা কান্ড। এভাবেই যুগে যুগে ঘটে যাওয়া হাজারো ঘটনার সাক্ষী আমি।

কিভাবে কোথায় কবে আমার জন্ম হয়েছিল তা আমি বলতে পারি না। হয়তো বা কোন পাখি তার বিষ্ঠা ত্যাগ করেছিল এখানে, সেখান থেকেই আমার জন্ম। হয়তো কোন নিষ্ঠাবান ব্যাক্তি আমাকে এই খোলা মাঠের মাঝখানে এনে রোপন করেছিল বা অন্য কোন মাধ্যমে। আমার সে কথা সঠিক মনে নেই কারণ আমি ছিলাম তখন সদ্য শিশু। তখন থেকে আস্তে আস্তে বড় হই আমি অনেক বিপদ-আপদ এর মধ্য দিয়ে। এখন আমার বয়স প্রায় পাঁচশো বছর। দেখ আমি বুড়ো হয়েছি কিন্তু এখনো মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। যখন বসন্তের হাওয়া লাগে আমার গায়ে তখন আমার ডাল পালা কান্ড শাখা প্রশাখায় ফুল আসে, ডালে ডালে নতুন পাতায় ভরে যায়। তখন মনে হয় যৌবন যেন আবার আমার ফিরে এসেছে। এক পর্যায়ে আমার ফুল থেকে সুন্দর সুন্দর ফল হয়। যখন ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত পাখি গুলো আমার ডালে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। তখন আমার সুন্দর সুন্দর ফল ও সুশীতল ছায়া দিয়ে আমি তাদের সেবা করি। কত যে ক্লান্ত পথিক আমার ছায়াতে বসে তাদের ক্লান্তি দূর করেছে তার হিসাব করা কঠিন। এক দিনের কথা মনে পড়ে গেল- একদিন ক্লান্ত দুই রাখার বন্ধু তাদের গরু গুলোকে আমার ছায়াতে বেধে তাদের ক্লান্তি দূর করতে আমার পাশে বসল; আমি মৃদু দুলতে দুলতে তাদের বাতাস করছিলাম। এমন সময় এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বলল, ‘দেখ, এত বড় গাছটি কিন্তু ফলটি এত ছোট।’ আমি তখন রসিকতা করে ঐ বন্ধুটির মাথায় একটা ফল ফেললাম। অন্য বন্ধুটি তখন হেসে উঠে বলল, দেখ বিধাতার সৃষ্টি, বড় ফল হলে আজ কী তোর রক্ষা ছিল।

আমার এই দীর্ঘ জীবনে অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী হয়েছি। একদিন ক্লান্ত এক কৃষক মাঠের কাজ শেষে বিশ্রাম করার জন্য আমার তলায় গামছা পেতে ঘুমাচ্ছিল। সেই সময় আমার এক কুটিরে বাস করত ভয়ানক বিষধর এক সাপ। সে কোটর থেকে বেরিয়ে এসে কৃষক কে দংশন করল। আমি তো অনড়, তাই আমার কিছুই করার ছিল না। সুতরাং নিশ্চুপ হয়ে আমি সব সহ্য করেছি। এ ঘটনার পরের দিনই কৃষকেরা আমার সেই কোটরে আগুন লাগিয়ে সাপটিকে পুড়িয়ে মেরেছিল। আমার কিছুটা কষ্ট হলেও আমি খুশি হয়েছিলাম, কারণ এই দুষ্টু সাপটি পরবর্তীতে অন্য কাউকে দংশন করতে পারত।

সবচেয়ে করুণ ঘটনা ঘটেছিল পঞ্চাশের মন্বন্তর। সেই বছরের কথা মনে হলে আমার ডালের পাতা গুলো শক্ত হয়ে যায়। কত মানুষ আমার পাশে বসে পানি পানি করে মরেছে। খাবারের অভাবে খেতে না পেরে এভাবে মানুষ মরতে আমি কখনো দেখিনি। হৃদয়টাকে পাষাণ করে আমি এসব দেখেছি। কারণ আমি তো অনড়, চলতে পারি না মনের কথা গুলোও মুখে এনে বলতে পারি না।

আর একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা মনে পড়ছে। তখন ছিল আমার যৌবনকাল। চারিদিকে সবুজ ঘন ডালপালা প্রসারিত করে মাঠের বুকে দাড়িয়ে আছি। একদিন মধ্যরাতে কোন এক মানুষের স্পর্শে আমার ঘুম ভেঙে গেল, আমি মানুষটিকে চিনতে পারলাম। সে ছিল আমাদের গ্রামের পশ্চিম দিকের বাসিন্দা, তার নাম রফিক চাচা। আজকে গোধূলি বেলায় একবার সে আমাকে দেখা গেছে। কাশিমপুর প্রাইমারি বালিকা বিদ্যালয়ের কেরানি রফিক চাচার জীবন দুঃখের জীবন, সামান্য বেতন দশজন পোষ্য। এতদিন খুব কষ্টে রফিক চাচা তার পরিবারের মুখে অন্ন দিয়ে আসছে, কিন্তু আজ সে একান্তই অক্ষম। তাই সে আজ আমার কাছে দড়ি নিয়ে এসেছে, কেন জানো? সে আমার কাছে এসেছে পরম শান্তি মৃত্যুর খোঁজে। কিন্তু কী করব, আমি তো অনড় সাথে কথাও বলতে পারি না যে বলব, ও রফিক চাচা চাচাগো তুমি এমন ভুল কাজ করো না। কিন্তু কি করবো আমার কিছু করার উপায় নেই। ঝুলে পড়ল রাফিক চাচা, আমার একটি ডালে সেই দড়ির সাথে। মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ। একবার ভেবেছি বিধাতা আমার কেন মরণ দেয়না। এসব আমার আর সহ্য হয় না।

আমার সবচেয়ে আনন্দের দিন পহেলা বৈশাখের দিন। সেদিন আমার তলায় গ্রামবাসী উৎসবের আয়োজন করে। সবাই হই হুল্ল করে মজা করে। তাদের হাসি মুখ দেখে আমার প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। আমি সারাটা বছর ধরে সেই দিনটির অপেক্ষায় থাকি, সেই দিনটি কবে আসবে। যে সময় সে দিনটি আসে, নীরব জীবনযাত্রা তখন সচল হয়ে ওঠে।

Related Posts

26 Comments

  1. ব্রডব্যান্ড রাউটারে পিং এবং স্পিড সমস্যার সমাধান। https://grathor.com/%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a1%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a1-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%89%e0%a6%9f%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%aa%e0%a6%bf%e0%a6%82/

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No