একদিন অনন্যার চুলের ঘ্রান পাগল করতো রকিব জমাদ্দারের। অনন্যারও রকিব জমাদ্দারের শরীরের ঘ্রান মাতম তুলতো দেহে- মনে। ধীরে ধীরে দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা হয়ে গেলো তারা। মাঝখানে বিরান সমুদ্র। ধু ধু মাঠ। তপ্ত বালুকা বেলা। সময় গড়িয়ে যায়- জলও গড়ায়। পাশের ফ্লাটের নির্জনতা অনন্যাকে খুব কাছে ডাকে।
গ্রীলের ওপারে যার বাস- হাত বাড়ালেই যাকে ছোঁয়া যায় তার লোমশ বুকে আতরের ঘ্রানে অনন্যা ডুব দেয় তার অস্থি- মজ্জা আর শিরা – উপশিরায়।
বিত্ত – বৈভবের নেশায় বুদ হয়ে যাওয়া অনন্যা একসময় শরীরের স্বাদ বোঝে। ভালবাসা তখন তার কাছে ক্ষিধে পেলে ছিড়ে ছিড়ে রুটি খাবার মতো অবস্থা।
রাকিব জমাদ্দার সব জেনেও চুপ করে থাকে। সব বুঝেও নিজের কোন এক অক্ষমতায় রাতভর কাঁদতে কাঁদতে ঘুমোয়। শরীরটা তার অবশ হয়ে আসে। আর ওদিকে পাশের রুমে শুয়ে শুয়ে অনন্যা ফানুস উড়ায়।
রাকিব জমাদ্দার একসময় হেরে যায় অনন্যার কাছে। হেরে যায় মোহের কাছে- লাল নীল স্বপ্নের কাছে। দামী ফ্লাটের কাছেও হেরে যায়।
হেরে যেতে হয় যৌবনের কাছেও। অনন্যার মেদবহুল শরীরটা তখন এক অগ্নি। চোখের নিমিশে কত শত চোখ স্বপ্ন বোনে জীবন সারথীর। কেউ গল্প আঁকে- কেউ কবিতা আঁকে মনের দরজায়।
একসময় রাকিব জমাদ্দারকে ছেড়ে চলে যায়। তিনশ টাকার নোটারীর কাগজে নাম লিখে দেয়। নামটা জ্বলজ্বল করে সোনার হরফে। অনন্যার চারপাশে থাকে রবি- সোম- মঙ্গল এবং বৃহস্পতি। রাকিব জমাদ্দার ছিলো বুধ। অমঙ্গল দিন। হৃদপিন্ডের ঠিক শেষ দিকে নিশ্চিন্তপুরের ছেলে মানিক ছিলো অনন্যার সবটা দখলে। রাকিব জমাদ্দার জানতো সব। জানতো বলে তার ভেতরে তেমন আক্ষেপ ছিলোনা। একটু আধটু ঐ বয়সে থাকতে পারে বৈকি।
অনন্যার এখন অফুরন্ত সময়। লাল- নীল আলোতে- শহরের রঙ্গীন মানুষের সাথে মিশতে মিশতে রাকিব জমাদ্দারেরর চেহারাও ভুলে গেলো।
অনন্যা এখন নায়িকা। দামী আর জনপ্রিয় নায়িকা।তার ছবিতে দর্শক সিনেমা হলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।একসময়ের সুতিশাড়ীর বদলে তার এখন পরনে লেহেঙ্গা।
রকিব জমাদ্দার আজ বারোটার শো দেখতে যাবে। সেখানে অনন্যাকে দেখতে পাবে।
ষাট টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকে খচমচ আওয়াজ করা একটা ছিটে বসে পড়লো। সিনেমা শুরু হতেই অনন্যা নায়কের হাত ধরে- বুকে জড়িয়ে গান শুরু হলো। রকিব জমাদ্দারের চোখে মুখে তখন উত্তাপ। হৃদপিন্ডে টান পড়লো। চোখের কোনে জমা জল আর বুকভরা বিষাদ নিয়ে হল থেকে বেরিয়ে এলো।
বের হয়ে হাটতে হাটতে কোথায় গেলো কেউ তা জানলোনা। রকিব জমাদ্দারকে আর কোনদিন খুঁজে পাওয়া গেলোনা
তবে অনন্যাকে বছর সাতেক পরে পাওয়া গেলো কমলাপুর রেলস্টেশনে। তখন সে ছেচল্লিশ বছরে।
তার হাতে তখন একটি ট্রেনের টিকিট।