ছড়ায় ছড়ায়…
জিয়াউল জিয়া
ছড়ায় ছড়ায় আকাশ বিক্রি
ছড়ায় পুকুর চুরি,
ছড়ায় ছড়ায় তোমার-আমার
আবেগের ফুলঝুড়ি!
ছড়ায় ছড়ায় ভাললাগা-
ভালবাসা, দ্বন্দ্ব,
ছড়া মানে খুব গতিশীল
ছড়া মানেই ছন্দ।
ছড়ায় ছড়ায় ভুলে থাকা
ছড়ায় মনে রাখা,
ছড়ায় ছড়ায় উড়ে চলা
ছড়া মানেই পাখা।
ছড়ায় ছড়ায় কাছে আসা
দূরে সরার গল্প,
ছড়ায় ছড়ায় দুঃখ ছড়াই-
অল্প, অল্প, অল্প।
ছড়ায় ছড়ায় তোমার চোখের-
মায়ার-ই বর্নণা,
ছড়ায় ছড়ায় হৃদয় জুড়ে
প্রণয়ের কর গোণা।
ছড়ায় ছড়ায় বীরগাথা এক
রাজকুমারের কাব্য,
ছড়ায় ছড়ায় যাই হেরে যাই-
তবুও তোমায় ভাববো।
দুই দু’গুণে চার
জিয়াউল জিয়া
দুইটি মানুষ দুই জীবনে
ভীষন একা একা,
দু’টি মানুষ, স্বপ্ন পৃথক
ভিন্ন হাতের লেখা।
দু’টি মনে বিরাজ করে
ভিন্ন দু’টি গান,
দুই রকমের অনুভূতি
দুঃখ-অভিমান।
দু’টি মানুষ এক বিছানায়
দু’দিক করা মুখ,
শরীর জুড়ে অচেনা ঘ্রাণ
মনে চোরাই সুখ!
বধির দু’জন শোনে না ডাক
জোসনা পোহাবার,
দুই থেকে তাই হয়নি তো তিন
দুই দু’গুণে চার।
হিমেল হাওয়ার রাত
জিয়াউল জিয়া
শান্ত-নিঝুম রাতের বেলা
আকাশজুড়ে মেঘের ভেলা,
ঘুম ভেঙে যায়, চমকে উঠি
বজ্র আকস্মাৎ,
বাইরে তখন বৃষ্টি ভেজা
হিমেল হাওয়ার রাত।
কি আর করি স্মৃতির সাথে-
দাবা খেলি গভীর রাতে,
হেসে খেলে দুখ-হতাশার
কিস্তি করি মাত,
বাইরে তখন বৃষ্টি ভেজা
হিমেল হাওয়ার রাত।
কিন্তু এতেও মন ভরে না
বিবাগী মন গান ধরে না,
সুখের খোঁজে বৃষ্টি মাঝে
দেই মেলে দেই হাত,
বাইরে তখন বৃষ্টি ভেজা
হিমেল হাওয়ার রাত।
বুবু
জিয়াউল জিয়া
বুবুর বিয়া হইছিলো ওই-
উজান তলীর গাঁয়,
বাজার থেকে ডানে গিয়ে
একটু খানি বাঁয়।
বুবুর সঙ্গে তিন গহনা
বেনারশি শাড়ি,
বাজান আমার কইলো, ‘এসব-
সবই দিতে পারি,
যা চাইছেন, সব পাইবেন
ধান পাকনের পরে,
আপাতত মাইয়া আমার
নেন তো তুলে ঘরে’।
বুবু গেল শ্বশুরবাড়ি
হাসি হাসি মুখে,
ভাবছিলো সে সারাজনম
ঘর করবো সুখে।
ক্ষেতে গিয়া দেখলো বাজান
পড়ছে ধানে চিটা,
ঘর করনের সাধটা তখন
বুবুর গেল মিটা।
দু’দিন পরে আসলো ঘরে
বর্ষা-আষাঢ় মাস,
ফিরলো বুবুর বৃষ্টিভেজা
বিবর্ণ এক লাশ!
বুবুর সারা গায়ে ছিল
নির্যাতনের ছাপ,
‘বাজান গরিব-নিঃস্ব চাষী’-
এই কি বুবুর পাপ?
বুবুর কথা পড়লে মনে
ঘরের সবাই কাঁন্দে,
বুবুর শোকে মেঘে ঢাকে
দূর আকাশের চাঁন্দে!
মানবী
জিয়াউল জিয়া
নদী ডাকে, ‘আয়রে আমার কাছে-
আমার কথা ভুলে গেছিস
নাকি মনে আছে’…???
নদীর ডাকে নদীর কাছে যাই,
নদীর জলে, নদীর হাওয়ায়-
মানবীর ছোঁয়া পাই।
বুঝতে দেই না, মানবী’র তরে
নদীর কাছে আসা,
নদী ভিষণ ছিঁচকাঁদুনে
চোখেতে জল ঠাসা।
নদী বলে, ‘এলেই যদি-
যেও না আর ফিরে’,
নদীর কথা শুনতে পাইনি
ফিরেছি ধীরে ধীরে।
ফেরার সময় নদীর সেকি
ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না,
অশ্রুগুলো মানবী’র দুলে
থাকনা হয়ে পান্না…!!!