বাদ দিয়ে-ই হচ্ছে অনুষ্ঠান।একটি সুন্দর গা ঢাকা পর্দা পরিহিতভাবেই সাজ, অত্যন্ত সাধারণ। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ ত্বকে লোক ঠকানো কৃত্রিম আস্তরণ দেইনি। কি জানি বীরপুরুষ কি সৌন্দর্য দেখে মোহিত হয়েছেন। আজকাল তো পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সৌন্দর্য এবং পিতৃ সম্পদের পরিমাণ টা-ই বিবেচিত ,আর বাকিসব খালাস।সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, পাত্রীদেখা পর্বে আমি আমার বর কে দেখি-ই নি ।তবে তিনি নাকি আমাকে চেনেন কথাটা শুনার পর বুকের ভেতর শুরু হতে লাগলো ইনি-ই কি সেই যাকে চাইছি হারিয়ে যাওয়া বসন্ত থেকে আমার সাধনায়, প্রার্থনায়।
অতঃপর কবুল বলে আমি হয়ে গেলাম অদেখা একজনের অর্ধাঙিনী। হাসিতে মাতিয়ে রাখা বাড়িটা কে কান্না ভারি বিদায় নিলাম ।
সেখানে আমাকে রাখা হলো পুষ্পসজ্জিত একটি রুমে, সম্ভবত এটাই উনার রুম। সমস্ত রুম মৌ মৌ করছে পুষ্প আর বইয়ের সুভাসে।বুঝতে আর বাকি রইলো না আমি বইপোকার ঘরনী হলাম। রুমের একপাশে লম্বা বইয়ের আলমারি ইচ্ছে করছে একলাফে সব বইপত্র নিয়ে বসে পড়ি।
কিছুক্ষন পর, খুব চেনা কন্ঠস্বরে সালাম দিয়ে প্রবেশ করলেন তিনি। আমি চেয়ে বিস্মিত ,আনন্দে চোখে জল চলে এলো। শ্বেতশুভ্র পাঞ্জাবিতে সেই বসন্তে দেখা পুরুষ।যিনি মুহুর্তের জন্য আমার জীবনে এসে অন্তরে সমীরণের দোলা দিয়ে আবার ফিরে গেলেন মুসাফির হয়ে। হ্যাঁ উনাকেই তো চেয়েছি আমার প্রাথনায় কল্যানকর রূপে।
কাছে এসে বসলেন এবং বললেন, “এবার ঋতু ছাড়াই বসন্তে এলাম প্রিয়া।”
আমি অভিমানের স্বরে বললাম,” আবার দোলা দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় তুলে হারিয়ে যেতে। আমি কি এতোটাই অযোগ্য ছিলাম?”
“নাহ ! অযোগ্য নও , তবে সম্পর্ক এগুতো ভুলে। তাই মুসাফির ছিলাম বটে ! তবে এ বসন্ত ফুরাবার নয়।
আজ আমার বয়স বিরাশিতে পড়লো আর উনার বয়স পচাশি। সকাল আট টা বেজে গেলো উনি সেই ভোরবেলা মসজিদে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হলেন এখন ও এলেন না । ফোন টা ও রেখে গেলেন। নাতিকে ক্ষণেক্ষণে বলছি , ” দাদু ভাই একটু এগিয়ে গিয়ে দেখো না ।”
“আরে দাদু সবর করো না একটু আসবেন তো, বুঝলে সবুর এ মেওয়া ফলে” বলেই রহস্যের হাসি দিলো ।
এই বুড়ো বয়সেও আগের মতোই অভিমান করে বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে আছি ।
হঠাৎ ঠান্ডা হাতের স্পর্শ আমার কুঁচকে যাওয়া গালে লাগতে বুঝতে বাকি রইলো না আমার মি. চলে এসেছেন।
অভিমানের স্বরে বললাম, “আমাকে দুঃশ্চিন্তায় ফেলতে ভালোই লাগে বুঝি ? আরো কিছুক্ষন বাইরে থাকতে পারতেন। ”
তিনি বললেন, ঠিক আছে তবে এই বেলিফুল গুলো নিয়েই যাই। যার জন্য আনলাম সেই যদি গ্রহন না করে , কি আর করার? ”
আমি চমকে খুশিতে বললাম,” আমার জন্য?”
“হুম,তোমার জন্য।
” পবিত্র ভালোবাসার ফাগুন কি আর ফুরাবার হয়।”
“এ বসন্ত বারোমাস ,ফুরাবার নয়। ”