★দিন গড়িয়ে বছর পেরিয়ে জীবন যুদ্ধের চরম সীমান্তে এসে,আজ কেনো জানি বার বার ছেলেবেলার হারিয়ে যাওয়া দিন গুলোর কথা মনে পরছে।বিশেষ করে ছেলে বেলার রোযার মাসের দিন গুলো বার বার স্মৃতি নাড়া দিয়ে উঠছে।
কতই না সুন্দর ছিলো সেই দিন গুলো।মা বরাবরের মতোই সবার আগে ঘুম থেকে জেগে উঠতো,সেহেরি পাক করা শুরু করতো,আমি কেমন করে জানি মায়ের কাজের শব্দ শুনে হঠাৎ করেই ঘুম থেকে জেগে উঠতাম।তখন খুব শীত ছিলো।কিন্ত সেই শীত উপেক্ষা করে ঘুম থেকে উঠে পরতাম।সবাই মিলে একসাথে কত মজা করে খেতাম।যদি ও সেহেরিতে সবার সাথে খেতাম।
ছোট বেলা মনে করতাম থুতু খেয়ে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যায়।তাই সারা দিন থুতু ফেলতেই থাকতাম।মানুষের সামনে গেলে আরো বেশি করে থুতু ফেলতাম,যদি তারা ভাবে আমি রোযা রাখি নি এই ভয়ে।
মাঝে মাঝে ভুলে পানি খেয়ে ফেলতাম।আর মনে মনে ভাবতাম ইস ভুলে যদি ভাত খেয়ে ফেলতাম, তাহলে কতই না ভালো হতো।
মনে কতো আশা নিয়ে রোযা রাখবো সেহেরি খেতাম,মা প্রতিদিন সেহেরি খেতে দিতো,কিন্তু রোযা রাখতে দিতো না।কিন্তু আমার মনে জিদ থাকতো,রোযা আমি থাকবই।
দাদিরা বলতো ছোটরা যদি দুপুরে খায় তাহলে নাকি এক রোযার সওয়াব পায়।কিন্তু আমি বিশ্বাস করতাম না।চাইতাম পুরোটা দিন রোযা থাকতে।
ছোটবেলা যখন রোযা থাকতাম তখন গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেতো,মাঝে মাঝে ভুলে পেট ভরে পানি খেয়ে ফেলতাম।আর যখন মনে হতো আমি তো রোযা রাখছি,তখনই অজুহাত ধরে বলতাম,ভুলে খেলে রোযা ভাঙ্গে না।ছোটবেলা যদি কোনো কারনে ঘুম থেকে না উঠতে পারতাম,তাহলে সকালে উঠে কি কান্নাটাই না করতাম।আমরা কোনো দিন যদি সেহেরি খেতে মিস করতাম,তখনই সেহেরিতে উঠা সমবয়সী ভাই ও বোনেরা বানিয়ে বানিয়ে খাবারের কথা বলতো।বলতো এটা খেয়েছি সেটা খেয়েছি, আরো কত কি।যত খাবারের কথা বলতো কান্না ততো বাড়তো।
রোযা রাখার জন্য মা সারা দিনই বকা দিতো,কিন্তু তারপরে ও রোযা থাকতাম।মনের ভিতর এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতো।প্রায় সব বাড়ির বাচ্চাদেরকে দিয়েই শরবত ঠিক হয়েছে কিনা টেষ্ট করানো হতো।আমাদের বাড়িতে ও তাই হতো।যখন ছোট ছিলাম,তখন শরবত টেষ্ট করার নামে অর্ধেক টুকুই খেয়ে ফেলতাম।রোযা না থেকে ও ইফতারে সবার আগে প্লেট নিয়ে বসে থাকতাম।সবার সাথে কতই না মজা করে ইফতার করতাম।
ছোটবেলার এই মজার মুহূর্ত গুলো আসলে বলে শেষ করার নয়।রোযা গুলো কত আনন্দ আর আত্মতৃপ্তিদায়ক ছিলো,তা এখন প্রতিটি মর্মে উপলব্ধি করতে পারছি।বার বার সেই ছেলেবেলার দিন গুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে।