কনফিডেন্সের সাথে লেখালেখি করার ৬ টি কৌশল

আসসালামু আলাইকুম প্রানের ভাই ও বোনেরা।আশা করি আল্লাহ তালার অশেষ মেহেরবানিতে সকলে সুস্থ্য ও ভালো আছেন। আল্লাহর মেহেরবানি ও আপনাদের দোয়া, ভালবাসায় আমি ভালো আছি। 

আজকে আপনাদের জন্য একটি কন্টেন্ট নিয়ে হাজির হয়েছি যা অতীত এ যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিলো বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বর্তমানে অনেকেই কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চান কিন্তু অজানা কিছু কারনে তারা ব্যার্থ হচ্ছেন। আজকের ব্লগটি তাদেরকে পুনরায় ব্লগিং ক্যারিয়ারে ফিরে আসতে সাহায্য করবে তো আর বেশি কথা না বলে সামনে এগিয়ে যাওয়া যাক 

প্রফেশনাল লেখক হতে চাইলে আপনাকে সর্বপ্রথম লেখালেখি করতে হবে। এবং প্রচুর পরিমাণে পড়তে হবে। লেখালেখি এক ধরনের আর্ট, একজন আর্টিস্ট যেমন তার চিত্রের মধ্যে অনেক কথা জমিয়ে রাখে যা মানুষকে আকর্ষিত করে, একজন লেখক তেমনি তার লেখনীর মাধ্যমে একজনকে হাসাতে ও কাদাতে পারে।  একজন প্রফেশনাল লেখকই পারে লেখনীকে জীবন্ত করে তুলতে। সেজন্য লেখার কনফিডেন্স বাড়াতে  চাইলে লেখালেখির বিকল্প কোন প্রন্থা নেই।

বর্তমান যুগে প্রতিটি লেখকের পছন্দের প্লাটফর্ম হচ্ছে ব্লগিং, আপনি কি লেখার কনফিডেন্স ডেভলপ করার উপায় জানতে চাচ্ছে ?  তাহলে আমার পরামর্শ আপনাকে ব্লগিং শুরু করে দিতে হবে কেননা ব্লগিং এর মাধ্যমে আপনার লেখাটি পুরো বিশ্ববাসীর নিকট পৌছে যাবে। যার মাধ্যমে আপনি আপনার লেখার গুনগত মান সম্পর্কে জানতে পারবেন,সেই সাথে আপনার কোথায় কোথায় বেশি নজর দেয়া উচিত, কিভাবে লিখলে আপনার লেখাটি আরো আকর্ষণীয় হবে তার ধারনা পাবেন। এতে করে আপনি আরো দক্ষ রাইটার হিসেবে নিজেকে সকলের সামনে তুলে ধরতে পারবেন।

যে সকল কারনে একজন রাইটার হতে চেয়েও হতে পারেনা

  • “ আমার চিন্তার সাথে অন্যের চিন্তার মিল না হলে  বাজে মন্তব্য করবে “
  • “আমার লেখা ততটা  ভাল নয়।”
  • “আমি যা বলতে চাই তা কি কেউ পড়তে চাইবে?” 
  • “লেখার সময় কি লেখব তা মাথায় আসে না।”

প্রথম প্রথম এমন চিন্তা ভাবনা করাটা দোষের কিছু না, আমি যখন ব্লগিং শুরু করি আমিও এমনটাই ভাবতাম। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে জীবনে চলার পথে হোচট খাওয়াটা দোষের কিছু নয়, তবে হোচট খাওয়ার ভয়ে চলা শুরু না করাটাই দোষের। কেউ কোন কিছু জন্মের আগে শিখে আসেনি । কথা আছে ❝ব্যার্থতাই সফলতার মুল চাবি কাঠি ❞ তাই ব্যার্থ হবার ভয়কে পেছনে রেখে সামনে এগিয়ে চলতে পারলেই সফলতার দেখা মিলা সম্ভব। 

আমি বিশ্বাস করি আমরা সবাই একজন ভালো লেখক। হ্যাঁ, কথাটা আজ থেকে আপনিও বিশ্বাস করা শুরু করে দিন।  আপনার বিশ্বাস মজবুত করে তুলার দায়িত্ব আমার।  আমার লেখাটি ধৈয্য ধরে সম্পুর্ন পড়ুন দেখবেন আপনি ও আমার সাথে একমত হয়ে যাবেন।

পৃথিবীতে যত কিছুর আবিষ্কার হয়েছে তার প্রতিটি আবিষ্কার কি এখনো সেই  লুকেই আছে?  উত্তরটি হবে না।  একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝালে আরো ভালো হবে।  ধরুন আপনি এখন যে স্মার্টফোনটি ব্যাবহার করছেন এটা কি প্রথম আবিষ্কৃত স্মার্টফোন?  আবশ্যই না, দিনে দিনে আপডেট করতে করতে আজ আমরা এখন এমন ফোন  পেয়েছি ভবিষ্যতে আরো ডেভেলপ হবে। তেমনি আপনি চান ব্লগিং ক্যারিয়ার করবেন তাহলে শুরু করে দিন, কি লিখবেন কিভাবে লিখবেন এসব চিন্তা বাদ দিয়ে, লেখা লেখির ভিতরে মনকে স্থীর করুন তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে আউডেট করুন।

মনকে স্থীর করা হয়ে গেলে মাত্র তিনটি বিষয় আপনাকে মনে রাখতে হবে তবেই আপনার কনফিডেন্স আরো বেড়ে যাবে

কখনো ব্লগিং বন্ধ করবেন না

ব্লগিং শুরু করে মাঝ পথে গিয়ে তা বন্ধ করে দিবেন না। এমন অনেক ব্লগার রয়েছে যারা মনে করে ব্লগিং বা লেখালেখি করা খুবই সহজ একটা কাজ তাই কোন ধরনের রিসার্চ বা ধারণা  না নিয়েই লেখা শুরু করে। আবার এমন অনেকেই আছে যারা মনে করে লেখালেখি এটাতো একেবারেই সহজ একটি  কাজ তাই না জেনেই লিখা শুরই করে দেয়  কিন্তু লেখার যে কিছু  নিয়ম রয়েছে তা ফলো করে না৷ যার জন্য তারা অল্প সময়েই ব্যার্থ হয়ে লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং ব্লগিং বন্ধ করে দেয়। যে কোন কাজ শিখতে সময়ের যতটা প্রয়োজন হয় তার থেকেও অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় নিজেকে সেই কাজে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে। আর এ দক্ষ হবার জন্য প্রয়োজন প্রাক্টিস, প্রাক্টিস আর প্রাক্টিস।  তাই হাল না ছেড়ে আরো ফোকাসের সহিত কাজ করুন।

AI ব্যবহার করবেন না

লেখার কনফিডেন্স  বাড়াতে চাইলে AI টুলের ব্যাবহার করা যাবে না। AI ব্যাবহার করতে নিষেধ করেছি বলে একেবারেই ব্যাবহার করবেন না এমনটা নয়। কথায় আছে অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী আপনি সম্পুর্ণ ভাবে লেখালেখি শিখা হয়ে গেলে পরবর্তীতে আপনার কাজকে সহজ করতে AI ব্যাবহার করতে পারেন। শিখার আগেই যদি AI ব্যাবহার করা শুরু করে দিন তবে আপনি বেশি দুর এগিয়ে যেতে পারবেন না।যখন আপনি প্রফেশনাল কন্টেন্ট রাইটার হবেন তখন   AI টুল এর সঠিক ব্যাবহার করতে পারবেন।   AI এর উপর নির্ভরশীলতা নয় তখন তাকে সঠিক ভাবে ব্যাবহার করতে পারবেন।  

লেখার উপর ক্লাস এবং কোর্স গ্রহণ করবেন কি করবেন না

একটি কথা সবসময় মনে রাখবেন শিক্ষার শেষ নেই। আপনি প্রথম অবস্থায় ইউটিউব দেখে কিভাবে কন্টেন্ট লিখতে হয়, কন্টেন্ট লেখার ফর্মুলা কি, প্রফেশনালরা কি নিয়মে কন্টেন্ট লিখে থাকে এগুলো বিষয় নিয়ে ভিডিও দেখে কিছু ধারনা নিলেন।  মনে করবেন না, এতেই আপনার শিখার পাঠ শেষ এখন থেকে শুধু ব্লগিং করবেন আর ইনকাম করবেন। এই ধারনার জন্য অনেক ব্লগারের ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরুর আগেই তা ধংস হয়ে যায়। কেননা সে সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আপডেট করতে পারছে না যার জন্য সে পিছিয়ে পড়ছে। দিন যতো যাবে সকল বিষয়ের কিছু নতুনত্য আসবে পুরনো কিছু স্ট্রাকচার বাদ দিয়ে নতুন কিছু যুক্ত করা হবে আর আমরা যদি এসকল বিষয় গুলো আয়ত্ব না করে পুরনো পদ্ধতি অবলম্বন করি তাহলে আমাদের আর বেশি দুর যাওয়া সম্ভব হবে না। তাই নিজেকে দক্ষ করতে বই,পিডিফ, ইবুক, কোর্স ইত্যাদি দিয়ে নিজেকে নতুন রুপে সাজিয়ে নিতে পারেন।

আপনার লেখার কনফিডেন্স বাড়ানোর জন্য ছয়টি টিপস

লেখার কনফিডেন্স বৃদ্ধি করতে চাইলে আপনাকে কিছু বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে।তবেই আপনি দ্রুত একজন দক্ষ লেখক বা রাইটার হয়ে উঠবেন।

একটি নিয়মিত লেখার অভ্যাস:

আপনি যতই একই কাজ বার বার করবেন ততই ওই কাজটির জন্য আপনার জড়তা কমতে থাকবে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে লেখার অভ্যাস করুন। একজন ব্লগারের মুল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লেখালেখি করা। প্রফেশনাল ব্লগার হতে হলে আপনাকে প্রফেশনালদের নিয়ম ফলো করে লেখালেখি প্রাক্টিস করতে হবে। আপনি যতোই ব্যাস্ত থাকুন প্রতিদিন অন্তত ৫ মিনিট করে লেখার অভ্যাস করুন এবং ধীরে ধীরে এর সময় বাড়িয়ে তুলুন। 

এমন একটি টপিক নির্বাচন করুন যার সম্পর্কে আপনার ধারণা আছে

লেখা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে হলে আপনাকে এমন একটি টপিক নিয়ে লেখা শুরু করতে হবে যার সম্পর্কে আপনি কিছু না কিছু জানেন। যেই বিষয় সম্পর্কে আপনার কোন ধারনাই নেই সেই বিষয় নিয়ে আপনি কিভাবে লিখবেন। ধরুন যদি আপনাকে কেউ স্মার্টফোন নিয়ে কিছু লিখতে বলে আপনি যতটা দ্রুত গতিতে এই বিষয়ে  লিখতে পারবেন যদি আপনাকে  জাহাজ নিয়ে লেখতে বলা  ততটা দ্রুত গতিতে লেখা  আপনার পক্ষে সম্ভব হবে না। যদি আপনি সেই বিষয়ে অজানা থাকেন।

লেখার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হলে অবশ্যই জানা বিষয় গুলো নিয়ে লেখালেখি শুরু করতে হবে। আপনি যেই টপিক নিয়ে লিখবেন নুন্যতম শুরু করার মতো জ্ঞান আপনার মধ্যে থাকলে বাকিটা গুগল রিসার্চ, ব্লগ পরে, ভিডিও দেখে আইডিয়া নিয়ে সহজেই আপনি একটি সম্পুর্ন আর্টিকেল লিখে ফেলতে পারবেন, যদি সেই টপিক নিয়ে আপনার নুন্যতম ধারণা না থাকে তাহলে প্রথমে ধারনা নিয়ে শুরু করতে হবে যা ব্যাপক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। 

লেখার শুরুর জড়তআ কমানো

লেখা শুরু করার আগে লে আউট করে নিন। অর্থাৎ একটি ফর্মেট  তৈরি করে নিতে পারেন যেমন ধরুন: সুচনা, মুল ভাব, উপসংহার।  এই তিনটি বিষয় থাকলে ওই লেখার ভিত্তি থাকে স্ট্রং, 

সুচনায় আপনার টপিক রিলেটেড  সামান্য ধারণা দিবেন যেমন: আপনার টপিক যদি হয়ে থাকে আর্নিং রিলেটেড তবে এখানে কতটা আর্নিং করা সম্ভব, ভবিষ্যতে এই সেক্টরের ডিমান্ড কেমন হবে এই ধরনের কিছু লিখতে হবে।  যাতে প্রথম ২-৩ লাইন পড়লেই ভিউয়ার  ধারনা পেয়ে যায় সে যা খুজতে এখানে এসেছে আপনি সেই বিষয়েই তাদের জন্য লিখেছেন। 

বর্ননায় আপনি তাদের পরিষ্কার ধারনা দেয়ার চেষ্টা করবেন। ছোট ছোট করে পয়েন্ট আকারে লিখবেন।  এতে করে তাদের বুঝতে সুবিধা হবে। চাইলে আপনি উদাহরণ ও ব্যাবহার করতে পারেন এতে করে ভিউয়ারদের বুঝতে সুবিধা হবে। আপনার ফোকাস টপিকের বাহিরে অতিরিক্ত লেখা থেকে বিরত থাকতে হবে

উপসংহারের ধাপে এসে আপনি সম্পুর্ন লেখাটির একটি সংক্ষিপ্ত ধারনা পুনরায় দিয়ে দিবেন 

কথায় আছে “ছোট ছোট বালু কনা বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল”

বিন্দু বিন্দু শব্দ অক্ষর দিয়ে লেখা শুরু করে দিন টপিককে ফোকাস রেখে সামনে এগিয়ে যান তাহলেই হবে।

লে আউট কেন প্রয়োজন 

লেখার কনফিডেন্স  বাড়াতে হলে আপনাকে প্লানের সাথে এগিয়ে চলতে হবে। আপনি যেই বিষয়ে লিখতে চাচ্ছেন তার ছোট্ট একটি খসড়া বা নোট করে রাখুন। যেমন ধরুন আপনি ভাবছেন কিভাবে লেখার জড়তা কাটানো যায় এই বিষয় নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখবে। এখন আপনি কাগজে বা ফোনের নোট বুকে টপিকটি লিখলেন

লেখার কনফিডেন্স বাড়ানোর টপ সিক্রেট টিপস

সুচনা: এখানে ৪-৫ টা ব্লগ পোষ্ট পরে তাদের মেইন টার্মটা লিখে রাখলেন যাতে ৪-৫ ব্লগের মুল ভাব সমন্বয় করে আপনি নিজের মস্তিষ্ককে ব্যাবহার করে নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে পারেন

বর্ননা: প্রত্যেক ব্লগের পয়েন্ট গুলো এখানে সারিবদ্ধ ভাবে লিখে রাখবেন সেখান থেকে ভালো দেখে ৫-৬ টা পয়েন্ট মার্ক করে রাখবেন যখন আপনি লেখা শুরু করবেন তখন সেই পয়েন্ট গুলো নিয়ে লেখবেন

উপসংহার: সম্পুর্ন লেখার মাঝে আপনি যেই যেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন তার একটি সংক্ষিপ্ত রুপ এখানে দিবেন

আপনার খড়সা তৈরি হয়ে গেলে ধরে নিবেন আপনার ৮০% কাজ হয়ে গেছে এখন শুধু আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী লেখা শুরু করে দিন। 

বার বার  রিভিউ 

একটি লেখা শেষ হবার পর ধৈর্য্য নিয়ে তা বার বার পড়ে দেখতে হবে। আপনি যতবার রিভিশন দিবেন ততবার কিছু মিষ্টেক আপনার নজরে আসবে, যা সংশোধনের মাধ্যমে  আপনার লেখাকে আরো শ্রুতিমধুর করে তুলবে। প্রথম অবস্থায় বেশি বেশি রিভিশন করলেও একসময় এসে দেখবেন আপনাকে বেশি রিভিশন করতে হবে না।

মিশ্র ভাষা ব্যাবহারে সতর্ক থাকুন

লেখায় মিশ্র ভাষার ব্যাবহার পরিত্যাগ করতে হবে। লেখায় সাধু ভাষা, আঞ্চলিক ভাষার মিশ্রণ হলে সেই লেখা পড়ে ভিউয়ার  ভালো কোন ধারনা পাবে না যার ফলে আপনার কন্টেন্ট এর প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে, যা আপনার আত্মবিশ্বাসকে ব্যাহত করবে। ধীরে ধীরে আপনার কনফিডেন্স কমতে শুরু করবে। তাই লেখার কনফিডেন্স বৃদ্ধি করতে হলে মিশ্র ভাষা ত্যাগ করা আবশ্যক। 

 

কোন কাজই শুরুতেই ১০০% সাকসেস আসবে না। তাই বলে কাজটা ছেড়ে দেয়া বোকামি ধৈর্য্য ধরুন লেগে থাকুন নিজেকে অন্যের সমকক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে সময় দিন। আশা করি আমার কথা গুলো আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে  সাহায্য করবে। 

Related Posts

1 Comment

মন্তব্য করুন