একদিন মাঝরাতে হঠাৎ একটা শব্দ-
কিসের শব্দ? কিসের শব্দ?
ছন্দেরা ফিরে এসেছে!
আজকে কবিতা লেখা হবে।
ঘুমন্ত শহর, ক্লান্ত পথঘাট
এখন রাস্তায় কোনো হর্ণের শব্দ নেই।
নেই কোনো হকার বা ফেরিওয়ালা
আছে শুধু একরাশ নিস্তব্ধতা।
পাখির কলকাকলি নেই
থমকে আছে সমস্ত ব্যস্ততা
তবুও কেউ কেউ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে।
কারো আবার পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে।
কারো কারো কাটছে বিনিদ্র রজনী
চিন্তার ভাঁজ কপালে,
কি করে চলবে সংসার?
রোজগার যে কমে গেছে।
এই পৃথিবীতে সবাই ব্যস্ত
প্রত্যেকে যার যার চিন্তায় মগ্ন
কে শুনবে কার মনের কথা
তাই আজকের এই মধ্যরাতের কবিতা।
অনেকে মাঝরাতে দুঃখ নিয়ে কাঁদে
কেউ কেউ নিজেকেই উপহাস করে।
কারো কারো আবার পরের দিনের জন্য প্রস্তুতি চলে
কেউবা আবার ডায়েরি লেখে!
দিনের ক্লান্তি মাঝরাতে এসে ধরা দেয়
মাঝরাতে পায়াচারি করে ঘরে কিংবা বারান্দায়।
নির্ঘুম চোখ।
ক্লান্ত শরীর।
দুশ্চিন্তা আর সমস্যায় জর্জরিত জীবনে
সমাধান খোঁজে, বাঁচতে চায়।
সেই তো আবার কালকে একই রুটিন মেনে চলা।
কত অনর্থক প্রশ্ন ঘোরে মনে
কত কত আক্ষেপ, আফসোস
চোখের এককোণে মনের অজান্তেই অশ্রু জমে
অতীতের কত কথা মনে পড়ে!
অনেক কিছু করার কথা ছিলো
হয়নি করা
মাঝে মাঝে মনে হয়
এই পৃথিবীতে আসাই বৃথা।
মাঝে মাঝে মনে হয় অন্ধকার জাপটে এসে ধরবে
সড়ক বাতিগুলো বৃথা আলো দিচ্ছে।
চাঁদটাকে এত ম্লান কেন মনে হচ্ছে?
রাস্তার কুকুরেরা একটু পর পর ডাকছে
মোবাইল কিংবা ল্যাপটপে মনোযোগ নেই।
কত কাজ বাকি পড়ে আছে
কিন্তু মনে স্বস্তি নেই।
একটা বইয়ে বুঁদ হয়ে থাকতে মন চায়।
সময় নেই
শখের কাজগুলো করতে মন চায়।
সময় নেই
কি হতে চেয়েছিলাম আর কোথায় এসে পড়েছি
এখন হিসেব করতেও ভুলে গেছি কিংবা
নিজেকেই এড়িয়ে যাচ্ছি।
অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি আর
একটা সময় কারণ খোঁজাটাই ছাড়তে হয়েছে।
কে ঠিক, কে ভুল
কে দোষী, কে নির্দোষ
এসব কথা অনেক পেছনে রয়ে গেছে!
এগিয়ে চলেছে সময়
পুরনো কথা আর কে মনে রাখে?
তবুও মনের অজান্তে মাঝে মাঝে
ভাবনাগুলো এসে পড়ে।
অনেক ভুল হয়েছে।
অপ্রাপ্তির খাতাটা অনেক লম্বা।
ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলে আর
বাড়ে নতুন নতুন ঝামেলা।
দুদন্ড শান্তি কোথাও নেই।
মন খোঁজে একটুখানি অবসর।
আর কত পার্থিব জগতের পেছনে ছুটবো?
এই তো। আরেকটু পরে ভোর হবে।
ছন্দেরা ফিরে যাচ্ছে।
আবার দেখা হবে কোনো এক ক্লান্ত বিকেলে
কাজের শেষে ফেরার পথে।
এরকম অর্থহীন আলোচনা চলবে আর
একটুখানি অবসর।
আকাশটা ধীরে ধীরে ফর্সা হচ্ছে,
কেটে যাচ্ছে অন্ধকার।
আবার দেখা হবে বলে চলে গেলো ছন্দেরা
জানি না আবার কবে ফিরবে!
আমি ভাবছি, কোনো এক বিকেলে
হয়তো ছন্দের সাথে আবার দেখা হলো
কেমন হবে?
কাজের ক্লান্তি মুছে ফেরার পথ বাদ দিয়ে
সেদিন কি ছন্দের সাথে যেতে পারবো?
কোথায় যাবো?
দূরে। বহুদূরে।
ছন্দেরা ফিরে গেছে।
একটা বিমানের শব্দ,
হয়তো ভোরেই বিমানবন্দরে নামবে।
কতজন ফিরছে
কিন্তু ছন্দেরা ফিরে গেছে।
আস্তে আস্তে দিনের ব্যস্ততা শুরু হচ্ছে
শোনা যাচ্ছে দুই একটা রিকশার হর্ণ,
রাতের নিস্তব্ধতা মুহুর্তেই গায়েব
সেই তো আবার একই পথে ছুটে চলা।
আবার হবে তো দেখা?