প্রত্যহ দীর্ঘদিন কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলে আমাদের শরীরে কিছু অঙ্গের উপর অত্যধিক চাপ এবং কম্পিউটার থেকে নিঃসৃত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রশ্মি আমাদের বিভিন্ন ক্ষতি করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে চোখ এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে যে ধরনের যন্ত্রণা অসুবিধা সৃষ্টি হয়, দীর্ঘদিনের গবেষণার পর বিজ্ঞানিরা তা প্রতিরোধ ও নিরাময়ের পথ খুঁজে বের করেছেন। বিজ্ঞানের যে শাখায় এসব শারীরিক অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে বলা হয় এরগোনমিকস (Ergonomics)। বিভিন্ন পেশার পেশাজীবিদের কর্মজীবনকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করার জন্যই বিজ্ঞানের এ শাখায় উদ্ভব, বির্বতন ও বিকাশ, দীর্ঘদিন ধরে কম্পিউটার ব্যবহারজনিত শারীরিক অসুবিধা গুলোও আলোচিত হয় Ergonomics এ। একে CIR ( computer Induce Repetitive) বলা হয়। অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ একে CVS (Computer Vision Syndrome) শিরোনামেও আলোচনা করেছেন। কম্পিউটারের সামনে দীর্ঘদিন কাজ করলে চোখের কিছু কিছু সমস্যা বা যন্ত্রণা বোধ হয়। হাত, ঘার, মাথা, কাধ এমনকি পায়েও কিছু কিছু ব্যথাবোধ এবং যন্ত্রণা বোধ এবং যন্ত্রণার সৃষ্টি হয় এর মধ্যে কোনটি দীর্ঘদিনও হয়। একটু সতর্ক হলেই এসবের প্রতিকার আমাদের সাধ্যের মধ্যে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে ।
চোখের সমস্যা : মনিটরের অতিরিক্ত উজ্জ্বলতা ও আলোর অপর্যাপ্ত বা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হওয়া, স্কিন এবং চোখের মধ্যে দূরত্বের গরমিল এবং অস্বচছ স্কিনের কম্পিউটার ব্যবহারকারীর চোখে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১. মনিটরের আলো চোখের সাথে সহনশীল করে সেট করতে হবে। সর্ব্বোচ্চ যত দূরে বসে মনিটরের লেখাগুলোকে স্পষ্ট পড়া যায় তত দূরত্বে বসা উত্তম।
২. দীর্ঘক্ষণ একাধারে মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকা যাবে না। মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতি এক বা দুই ঘন্টায় ৫-১০ মিনিটের জন্য বিশ্রাম নেওয়া উচিত।
৩. সরাসরি উজ্জ্বল আলোর নিচে কম্পিউটার স্থাপন না করে রুমে এমন ভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে মনিটরের গ্লাসে লাইট রিফ্লেক্ট না হয়।
৪. কিছুক্ষণ পরপর চোখ পিট পিট করলে চোখ ভেজা থাকবে এবং চোখের মাংসপেশী বেশি কর্মক্ষম থাকবে ।
৫. সাধারণ লেখা লেখীর কাজ থেকে মুভিং ছবি যেমন, গেম, ভিডিও সিনেমা ইত্যাদি বেশি এফেক্ট করে। এক্ষেত্রে টেলিভিশনের মত দূরত্ব বজায় রেখে দর্শন করা উচিত।
৬. ডেস্কটপের ব্যাকগ্রাউন্ড গাঢ় রঙের পছন্দ না করে সহনশীল সাধারণ রঙ নির্বাচন করা উচিত।
৭. মাঝে মাঝে ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখে ঝাপটা দিলে চোখের সজীবতা বাড়ে।
৮. মনিটরের অবস্থান চোখের উচ্চতা থেকে ১০ – ১৫ ডিগ্রি নিচে হতে পারে তবে সমান উচ্চতা থাকলে সবচেয়ে ভালো।
হাত, ঘাড় এবং কাধের উপর চাপ :
কম্পিউটার ব্যবহারকারী বিশেষ করে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, কম্পোজিটর এবং প্রোগ্রামারদের প্রতিদিন দীর্ঘক্ষণ ধরে কীবোর্ড ব্যবহার করতে হয়। এতে করে হাত, ঘাড় এবং কাঁধের উপর চাপ পড়ে। একটু সঠিকভাবে ব্যবহার করলে শরীরের উপর চাপ কম পড়বে মেঝে থেকে কীবোর্ডকে ২৮-৩১ ইঞ্চি উচুতে রেখে কীবোর্ডকে সমতল জায়গায় স্থাপন করতে হবে। হাতকে কোনো কিছুতে না লাগিয়ে কীবোর্ড ব্যবহার করতে হবে। মেঝেতে পা না রেখে টেবিলের পা দানিতে অথবা অনুরুপ উচুতে পা রাখা উচিত।
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যায়াম :
দীর্ঘদিন কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে আমাদের ঘাড়, কাঁধ, পিঠ, হাত আর কব্জির মাংসপেশীতে ব্যথা হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যাথা এবং কষ্ট প্রতিরোধ করার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। এতে করে শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে পেশির উত্তেজনা কমবে এবং ক্লান্তিকর পরিস্থিতির অবসান ঘটবে। মাংসপেশী গুলো শক্তিশালী হবে এবং সকল কাজের দক্ষতা বাড়বে। ব্যায়াম গুলো খুবই সহজ। কাজে বসার আগে অথবা মাঝখানে বিরতিতে প্রতিদিনের কাজের রুটিনমাফিক ব্যায়াম গুলো চর্চা করা উচিত।
ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন :
যারা দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে কাজ করে তাদের ডিপ্রেশন, এলার্জি চর্মরোগ সহ আরও অনেক ধরনের অসুবিধা দেখা দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা এগুলোর জন্য মূলত ইলেকট্রো মেগনেটিক রেডিয়েশনকে দায়ী করেছেন। বড় বড় কোম্পানি গুলো রেডিয়েশন মুক্ত যন্ত্রপাতি তৈরি করার চেষ্টা করছে। কম্পিউটার কেনার সময় এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। কম রেডিয়েশন হয় এমন যন্ত্রপাতি কেনা উচিত।