বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে পুরো বিশ্ব এখন গৃহবন্ধি। করোনা ভাইরাস বা কভিড-১৯ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শুরু থেকেই চীনে প্রকাশ পায়। অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা মতে, এটি আগস্ট মাসে প্রকাশ পায়। যাহোক, এটি বর্তমানে কতটা যে ভয়ংকর তা আমরা সকলে দেখতে পাচ্ছি।বিশ্বে প্রতিটি দেশ ও অঞ্চলে এটি প্রভাব বিস্তার করেছে। এই করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বর্তমান বিশ্বের সব খাত প্রায় অচল। এই ভাইরাসের প্রভাব প্রায় সব খাতে পড়েছে। তেমনিভাবে, এই ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে মানুষের সাধারণ জীবনেও। আজ আমি আলোচনা করছি, করোনার ভাইরাসের ফলো বৃদ্ধি পাওয়া প্রযুক্তি আসক্তি নিয়ে।
প্রযুক্তি আসক্তিঃ বর্তমান সময়ে বিশ্ব পার করছে এক অবরুদ্ধ সময়। এই সময়ে মানুষ গৃহবন্দি থাকার ফলে তাদের ক্ষেতে প্রযুক্তির প্রতি ঝোঁক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রযু্ক্তির প্রতি আসক্তি সব বয়সের মানুষের মাঝে লক্ষ করা যায়, শিশু, যুবক এবং বৃদ্ধ সকলের ক্ষেত্রে তা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
এই প্রযুক্তি আসক্তির ফলে আমাদের বর্তমান প্রজন্ম ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি সারাক্ষণ বাড়িতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ডিভাইস নিয়ে বসে বসে থাকতে তাদের মধ্যে একটি এক ঘেয়েঁমি ভাবের সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক বন্ধন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সারাদিন মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি ডিভাইস ব্যবহারের কারণে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এই প্রভাব বেশি লক্ষ করা যায় শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে। তাছাড়া করোনা কালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে এই আসক্তিটি দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা জানি, প্রযু্ক্তি আসক্তি মাদকের আসক্তির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এই সময়ে প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হচ্ছে লেখা পড়ার তেমন চাপ না থাকার কারণে সন্তানদের প্রতি পিতা-মাতার অবহেলা। তারা মনে করেন, সন্তানরা যদি মোবাইল বা ট্যাব ব্যবহারের মাধ্যমে বাসায় থাকে তাহলে তাদের সন্তানরা নিরাপদ থাকবে। এই একটি দিক থেকে পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের বাচাঁনোর জন্য একটি মারাত্নক আসক্তির দিকে টেলে দিচ্ছেন। যা থেকে সহেজে বেরিয়ে আসাটা কঠিন।
পিতা- মাতার এই সময়ে করণীয়ঃ করোনা কালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ থাকার ফলে ছাত্রদের প্রাতিষ্টানিক পড়ালেখার চাপ কম। এই সময়ে পিতা-মাতার উচিত তাদের সন্তানদের প্রযু্ক্তি ব্যবহার কমিয়ে বিভিন্ন সাহিত্য, ভালোমানের গল্পের বই, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি বই পড়তে দেওয়া এতে তাদের সন্তানরা যেমন প্রযুক্তির প্রতি তাদের অতি আগ্রহটা কমাতে পারবে, তেমনি বই পড়ার মাধ্যমে তাদের জানার পরিধি বাড়বে।
মাদকের আসক্তি যেমন একটি সমাজকে ধ্বংস করতে পারে তেমনি প্রযুক্তির আসক্তিও কিন্তু ধ্বংস করতে পারে। আমরা দেখতে প্রতিনিয়ত খবরের কাগজে কিংবা টেলিভিশনে দেখতে পাই কত যুবক প্রযুক্তি নেশায় মেতে উঠেছে, তাদের প্রয়োজনীয় ডিভাইস কিনে দিতে না পারার জন্য তারা আত্মহত্যা করছে, কেউবা আবার চুরি, ছিনতাই ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়েছে। তাই আমাদের উচিত প্রযুক্তি ব্যবহার কমিয়ে আনা। প্রযুক্তির যেমন সুফল রয়েছে, তেমনি এর কুফল ও রয়েছে।