বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আগের সব মহামারি ও দূর্যোগের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, দেশের অর্থনীতির গতি যতবার ভেঙে পড়েছে, যখনই মানুষ চরম বিপদে পড়েছে ততবারই সমাজে কোনো না কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সার্স, মার্স, প্লেগ, স্পেনিস ফ্লো এসবের অভিজ্ঞতা নেই আমাদের। যা কিছু জানি তা ইতিহাস ও সামাজিক যোগাযোগের কল্যানে জানা।
তবে হ্যাঁ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা ছিলেন তাদের গল্প শুনে কিছুটা আন্দাজ করতে পারি অবস্থা কেমন ছিলো। যা জেনেছি তাতপ বলা বাহুল্য মানুষের ভালোর থেকে মন্দ প্রভাবই বেশি পড়েছিলো। মুষ্টিমেয় কজন অবস্থার সুযোগ নিয়ে ফুলেফেঁপে ওঠে হয়তোবা। বাকিরা বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত ও কেউ কেউ একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়।
আমাদের সময়ে এসে করোনা ভাইরাস সম্ভবত সেই সময়গুলোর লক্ষন নিয়ে এল। করোনা মহামারির প্রভাব কতটা ভয়াবহ তা প্রতি মুহুর্তে আমরা স্বাস্থ্য সংস্থা বা সরকারি ও বেসরকারিভাবে খবরের আপডেটের মাধ্যমে অবগত হচ্ছি আমরা। আপাতত সেই প্রত্যক্ষ প্রভাব নিয়েই উত্তাল বিশ্ব ও বিশ্বের প্রতিটি মানুষ। সেটাই স্বাভাবিক। করোনা ভাইরাসটি এখন আন্তর্জাতিক মহামারী হিসেবে ঘোষিত। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। যার প্রতিষেধক এখনও তৈরি হয়নি। বলতে গেলে তা এখনো আয়ত্তের বাইরে। করোনা নিয়ে আতঙ্ক, দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যিক লেনদেন ভয়ঙ্কর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । পর্যটনখাত, বিমান, বিনোদন জগৎ, ছোট-বড় ইন্ডাস্ট্রি, সব ধরনের ট্রেডিং থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রায় সবকিছুই বন্ধ। কাজও বন্ধ তাই আয়ও অনেকাংশে বন্ধ। এর ফলে বহু প্রতিষ্ঠান আগামীতে বন্ধ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা। কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কায় দিন গুনছে অগণিত মানুষের।
এখানে আর একটা কথা বলে রাখা বিশেষ জরুরি। আর তা হলো, কিছু মানুষের অতি তৎপরতা বাড়তি সমস্যার সৃষ্টি করেছে।
মনের ভিতর কিছু প্রশ্ন এই প্রেক্ষিতে ঢেউ তোলে। আত্মকেন্দ্রিক বিপণন সংস্কৃতির বাঁধন থেকে কিছুটা সহমর্মী করে তুলবে আমাদের? আগামীর জন্য এমনটা আশা করতে দোষ কোথায়?
নিজের মনের অজান্তেই কখন যেন পেটের খিদে টেনে নিয়ে যায় অপরাধের চোরাগলিতে। যেখান থেকে আর ফেরা যায় না। অর্থনৈতিক সংকটে সামাজিক এই প্রবণতাও ঘটতে দেখি আমরা বার বার। করোনার থাবা সেখানেও নতুন কিছু অধ্যায় লিখতে চলেছে সম্ভবত।
মারণ ভাইরাস করোনা বিশ্বের বহু মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় মত্ত এখন। কিন্তু একদিন এ খেলার অবসান হবেই। তারপর থেকে শুরু নতুন লড়াই। মানুষের নতুন করে বাঁচার পরীক্ষা। করোনা চলে যাক। সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে মনুষ্যত্ব জয়ী হোক।
সবাই ভালো থাকবেন। আপনার আশপাশের মানুষটির খোঁজ নিবেন। আল্লাহ হাফেজ।