আমি নয়ন ।আমার জীবনে আনন্দ বলতে কিছুই নেই । আছে শুধু কষ্ট আর যন্ত্রনা।কেন??বলছি শুনুন: আমার বয়স যখন চার তখন আমার বাবা মারা যায়।তখন থেকেই আমাদের কষ্টের জীবন শুরু হয়। মা মানুষের বাসায় কাজ করে কোনো রকম সংসার চালাতেন। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর শুরু হলো ঝামেলা।মা যে বাসায় কাজ করতো সে বাসার আংকেল মা কে খারাপ প্রস্তাব দিতো।বলে রাখা ভালো,মা দেখতে খুব সুন্দরি ছিলেন।মা বাসায় এসে খুব কান্না করতেন। আমি কিছু বললে বলত মারে তুই এখন এসব বুঝবি না।এভাবে চলল আরও কিছু দিন। যত দিন যায় মায়ের কাজ করা আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছিল ।
তাও আমাকে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে বলে মা কাজটা ছাড়তে পারছিলনা।এভাবে দিন যেতে লাগল।আমাকে মা একটা ছোট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। আমি লেখাপড়ায় অনেক ভালাে করতে লাগলাম। মা ও অনেক খুশি আমার উন্নতি তে। আমি ক্লাস ফাইভে উঠলাম।হঠাৎ একদিন দেখলাম মা কাদঁতে কাদঁতে আসছে অনেক চেষ্টা করেও কিছু জানতে পারলামনা।এরপর থেকে দেখতাম মা শুধু মনমরা হয়ে থাকতেন কোন কথা বলতেননা।একদিন দেখি সেই আংকেল আমাদের বাসায়।মা উনাকে দেখে চমকে ।উঠলেন।
মা বলল ‘আপনি কেন এসেছেন এখানে?” উনি বলল- তুমি জান না আমি তোমার কাছে কি চাই??আমার কথায় রাজি হলে তোমার জীবনে আর কোনো অভাব থাকবেনা।আর যদি রাজি না হও তাহলে আমি ছিনিয়ে নেব যা আমি চাই।মা বলল – আপনি চলে যান এখান থেকে।এই কথা বলায় উনি খুব রেগে গেলেন।তারপর উনি মাকে টানতে টানতে ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলেন।মা নিজেকে বাচাঁতে অনেক চেষ্টা করলেন ,কিন্তু পারলেননা। আমি ও মায়ের আচঁল ধরে রাখলাম শক্ত করে,উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন।উনি ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলেন।আমি বাইরে বসে বসে কান্না করছি।কিছুক্ষণ পর উনি উনার লালসা মিঠানো হলে বেরিয়ে আসলেন।মা তথন ও বিছানায় পড়ে আছেন ।
আমি মাকে জড়িয়ে কান্না করছি।মা যেন মূর্তি হয়ে গেছেন,কোন কথা বলছেননা।এই ঘটনার পর থেকে মা কেমন যেন হয়ে গেছেন।আগের মতো আর কথা বলেননা,আমাকে কাছে ডেকে আদর ও করেননা।খুব কষ্ট হয় মাকে এই অবস্থায় দেখতে।একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মা এখনও উঠে নি।আমার চিন্তা হলো খুব ,আবার শরীর খারাপ করলো নাতো??গিয়ে গায়ে হাত দিয়ে দেখি শরীর একেবারে ঠান্ডা বরফের মতো।
যাক্ বাচাঁ গেল জ্বর তো নাই গায়ে।কিন্তু এরপর অনেকক্ষণ ডাকলাম মা আর উঠলনা। অনেক অভিমান নিয়ে চলে গেল আমাকে ছেড়ে। কিন্তু কি দোষ ছিলো আমার,মা কেন আমার সাথে অভিমান করল??সেই প্রশ্নের উত্তর আজ ও পাইনি।আমি এখন এক ঠিকানাহীন যাযাবর।
যার কোনো ঘর নেই,পরিবার নেই,নেই কোনো ঠিকানা।কখনো ফুটপাত কখনোবা গাছের তল এখন আমার ঠিকানা।এভাবেই একটা অবহেলিত জীবনের গল্প চলতে থাকবে।কোন একসময় সেই গল্প শেষ ও হয়ে যাবে কিন্তু তার খবর কেউ রাখেনা রাখবে ও না।