রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও এই দুনিয়াতে আরও একটি সুন্দর সম্পর্ক আছে সেই সম্পর্কটির নাম বেস্ট ফ্রেন্ড। আপনি হয়তো এখন ভাববেন যে বেস্ট ফ্রেন্ডরা সবাই হতে পারে আসলে না বেস্ট ফ্রেন্ড যে সে হতে পারে না বেস্ট ফ্রেন্ড আছে যে মনের কথা অনেক দূর থেকে বুঝতে পারি নিজেকে আমার নিজের মতো করে বুঝে।
নিজের বিপদের সময় কোন কিছু না বলেই সাহায্য করে। কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ড শুধু বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা এতে ভালোবাসা পর্যন্ত ছড়িয়ে যায় সম্পর্কে যা কখনো একে অপরকে ভালোবেসে ফেলি তা বোঝা যায় না কথা বলতে বলতে কখন যে ভালোবাসা হয়ে যায় তা কেউ বুঝতেই পারেনা।
এখন কথা বলতেছি আমার বন্ধুত্ব নিয়ে আজ আমার বন্ধুত্বের প্রায় দুই বছর পূর্ণ হল সেই ২০২২ সালে যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়তাম তখন আমাদের মধ্যে হঠাৎ করে একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রথমের দিকে বুঝতাম না যে বন্ধুত্বটা আসলে কি বেস্ট ফ্রেন্ড আসলে কি। আমাদের বন্ধুদের প্রথম তিন চার মাস বেশ ভালই কাটছিলাম প্রতিদিন নিয়মিত করে সময় করে কথা বলতাম দিনে সম্পর্কে বলতাম পুরো দিনটি কেমন গেল তাও বলতাম নিজের ভালোবাসা ভালোলাগা এসবও সেয়ার করতাম একে অপরের সাথে। এভাবেই দেখতে দেখতে আমাদের তিন চার মাস চলে গেল সেই প্রতিদিন দূরে থেকে তিনবার কথা বলার মধ্যে দিয়েই আমাদের সময় চলে গেল।
এরপরেই তো আসল কাহিনী শুরু হল যখন আমার দেবনাথের তিন চার মাস পূর্ণ হল তখন থেকেই অনেক বাধা বিপত্তি আসতে লাগলো। আমি কিন্তু একজন হিন্দু ছেলে ছিলাম আর সেই একজন মুসলিম মেয়ে তাই এটা স্বাভাবিক যে আমাদের বাড়ি থেকে আমাদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটা মেনে নিবে না।
কিন্তু তারপরও আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলতাম এবং আমরা স্কুলে অনেকটা সময় একে অপরের সাথে কথা বলতাম কখনো হয়তো লুকিয়ে কখনো হয়তো স্কুলের মধ্যে। এভাবেই আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা এগিয়ে যেতে লাগলো। এরই মধ্যে আমার একে অপরকে অনেক কথা দিয়ে রেখেছি যে যায় কিছু হয়ে যাক না কেন আমরা আমাদের বন্ধুত্ব কোনদিন নষ্ট হতে দিব না। এভাবেই আমাদের অষ্টম শ্রেণীর ব্যাপার হয়ে যায়।
এখন আমরা নবম শ্রেণীতে পড়ি। এরই মধ্যে নতুন বছরে আমাদের ক্লাসে অনেক নতুন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে মুন্না। মুন্না দেখতে বরাবরের মতো অনেক সুন্দর যে কোন মেয়ে দেখলেই তার প্রেমে পড়তে বাধ্য । সেখানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড টাও আর বাকি রইল না। সেও লুকিয়ে লুকিয়ে মুন্নার সাথে কথা বলতো আমাকে না জানিয়ে। তাদের প্রেমের সম্পর্কের এক মাস পর একুশে ফেব্রুয়ারির দিন আমি ওদের বিষয়টা জানতে পারি যে ওরা একে অপরের সাথে প্রেম করে। বিশ্বাস করেন এই কথাটা জানার পর আমার আর কোন কিছুই ভালো লাগতেছিল না মনে হচ্ছিল যে অনেক দামি কোন একটা জিনিস হারিয়ে ফেলেছি। তারপরও নিজেকে সামলিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে আমাকে কেন এসব বলিস নি।
কে বলল যে এমনি এমনিই শুধু তার সাথে একটু সময় কাটাচ্ছি। আমি তার চোখে মুন্নার জন্য অনেক ভালোবাসা দেখতে পারতাম। আমি দেখতে মুন্নার সাথে কথা বলতেছি অনেক ভালোবাসতো সে অনেক খুশি থাকতো যখন তার সাথে কথা বলতাম তাই আমিও এখানে আর তেমন কোন কিছুই বললাম না যেহেতু সে অনেক খুশি আছে। আর এদিকে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে কারণ আমি হয়তো দিনে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে ভালবেসে ফেলেছি। কিন্তু কথা হয়েছে যদি ভালোবাসার মানুষটির সুখে থাকায় দেখতে না পারো তাহলে ভালোবাসা কিসের।
তাই আমিও তা সুখের জন্য নিজের ভালোবাসাটা কোরবান করে দিলাম। এখনো আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটি আছে আমাদের মাঝে এখনো কথা হয় কিন্তু সেই আগের মত আর কথা হয় না। আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের যখন ওর সাথে ভিডিও কলে কথা বলে তখন কেন জানি আমার অনেক খারাপ লাগে শুধু তাই নয় সে যখন ক্লাসের সময় তার পাশে বসে তার সাথে কথা বলত তখনও কেন জানি আমার ক্লাসে থাকতে ইচ্ছা করত না তাই আমি ক্লাস থেকে বের হয়ে আসতাম।
হয়তো সে এটা বুঝতে কিন্তু কোন কিছু বলতো না। আমার তো আর কোন কিছু করার নেই। এখন আমি যখন বুঝতে পারি যে সে আমার মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছেনা সে অন্যের সাথে কথা বলতেছে তখন আমি নিজেই অনলাইন থেকে বের হয়ে যেতাম যাতে সে আমি তার সাথে ভালোভাবে কথা বলতে পারে। সে অনেকবার বলেছিল যে বেস্ট ফ্রেন্ড আর ভালবাসার মধ্যে সে সব সময় বেস্ট ফ্রেন্ড কে বেছে নিবে। মানে তার জীবনে বেস্ট ফ্রেন্ড সব সময় আগে থাকবে। কিন্তু তার জন্মদিনের সময় সে যখন কেক কাটছিল কাটার পর সে মুন্নার আমাকে একসাথে খাওয়া দিল যাতে আমাদের মধ্যে কোন কমবেশি না হয় আমরা যেন মন খারাপ না করি কিন্তু এখানে একটা দুঃখের বিষয় হচ্ছে সে আমাকে বাম হাত দিয়ে খাওয়ায় দেয় আর মুন্নাকে ডান হাত দিয়ে। বিশ্বাস করেন সেদিন আমার এতটা যে খারাপ লাগছিল আর কিছু বলার ছিল না।
আমিও কিছুদিন পর ওর মায়াটা কাটানোর চেষ্টা করি কিন্তু এটা জানি কোনদিন সমান হবে না হয়তো এখানে একতরফা ভালোবাসাও হতে পারে। আমি অবশ্য একতরফা ভালোবাসা মানে বুঝতাম। এখন আমাদের বন্ধুত্বের প্রায় দুই বছর হয়ে যাচ্ছে আমি এখন আমার নিজেকে ভবিষ্যতের দিকে ফোকাস করতেছি। আর সে এখনো মুন্নার সাথে প্রেম করে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে আমাদের বন্ধুত্বটা শেষ করে দেই হয়তো তারও ইচ্ছে করে মাঝেমধ্যে কিন্তু কি করার আমরা দুজনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এরই মধ্যে তার মায়ের সাথে আমার অনেক সুন্দর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তার মা আমাকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসে। আর হ্যাঁ এটা তো বলেই হয় নাই ওরা চার বোন ওর মায়ের কোন ছেলে সন্তান নেই তাই হয়তো আমাকে এতটা ভালোবাসে। তার মাও আমার সাথে অনেক সুন্দরভাবে কথা বল। আমাকে বাবা বলে বলে ডাকত। এভাবেই আমাদের বন্ধুত্বের দিনগুলো যাচ্ছে হয়তো আমাদের মধ্যে এখন আগের মত কথা হয় না কিন্তু আমাদের মধ্যে এখনো সেই আগের টান আছে। আমরা পরের দিন নিজেকে কিছুটা সময় একে অপরকে দেই। এভাবেই চলতেছে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
কোন ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকলে সেটা হয়তো বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা হয়তো কোন এক সময় ছেলে অথবা মেয়ের মধ্যে কেউ একজন একে অপরকে ভালবেসে ফেলবে। সকলে দোয়া করবেন আমাদের বন্ধুত্বটা যেন সারা জীবন থেকে যায়। আমাদের যেন কোনদিন বিচ্ছেদ না হয়। সকলেই ভালো থাকবেন।
রচনা ও লেখক: জীবন রায়
ই-মেইল: [email protected]