*** কৈশোরের লালায়িত প্রেম ****-
“” মন্দিরা” ভালোবাসার প্রতিমা সেই কৈশোর থেকে মনে মনে ভালোবেসে ” দোল ” কে। যখন ১৫ বছর বয়স, তখন থেকে দোল কে ভালোবেসে আজ সে শূন্য, রিক্ত। কৈশোরের শেষ লগ্নে, যৌবনের পদার্পণের প্রারম্ভে, মন্দিরার অবুঝ মনে প্রেম নামক ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে, বুঝতে পারেনা শুধু অনুভুতি কাজ করে, আর দোল নামক পুরুষটা তার হৃদয়ে বার বার ছুঁয়ে যায়। দোল পাশের বাসার ইব্রাহীম কাকার বাসায় থেকে কলেজে পড়ে।
বি, এস, সি পরিক্ষা দিবে, গুরুদয়াল কলেজে পড়ে, স্মার্ট, টলফিগার,ভদ্র, রাস্তা দিয়ে যখন হেঁটে যায়, মনে হয় ধুলো গুলি পায়ে চুম্বন করছে। কারনে অকারনে দেখতে ইচ্ছে করে, এটা কৈশোরের মনের আবেগ, দৈহিক চাওয়া পাওয়া নয়। ” দোল” ৮ বছরের বড়, একদিন দোল মন্দিরা কে বলল, মন্দিরা তুমি কাল সকালে ৬ টায় হাঁটতে হাঁটতে উচ্চবালিকা স্কুলের সামনে থেকো। মন্দিরা: সারারাত গুম হয়নি কখন সকাল হবে, দোলের সাথে দেখা করতে যাবো। ইস মনের মাঝে কত শিহরণ। সকাল হলো চলে এলাম স্কুলের সামনে, দোল আমার আগেই এসে দাড়িয়ে ছিলো, গেইট খুলে ভিতরে ডুকলো আমাকে নিয়ে। দোল আমার চোখে চোখ রাখেনি, ভাবলাম লজ্জায়। একটু পরে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে আমার কাছে, কেমন একটা ইঙ্গিত করে আমাকে কাছে টানে, আমি সরে যায় ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে আসি। দোলের মনে ছিলো দেহগত ভাবে পাওয়ার আকাংখ্যা, প্রচন্ড লোভ প্রচন্ড খোদা।
মন্দিরা অন্ধবিশ্বাসে বুঝতে পারেনা, তাই দোল যখন মন্দিরা কে কাছে টানলো, গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ করতে চেয়েছিলো, মন্দিরা ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। দোল মনে কষ্ট পায়, অপমান বোধ করে, বিকেলে বাসার সামনে গেলাম, দোল বলল কি ব্যপার দৌড়ে পালালে কেন? কোন কথায়তো হয়নি। তুমি আমাকে ভালোবাসোনা?
মন্দিরা: লজ্জায় কিছু বলতে পারেনি, মনে মনে বলল, দোল তুমি আমার চোখের ভাষা পড়তে পারোনা? মুখ ফুটে বলতে হবে যে ভালোবাসি, একটু মুচকি হেসে চলে আসি। হটাৎ বিনা নোটিশে দোল শহর ছেড়ে চলে গেলো, পাশের বাড়ির রুমির কাছে একটা কাগজের টুকরো আর টকটকে একটা লাল গোলাপ দিয়ে বলে গেলো মন্দিরাকে দিতে। সুর্য স্নাত সকাল ঘুম ভাঙলো মন্দিরার দূচোখ শুধু জানালার ফাকে চেয়ে খুঁজে, না দোল কে দেখতে পাচ্ছেনা অস্থির অস্থির লাগছে ছট ফট করছে কিশোরী মন। একেমন অনুভুতি এ কেমন হৃদয়ের টান ঘরে টিকছে না মন। এমন সময় রুমি এলো কাগজের টুকরুটা আর গোলাপটা হাতে দিলো। কাগজটা খুলল লিখা… নাই টেলি ফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলি গ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌছায়তাম। ইতি,
* দোল *আর তার ঠিকানা।
মনের অজান্তে চোখের জলে ভাসিয়ে দিলো মনের সব গভীরতা, যত্ন করে কাগজের টুকরুটা রেখেদিলো, গোলাপটা একটা বইয়ের ভিতর রেখেদিলো, সকাল সন্ধা কাগজটা পড়তে পড়তে চোখের জলে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু লিখাটা তার অবুঝ মনে ক্ষত হয়ে রয়ে গেছে। আর চাতক পাখির মতো তার অপেক্ষায় চেয়ে থাকে পথের দিকে, হটাৎ এক বছর পর পরিক্ষা হলে এসে উপস্থিত দোল, অজস্র অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নেয় মন্দিরা। দোল বুঝতে পারেনি সেটা ক্ষত হৃদয়ের আক্ষেপ, ভুল বুঝে চলে গেলো আর এলোনা।অপেক্ষায় প্রহর গুনতে, গুনতে,
২২ বছরে পা দিলো মন্দিরা, তার একটা সথী দরকার, ভালোবাসা পাওয়ার ভালোবাসা দেওয়ার জন্য, ঝড় বাদলের রাতে ভরসা হওয়ার জন্য কাউকে পাশে দরকার, প্রসস্ত চৌড়া একটা নির্ভর যোগ্য বুক যেখানে মুখ লোকিয়ে কেদে কেদে নিঃশ্বাস নিবে। একা থাকা যায়না, প্রেম একবার শুধু নিরবে আসেনা, মনটা এতো ছোটনা যে ওখানে শুধু একজনের জন্যই সীমা বদ্ধ থাকবে?। মনটা অনেক বড়, একটা মনেই আটকে থাকে না, বাস্তবতা মেনে নিতেই হয়, নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য। মন্দিরার জীবনে এলো আর একজন পুরুষ, বিয়ে করলো,একটা ফুট ফুটে মেয়ে হলো, সুখি সংসার হলো। মনের সবটুকু দিয়ে তার স্বামী, সন্তান সংসারকে ভালোবেসে বুকে আগলে রাখে।
তার পরেও মন্দিরার হৃদয়ে সেই যুগ যুগ ধরে কচিঁ মনের ক্ষত লালান করে যায়, আর মনে প্রানে খুঁজে দোল কে, যদি একবার দেখা পেতো? বলে দিতে মনের ভালোবাসার ভালোলাগার কথাটা, একদিন ঐ ঠিকানায় একটা চিঠি লিখে কোন উত্তর পেলনা, ভাবল হয়তে ঐ ঠিকানায় ওনি থাকেনা, নয়তো ওনি চিঠিটা পায় নাই। মন দিয়ে খুঁজলে আল্লাহকে পাওয়া যায় আর এটা তো ঠিকানা জানা একটা মানুষ, মন্দিরার মনে প্রবল বিশ্বাস ছিলো একদিন খুঁজ পাবে। খুঁজতে থাকে অনেক লোকের মাধ্যমে।
হটাৎ ২৯ বছর পর অনেক সাধনায় খুঁজে পেলো দোলের নাম্বার।তার চোখে মুখে আনন্দের বন্যা কখন কথা বলবে, কি বলবে এতো বছর পর?? ভাবছে না কলটা করেই ফেলল।ক্রিং ক্রিং অপর দিক থেকে কন্ঠ এলো হেলো হেলো কে বলছেন প্লিজ।
মন্দিরা: আপনি কি দোল? আমার সেই কৈশরের লালায়িত প্রেম যাকে আমি যত্নে এতো বছর আগলে রেখেছি হৃদয়ের মন্দিরে?
উত্তর এলো আমি দোল সেই দোল যে ঠিকানা বলেছেন সবি ঠিক আছে কিন্তু আপনি কে?
মন্দিরা: আমি মন্দিরা, সেই ছোটবেলার আপনার মন্দিরা,
দোল: সরি আমি চিনতে পারছিনা, দেখুন কর্ম জীবন নিয়ে এতো ব্যস্ততায় আছি সংসারের টানা পুরুনায় ব্যস্ততায় কেটে যায় দিন রাত, আমার অনেক কাজ হাতে, বেসরকারী একটা কোম্পানিতে জব করি, প্রচুর খাটতে হয় বউ বাচ্চা আছে। আমি এখন রাখছি বস ডাকছে।
মনটা ভেঙ্গে গেলো, স্তব্দ হয়ে হলো হাত পা নিমিষেই, তার পৃথিবীটা অন্ধকারে ছেঁয়ে গেলো। এটা কি পুরুষের ভালোবাসা যা ক্ষণিকের তরে এসেছিলো? আবার চলে গেলো, মেয়েরা বোধ হয় এমনি হয়, প্রথম জীবনের ভালেবাসা মানুষটাকে ভুলতে পারেনা শত সুখ দুঃখেও। হৃদয়ে একটা ক্ষত হয়ে যায়, আর ছোট ছোট ক্ষত গুলাকে অবহেলা করা ঠিকনা, এক দিন পাহাড় সম হয়ে উঠে জমে জমে, প্রতি নিয়ত রক্ত ক্ষরণ হয় কেউ জানতে পারেনা।
মন্দিরা চিৎকার করে বলে হে মানুষ তোমরা তোমার মনের ভালোবাসাটাকে গোপন করোনা, লালান করোনা, খোলা আকাশের নীচে দুহাত মেলে আকাশ, বাতাস সবাইকে সাক্ষী রেখে বলে দিও তোমার মনের কথা, না হলে আমার মতো ধুকে ধুকে নিষ্পেষিত হয়ে যাবে।কাসতে কাসতে গলা দিয় রক্ত এলো এখন মৃত্যুর দোয়ারে দাড়িয়ে হয়ত দোল জানতেও পারবেনা।
মন্দিরা :- অনন্ত কাল মনে প্রনে ভালোবেসে এসেছি তোমায়, আর দোল আজ বলছো আমায় চিনতেই পারছোনা। এটা কি বলব, আমার একতরফা ভালোবাসায় ছিলো??
দোল আমি যে তোমায় ভালোবেসে শুন্য হয়ে গেলাম। আমার হৃৎপিন্ডে যে প্রতি নিয়তো রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে, আমার আত্নার আর্থনাদ তোমার হৃদয়ে পৌছায়নি?
দোল: কি হলো আজ হঠাৎ মনের কোণে কে উকি দিচ্ছে?
কেন বার বার অস্পষ্ট একটা মেয়ে, চোখের সামনে ভেসে উঠছে? কেউ আমার মনে যেন দোলা দিচ্ছে? অনেক বছরের বন্ধ দরজায় কে যেন কঠিন ভাবে কড়া নাড়ছে।
আমার অস্থির লাগছে কেন? ঘুম আসছেনা ভেবে ভেবে তন্দ্রাচ্ছন্ন হঠাৎ একটা শব্দ ভেসে আসলো কানে
দোল, দোল, তুমি শুনতে পাচ্ছো? আমার আত্নার আর্থনাদ? আমি তোমার সেই কৈশরের মন্দিরা।
কিছুক্ষণের জন্য পৌঁছে গেলো সুদূর অতীতে, সেই ছোট মন্দিরা, যাকে কাছে পেতে চাইতাম, ভয়ে পালিয়ে যেতো।
কত বার ডেকেছি একটু কাছে আসো, না আমাকে দেখলেই ভয়ে দৌড়, আর সুযোগ পেলেই, জানালার পাশে উকি দিয়ে আমার দিকে চেয়ে থাকতো।
চোখের পলকই পড়তোনা। মনে পরে গেলো একদিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পিছন দিক দিয়ে কে যেন পানি ছিটে দিলো, ফিরে দেখি মন্দিরা। ধরতে গেলাম, দৌড়ে পালিয়ে গেলো ছুঁতে পারলামনা।
খুব ইচ্ছে করতো ওকে একটু ছুঁয়ে দেখি, একটু সময়ের জন্য জড়িয়ে ধরি,আদরে আদরে ভরিয়ে দেই।
কিন্ত মন্দিরা পাগলিটা আমার আবেগ টা বুঝেনা, শুধু দূরে দূরে থাকে। আজ বার বার ফিরে যাচ্ছি সেই অতীতে, ভীষণ একটা ভালোলাগা কাজ করছে মনে, চোখে সামনে শুধু মন্দিরাকেই ভেসে আসছে।
লাফ দিয়ে উঠে, মন্দিরা বলে ডেকে উঠলো। আজ যেন সকাল হতেই চাচ্ছেনা। ঘড়ির কাটা কেমন যেন চলছেইনা কখন যে অফিসে যাবে মন্দিরাকে কল দিবে।?
তার হুরা করে অপিসে চলে এলো,
দাড়োয়ান :- সাহেব আজ এতো সকালে?
দোল :- কি যে বলো এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।
দাড়োয়ান :- আশ্চর্য যিনি কিনা প্রতি দিন সময়েরও অনেক পরে আসে আজ এতো তারাতারি, কি জানি বাপু বড়দের বড় ব্যপার যাক।
দোল :- রুমে ডুকেই সেই দিনের রিসিভ কল থেকে নাম্বারটা খু্ঁজে কল দিলো।
ক্রিং ক্রিং বেজেই যাচ্ছে,
মন্দিরা :- এই দেখতো কে কল দিলো আমার বাচ্চাদের টিফিন বানানো শেষ হয়নি স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।
সাহেব :- আননুন নাম্বার কেটে গেছে।
মন্দিরা :- বাদ দাও তারা তারি বের হও কাজে যেতে হবে।
এই বলে ভুলে মোবাইল বাসায় রেখেই চলে এলাম।
অনেকবার কল দিলো বেজেই গেলো। ঘন্টা দুয়েক পর।
মন্দিরা :- বাসায় ফিরলাম দেখিতো কে তখন এতো বার কল দিয়েছিলো?
ক্রিং ক্রিং,,,,,,,,
– হেলো কে বলছেন প্লিজ?
দোল :- আমি দোল তোমার সেই কৈশরের নিষ্পাপ ভালোবাসা।
মন্দিরা :- দু চোখ বেয়ে জল পড়ছে। থ মেরে আছে মুখ দিয়ে কোন কথা আসছে না, আজ যে শুধু শুনতে মন চাইছে।
দোল :- কি হলো কথা বলবেনা
মন্দিরা :- তুমি সত্যিই দোল তো আমার দোল?
দোল :- হুম আমি দোল।
মন্দিরা :- এতো বছর পড়ে মনে আচড় কেটেছে তোমার?
দোল:- হা অনেকটা দেরি হলেও আমার বার্ধক্যে প্রারম্ভে এসে হৃদয়ে নাড়া দিয়েছো। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মন্দিরা।
তুমি আরো আগে আমার জীবনে কেন এলেনা?
তাহলে আজ আমার জীবনের খাতার পাতাগুলো এলো মেলো কালো কালির আচরে ভরাট হতোনা আরও রঙিন হতো।
মন্দিরা :- না গো আমি অনেক খুঁজেছি তোমায় সেই কৈশোরের শেষ লগ্ন থেকে।
আর আজ যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যের প্রারম্ভে পৌছেছি।
অনেক সাধনায় অনেক খুঁজে পেলাম তোমার সন্ধান।
আমিও যে অনেক ভালোবাসি তোমায়।
দোল :- চলো আমরা নতুন করে সপ্ন সাজাই।
মন্দিরা :- কিভাবে???
দোল :- কেন আনন্দে আর উল্লাসে
মন্দিরা :- চলো হারিয়ে যাই।
দোল :- কোথাই???
মন্দিরা :- কেন? সপ্নের সাগরে।
দোল :- চলো তবে হাতে হাত রেখে পথ চলি একসাথে।
হঠাৎ দরজায় কড়া নড়ে উঠলো ঠক ঠক।
মন্দিরা এখন রাখছি আবার কথা হবে।
কে? দরজা খুলে এগিয়ে এলোও সাহেব তুমি এসেছো?
সাহেব :- হুম।
মন্দিরা :- আজ কাজে যাওনি ফিরে এলে যে?
সাহেব :- না শরীরটা ভালো লাগছেনা।
মন্দিরা :- ওকে শুয়ে থাকো আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
তোমার সাথে কিছুু কথা ছিলো। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলতে থাকে জানো আজ আমার মনটা খুব উৎফুল্ল, আমার সেই কৈশরের,,
সাহেব :- উফ এতো কথা বলছো কেন চুপ করোতো আমার ভালো লাগছেনা এতো ঘ্যান ঘ্যান করছো কেন?
মন্দিরা :- সাহেবের বিরক্তি দেখে মনটা ভার হয়ে গেলো।
মন্দিরা সাহেব কে অনেক ভালোবাসে ও ঠকাতে চায়না তাই দোলের কথা সাহেব কে বলতে গিয়েছিলো।
কিন্তু সাহেব কিছু শুনলোনা ঘুমিয়ে গেলো।
কয়েক দিন কথা বলার পর খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে দুজন দুজনকে।
মন্দিরা :- দোল তোমায় দেখবো
দোল :- শুধুই দেখবে?
মন্দিরা :- না
দোল :- তাহলে?
মন্দিরা সেই ভুলটা আর করবোনা যে ভুল কৈশরে করেছিলাম।
দোল:- কি করবে বলোনা প্লিজ?আমার শুনতে খুব ইচ্ছে করছে প্লিজ বলোনা?
মন্দিরা :-এখন আর বলবোনা করেই দেখাবো।
দোল :- কি দেখাবে?
মন্দিরা :- তুমি চোখ বন্দ্ধ করে দুহাত বাড়িয়ে দাড়িয়ে থাকবে, আমি তোমার বাহু ডুরে নিজেকে আবদ্ধ করবো।
তুমি নিথর হয়ে দাড়িয়ে থাকবে। আমি আমার পিপাসিত অধরের তুলিতে ভালোবাসার আল্পনা একে দিবো তোমার কপালে ভালোবেসে।
দোল:- ওকে তাই হবে আমি আসছি তুমি অপেক্ষা করো কয়েকটা দিন।
মন্দিরা ;-২৯ বছর অপেক্ষার প্রহর গুনতে পেরেছি আর মাত্র কয়েকটা দিন পারবোনা কেন?
মন্দিরা :- তুমি বল্লে এমন আরো কয়েকটা ২৯ বছর পার করতে পারবো অপেক্ষা করে। এইভাবে কেটে গেলো কয়েকটা দিন।
সাহেব ঃকি ব্যপার মন্দিরা তোমাকে বেশ পুলকিত লাগছে,?
মন্দিরা ঃ হুম সেটাই তোমাকে সেদিন বলতে চেয়েছিলাম
তুমি তো শুনতেি চাওনা।
সাহেব ঃ আজ শুনবো বলো,।
মন্দিরা ঃ তুমি আমার স্বামী, আজ তোমাকে একটা কথা বলবো, তুমি কিভাবে সেটা নিবে,সত্যিই আমি জানিনা।
সাহেব ঃ আহা এতো বনিতা কেন বলেই ফেলোনা। টাকা লাগবে? শাড়ী কিনবে নাকি গহনা? আচ্ছা বলো কত চাই তোমার।
মন্দিরা ঃ না গো এই সব কিছুই না, আজ অন্য কথা বলবো, আমি যখন ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠবো,
তখন দোল নামের একটা ছেলে আমার জীবনে আসে
তখন ভালো লাগতো তাকে দেখলে শুধু এই টুকুই বুঝতাম, বড় হবার পর আর দেখা হয়নি, এমন কি কোন খুঁজ ও পাইনি। আমি মিস করতাম প্রচন্ড,বিশ্বাস করো এর বেশী কিছুই না। আমি তোমাকে কোন দিন ঠকাইনি।
একটা স্ত্রীর তার স্বামীকে যতটা ভালোবাসার দরকার, আমি ততটাই ভালোবেসেছি তোমাকে।
তোমার জায়গা তোমারই।
সাহেব ঃ কি সব বলছো? বিয়ের পর স্বামীই সব, এইসব আর বলবেনা কোন দিন। আমার ভালো লাগছেনা।
মন্দিরা ঃ হায় হায় কেন বলতে গেলাম? এখনতো আরো হিতে বীপরিত হলো, আমাকে তো এখন সন্দেহ করবে।
ভুলে গিয়েছিলাম, স্বামী স্বামীই হয়, স্বামী কখনও বন্ধু হতে পারেনা।
মনটা ভার হয়ে গেলো। যায় হোক কি আর করা।
ইদানিং লক্ষ করছি সাহেব আগের মতো খোলামেলা নয়,কেমন যপন একটা হয়ে গেছে। কেন যে বলতে গেলাম,নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলাম।
দোল ঃ হেলো মন্দিরা,আমি আসবো দু তিনের ভিতর।
দোল আসছে সেই কি আনন্দ মনে।
মন্দিরা আচ্ছা এতো বছর পর দোল আসছে ওর সামনে যেতে লজ্জা করবে?
মন্দিরা কল দিলো হেলো কবে আসছো? দোল :- এইতো আজি আসতেছি এখন রাস্তায়, কাল বিকেলে পার্কে তোমার সঙে দেখা করব।
মন্দিরা ঃ তুমি যে বল্লে দু তিন পর আসবে, ভেবেছিলাম আজ এসে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো। পার্কে নয়, তুমি
আমার বাসায় আসো প্রবলেম হবেনা।
দোল :- ওকে কাল আসবো শুধু তোমার জন্য ।
মন্দিরা ঃ ভালোই হলো কাল সাহেব টুরে যাবে, দোলকে মন ভরে দেখতে পাবো, কেমন হয়েছে দোল দেখতে?
সেই কত বছর দেখিনা, ইশ কিযে এক্সাইটেড লাগছে,
সময়টা যে কাটছে না।
কেটে গেল রাত, সাহেব চলে যাবে, তারাহুরা করে নাস্তা
করলো সাহেব।
সাহেব ঃ আমার ফিরতে দু দিন লাগবে, সাবধানে থেকো, এই বলে চলে গেলো।
মন্দিরা ঃভেবেছিলো রজনীগন্ধা হাতে নিয়ে দোল সামনে এসে দাড়াবে, এতো বছরের সব অভিমান মুছে যাবে।
অনেক কিছুু রান্না করলো দোলের জন্য, নীল একটা শাড়ী পড়ে নীল একটা টিপ কপালে, আর লাল টকটকে লিপিস্টিক দিয়ে অধর দূটুকে রাঙালো, এতে সুন্দর লাগছে নিজেই লজ্জা পেলো।
দোলের জন্য একটা মেরুন কালার শার্ট কিনলো, কুব মানাবে মনে মনে ভাবা।
বিকেল হয়ে, সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, অনেক বার কল দিলো দোল রিসিভ করছেনা কেন?
কি হলো কল রিসিভ করছে না, মেসেস রিপ্লাই নাই, খুব টেনশনে পরে গেলো মন্দিরা।
এতো বছর যার জন্য অপেক্ষা আজ সেই দিন এসেও দেখা হবেনা?
মন্দিরার চোখ দিয়ে অঝরে জল পরছে কেন এলেনা, আমি তো তোমার রুপ যৌবনকে ভালোবাসিনি তোমাকে দেহগতভাবে পেতে চাইনি।
শুধু একটি বারের জন্য তোমার বুকে মাথা রেখে নিঃশ্বাস নিতে চেয়েছিলাম। সেই সুযোগ আমায় দিলেনা।
তুমি স্বার্থ পর, ভীতু কাপুরুষ তোমার জন্য এই পৃথিবীটা নয়। এই বলে মোবাইল বন্ধ করে মুখ থুবরে পড়লো চোখ তুলে দেখলোনা। জানিনা দোল জানতে চাইবে কিনা মন্দিরা কেমন আছে।
১০ দিন পর কল দিলো দোলকে, কেন আসোনি সেদিন,?
দোল :- দেখো আমার স্ত্রী আমাকে কোথাও যেতে দেয়নি,
মন্দিরা :- এটা কল দিয়ে জানালেই পারতে রিসিভ করোনি কেন?
দোল :- আসলে আমার স্ত্রী তখন আমাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলো তাই।
মন্দিরা :- তা একসময় জানালেই পারতে।
দোল :- আসলে কি বলবো বুঝতে পারিনি।
।মন্দিরা :- তুমি বদলে গেছো, দোল, আমার কোন মুল্যই নেই তোমার কাছে। তুমি ভালো থেকো তাহলে বুঝবে তোমার জন্য কেউ ভালো আছে।
দোল তোমাকে না খুঁজে পেলেই মনে হয় ভালো ছিলো, যখন পেলাম মনে হলো মন্দিরার জীবনের জোৎস্নাটাই চলে গেছে।
মন্দিরার সবটুকু ভালোবাসা তোমার জন্য আর তোমার সবটুকু অবহেলা নিয়ে জীবন্ত লাশ হয়ে রইলাম।
মনের কোণে হাজারো কষ্ট জমা রেখে, একমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে আছি।
সাহেব আর মন্দিরার মাঝে একটা ফাঁক তৈরী হয়ে গেছে,
সেই ফাঁক টা কিছুতেই ভরাট হচ্ছে না।
মেয়ে বড় হয়েছে, মাবার ইচ্ছে মেয়েকে মেডিকেলে পড়াবে,
কিন্তু না মেয়ে ডাক্তারি পড়বে না, কি আর করা।
মন্দিিরা ও পেটে থাকাকালীন সময় নাম ঠিক করে রাখে, অথৈ, এই নামটা খুব পছন্দের, তাই অথৈ বলেই ডাকে।
দেখতে বেশ মিষ্টি, হরিণী চোখ দুটো, বাঁকা চাদের মতো দুটো ঠোঁট, যেন হাসিতে ফুল ফুটে, কাঁদলে বৃষ্টি ঝড়ে। মেঘ কালো চুল, কোকিলা কন্ঠ, যে কোন ছেলে প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ে যায়।
প্রথম এলো ঢাকা, মা, বাবা ছাড়া একা কোথাও থাকেনি,
হোস্টেলের খাবার খেতে পারেনা, তাই বাধ্য হয়ে, ৪ টা মেয়ে মিলে একটা রোম ভাড়া নিলো।
অথৈ, কখনও রান্না করেনি, কোন কাজ করেনি, মন্দিরা নিজ হাতে সব গুছিয়ে, বাসায় রেখে আসলো।
আর সমস্ত রাস্তা শুধু কাঁদতে কাঁদতে কাটয়ে দিলো।
বাসায় এসে মেয়ের রুমে গিয়ে সে কি কান্না।
মেয়েকে ছাড়া কখনও থাকেনি, তাই এতে কষ্ট হচ্ছে।
প্রতি দিন মেয়েকে চার,পাঁচ বার ভিডিও কল দিয়ে দেখে কথা হয়।
এইভাবে কাটছে দিন, এদিকে অথৈ একা একা কিছুই চিনেনা, শুধু রুমেটদের সাথে ক্লাসে যায়, আর বের হয়না, প্রতি সপ্তাহে মা, বাবা, দেখতে যায়,
অথৈ, মাকে কল দিয়ে দিয়ে একটু একটু রান্না শিখে ফেলেছে,
একদিন অথৈ ভার্সিটিতে যাচ্ছে রাস্তায় কত গুলো বখাটে ছেলে, প্রচন্ড বিরক্ত করছে, এমন কি এক সময় হাত ধরে টানাটানি করছে।
পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো এক ছেলে,মেয়েটাকে টানা হেচড়া করছে তাই দেখে ওদের সাথে ঝগড়া করে, ওরা চলে যায়, ছেলেটা এলাকার দাপটি, তাই ওরা ভয় পায়।
ছেলেটা বন্ধুত্বের হাত বাড়ায়, আমি, সায়ান, আপনি?
আমি অথৈ,
সায়ান ঃ আচ্ছা আপনি কি এখানে নতুন?
অথৈ ঃ জি আমি ফাস্ট ইয়ার ঢাকা ভার্সিটি আপনি?
সায়ান ঃ আমি থার্ড ইয়ার একই ভার্সিটি। সাবজেক্ট রসায়ন আপনার?
অথৈঃ প্রাণীবিজ্ঞান।
সায়ান ঃ ওকে কোন প্রবলেম হলে আমাকে ডাকবেন মোবাইল নাম্বার টা দিলো।
আসা যাওয়ার পথে প্রায়ই দুজনের দেখা হয়ে যায়, হায় হলো, কখনও কখনও সাহায্যের হাত বাড়ায়,
এলাকায় কেউ আর বিরক্ত করেনা। সবাউ সায়ান কে ভয় পায়।
একদিন এতো জ্বর এলো অথৈয়ের, সায়ান কে কল দিলো, তখন অনেক রাত,
সায়ান ঃ হেলো এতো রাতে কল দিলেন যে কোন প্রবলেম?
অথৈ ঃ হা, আমার খুব জ্বর, প্রচন্ড মাথার যন্ত্রণা করছে।
সায়ান, ঔষধ নিয়ে গেলো বাসায় সামনে, সাথের রুমমেট এসে ঔষধ টা নিয়ে গেলো, খাওয়ালো শেষ রাতের দিকে জ্বর কমে গেলো।
সায়ান খুব ভালো ছেলে সে বুঝতে পারলো।
কিছুদিনের ভিতর ওদের মাঝে প্রেম হয়ে গেলো।
ভয়ে মন্দিরাকে কিছু বলেনি। মা, বাবা শুনলে বকবে।
প্রায়ই পার্কে ঘুরতে যেতো, ফোসকা খেতো, হাতে হাত ধরে হাটতো।
অথৈ চোখ বুঝে সায়ানকে ভরসা করে। একদিন দুষ্টমি করে, সায়ান একটা কিস দিলো, অথৈ লজ্জা পেয়ে লাল হয়ে যায়। আর বলল এখন নয়, একিবারে বিয়ে করে বাসর ঘরে যত খুশি কিস করো আমি বাঁধা দিবোনা।
সায়ান ঃ সরি, ওকে বাবা আর হবে না এমন লজ্জা পেতে হবে না, , বিয়েতো আরো অনেক দেরী, আমার পড়া শেষ হবে, জব করবো পড়ে বিয়ে।
অথৈ ঃ তাতে কি আমিও তো পড়া শেষ করবো জব করবো, আমরা দুজনেই সময়ের অপেক্ষা করবো।
ভালোই কাটছে দিন, মাস, বছর।
একদিন সায়ান ঃ কাল তোমার নিমন্ত্রণ আমাদের বাসায়।
অথৈ ঃ কি ব্যপার হঠাৎ, তোমার আম্মু কিছু বলবেনা?
সায়ান ঃ না, কারণ কাল আমার জন্মদিন, তাউ পার্টি হবে, কয়েকজন বন্ধু আসবে, তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিবো।
অথৈ ঃ ওকে আসবো,
একটা মেরুন কালার শার্ট কিনলো গিফটের জন্য।
আর অথৈ পড়লো মায়ের সেই নীল শাড়ীটা। একটা নীল টিপ, লাল টকটকে লিপস্টিক, একটু উঁচু জুতা, পড়লো অসাধারণ সুন্দর লাগছে যেন আকাশ থেকে নীল পড়ি এসে সায়ানের দোয়ারে দাড়িয়ে।
সায়ান তো অনেক খুশি। ভিতরে আসো।
অথৈ ঃ তোমার আম্মু কোথায় ডাকো,
সায়ান ঃ ও আম্মু একটু দোকানে গেলো কেক আনতে, এখনি চলে আসবে।,বসে প্লিজ।
একে একে ১০ জন ফ্রেন্ড এলো। খাওয়ার দাওয়ার আয়েজন, সাজানো, পাশে হুইস্কির বোতল,
অথৈ ঃ এগুলি কেন তোমরা কি ড্রিংক করবে।
সায়ানঃ আরে আমি না, আমার ফ্রেন্ডরা ড্রিঙ্ক করবে।
ওরা কেউ কেউ আমেরিকা থাকে, উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে তো, ওটা ওদের কালচার।
অথৈ ঃ সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে আসছে এখনও তোমার আম্মু কেক নিয়ে আসছে না?।
আমি চলে যাবো বাসায়, রাত হলে মালিক বাসায় ঢুকতে দিবেনা,
সায়ান ঃ এতো টেনশন করছো কেন আমি তোমাকে দিয়ে আসবো, মালিক কিছু বলবেনা।
এই বলে অথৈকে টান দিয়ে কাছে টেনে নিলো আর চুমুয় চুমুয় ভরিয়ে দিলো সর্বাঙ্গ।
অথৈ ঃ সাঅন প্লিজ তুমি কি করছো? এমন পাগলামি করছো কেন? ছাড়ো আমি চলে যাবো।
সায়ান ঃ প্লিজ অথৈ তমাকে আজ বাঁধা দিওনা, আমি তো তোমারই,
অথৈ ঃ ছিঃ ছিঃ তুমি ড্রিঙ্ক করেছো, কেমন নোংরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো। আমি চলে যাবো আমাকে ছাড়ো।
সায়ান ছাড়েনি দুহাতের বাহুতে টেনে, একে একে দশ জন বন্ধু রেপ করলো।
অথৈ রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাতে কাতরাতে অনেক কষ্টে বাসায় এলো।
সারারাত অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পড়ে রইলো। সকালে
অথৈয়ের অবস্থা খারাপ কল গেলো,
মা বাবা, এসে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো।
বল মা কে তুর এতো বড় সর্বনাশ করেছে।? লজ্জায়, ঘৃনায় কষ্টে, কথা বলা বন্ধ করে দেয়।
কাউকে কিছু বলেনি, কারণ ওরা দাপটি, কোন বিচার হবেনা, বরং সবাই শুনবে।
তার চেয়ে চুপ করে থসকায় ভালো।
অথৈ ঃ মা আমি আর ঢাকায় থাকবোনা।
চলে এলো বাড়ীতে, কয়েক মাস পর কেমন শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন। বুঝতে পাারলো অথৈ অন্তঃসত্ত্বা।
মন্দিরার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। মেয়ের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে একা একা চলে এলো সায়ানদের বাসায়।
দরজায় কড়া নাড়লো, দরজা খুলে দাড়িয়ে সায়ানের বাবা, মন্দিরা মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে, কেমন যেন পুর্ব জনমের চেনা।
আচ্ছালামুয়ালাইকুম
ওয়ালাইকুম সালাম
সায়ানের বাবা দোল: আপনি কাকে চান? কোথা থেকে এসেছেন?
আমি মন্দিরা কিশোরগঞ্জ থেকে এসেছি।
তুমি মন্দিরা? তোমাকেতে চিনতেই পারছিনা, কত মোটা হয়ে গেছো, সেই কত বছর আগে দেখেছিলাম। তখন কত শুকনা ছিলে।
আমি দোল চিনতে পারছো?
আজ আর সেই মন নেই, দোলকে এতো কাছে পেয়েও কোন রজম অনুভুতি কাজ করছেনা,
মন্দিরা: দোল তুমি? মাথার চুল গলো সব সাদা হয়ে গেছে, কেমন বুড়ো লাগছে, কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে নিরভ হয়ে আছে। কোন ভাষায় পাচ্ছেনা।
দোল: তুমি ঠিকানা জানলে কি করে? আর হঠাৎ তুমি আমার দেয়ারে, এটা কি স্বপ্ন?
মন্দীরা: না এটা বাস্তব, আজ আমি দোলের কাছে ভালোবাসা চাইতে আসিনি। তুমি যেদিন যাবে বলে যাওনি সেদিনই গলা টিপে হত্যা করেছি কৈশরের লালিত প্রেমকে।
তুমি কি সায়ানের বাবা?
দোল: হা, তুমি সায়ানকে চিনো কিভাবে?
মন্দিরা, সব ডিটেইলস খুলে বলল।
দোল: কি বলছো এইসব আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছোনা, তুমি যাও আমি সায়ানকে নিয়ে তোমার ওখানে আসবো, আমি নিজে তোমার মেয়ে কে, পুত্র বধুর মর্যাদা দিয়ে নিয়ে আসবো এই বাড়ীতে।
তখনি ফিরে এলো মন্দিরা,
সায়ানকে ডেকে ওর বাবা শুধু বলল, তোমাকে কালই অথৈ কে তোমার বিয়ে করতে হবে। ও তোমার সন্তানের মা হতে চলেছে।
সায়ান, আমি বিয়ে করতে পারবোনা। এটার আমার কিছু সময়ের ভুল ছিলো।
বাবাকে সায়ান বলতে পারছেনা, ওটা কার সন্তান? ১০ জনে রেপ করেছে। কাজেই সে বিয়ে করবেনা।
বাবা অনেক চাপাচাপি করে তোমাকে বিয়ে করতেই হবে।
সকালে কল এলো হেলো অথৈ।
আমি সায়ান বলছি, আমাকে ক্ষমা করো তোমার পেটে যে সন্তান সেটার জান্য আমি একা দায়ি নই, তবে একা কেন বহন করবো?
অথৈ: তোমাকে ভরসা করেছিলাম, অনেক বিশ্বাস করেছিলাম, তোমার বাহিরটা দেখে বুঝিতে পারিনি তুমি এতোটা নুংড়া, আমি তোমাকে ঘৃনা করি। আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না। আমি চলে যাবো পৃথিবী ছেড়ে এই নষ্ট জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে চাইনা, আরেকটা অথৈ জন্ম নিক এই পৃথিবীতে আমি চাইনা।
তোমাদের মতো সায়ানরা, আজন্ম কালই নির্যাতন করে যাবে। তোমার বোনের তোমার মেয়ের যখন এমন হবে, সেদিন আমার কথা মনে করো।
মোবাইল টা বন্ধ করে দিলো।
সারারাত সায়ান ভাবলো, আমি অন্যায় করেছি একটা মেয়ের সাথে, আজ আমার জন্য পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চাইছে।
সকাল হতেই বাবাকে বলছে চলো আমি যাবো।
মন্দিরা ডাকছে অথৈ মা দরজা খুল, সায়ানরা আসতেছে, আজ তুর বিয়ে।
অথৈ: তুমি যাও মা আমি আসছি।
না এ হতে পারেনা আমি একটা নরপিশাচকে বিয়ে করতে পারবোনা। অমানুষ একটা আমাকে শিয়াল কুকুরের মতো ছিড়ে খেয়েছে।
আমি ক্ষমা করতে পারবোনা, আর এই পৃথিবীতে বাচঁতেও পারবোনা, কে এই সন্তানের পিতা?
দশ জনে ভোগ করেছে। ছিঃ ছিঃ এই বলে বিষ খেয়ে আত্নহত্যা করলো।
সায়ান বর বেসে এসেছে, সাথে দোল।
রুমে গেলো মন্দিরা, মেয়ের মৃত লাশ।
কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। দৌড়ে এলো সায়ান অথৈ আমাকে ক্ষমা করে দাও এই বলে লাশের পাশে বসে কাঁদতে থাকে।
মেয়ে আত্মহত্যা করেছে এটা চাঁপা দিয়ে দিলো।
সমাজে বদলাম হবে।
মন্দিরা: দোল তোমাকে ভালোবেসে সারাটা জীবন কষ্ট পেয়ে গেলাম, আজ তোমার ছেলে সেই প্রতিদান দিলো।
তোমরা ভালো থেকো,
দোল আর সায়ান চোখের পানি মুছতে মুছতে অপরাধ বোধে ভুগতে ভুগতে ঢাকা ফিরে এলো।
কিছুতেি ভালো লাগছেনা সায়ানের।
রাতে গুম আসেনা, স্বপ্নে হানা দেয়, ভয়ানক যন্ত্রনায় কাটছে দিন।
দোল বুঝতে পারলো তার ছেলে মানষিক বিপর্যয় গ্রন্থ।
সায়ানকে ডেকে বলল, যা বাবা বন্ধুদের নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরে আয়, একটু ভালো লাগবে,
এইভাবে ঘরে বসে থাকলে পাগল হয়ে যাবি,।
সায়ান বলল না বাবা, আমি কোথাও যাবোনা,
পৃথিবীর কোথাও শান্তি পাবোনা, আমি পাপি অনেক বড় পাপ করেছি, একটা নিষ্পাপ মেয়েকে মেরে ফেলেছি। আমার শাস্তি হওয়া দরকার।
আমাকে কেন ফাঁসিয়ে গেলোনা, এইভাবে নিরবে প্রতিশোধ নিলো। এতো মহৎ অথৈ, আর আমি ওকে এতো কষ্ট দিলাম।
চলে গেলো অথৈয়ের কবরের পাশে। আমাকে ক্ষমা করোনা অথৈ, তুমি সত্যি কারের ভালোবাসার প্রতিমা, আমি তোমাকে বিসর্জন দিয়েছি,
আজ আমি বুঝতে পেরেছি, তোমাকে শুধু ভালোবাসা যায়। আমি আর ফিরে যাবোনা।
যত দিন বেঁচে থাকবো তোমার সমাধি আঁকড়ে বেঁচে থাকবো কথা দিলাম।
দোল সায়ানকে খুঁজতে খুজতে মন্দিরাদের বাড়ী এলো, খুঁজে পেলো।
দোল: মন্দিরা তুমি সেই কৈশোর থেকে ভালোবেসে শুধু কষ্টই পেয়েছো, আজ আমার একমাত্র ছেলে সায়ানকে তোমার এখানে রেখে গেলাম। আর কিছুই তোমাকে দিবার মতে নেই। পারলে আমাকে ক্ষমা করো।