ক্রিটিক্যাল থিংকিং: “সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে, সঠিক এবং কার্যকরী সিদ্ধান্ত পাওয়ার উদ্দেশ্যে, নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করা এবং নিজের যুক্তিনির্ভর মতামতের ভিত্তিতে উক্ত প্রশ্নের সমাধান নিয়ে চিন্তা করাই ক্রিটিক্যাল থিংকিং। “
নামটি ক্রিটিক্যাল থিংকিং হলেও এটি আসলে কোনো বিষয়ের উপর অতি সাধারণ চিন্তা ভাবনাকেই বুঝায়।
প্রকৃত কথা হলো কালের বিবর্তনে মানুষ যত বেশি জ্ঞানী হচ্ছে ততই তাদের কাজের ধরন জটিল হয়ে যাচ্ছে। এই যেমন ধরুন অটোমেশন। অটোমেশনের ফলে ঠিকই আমাদের সময় বাচানো সম্ভব হয়েছে, তবে যে কাজ আগে নিজ হাতে করা হতো তা এখন করা হচ্ছে প্রোগ্রামিং করা রোবটের সহায়তায়। ফলে আমরা সকল প্রকার সমস্যার সমাধানকে সহজভাবে না খুঁজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি জটিল সমাধানের খোঁজে।
ফলস্বরূপ সহজ সমাধানকে আমরা করে ফেলছি কঠিন। আবার সেই কঠিন সমস্যাকেই সহজ করার জন্য আমরা নিয়ে আসছি ক্রিটিক্যাল থিংকিং ব্যবহারিক অর্থে অতি সাধারণ চিন্তা ভাবনার মতবাদকে। মূলকথা হলো সহজভাবে সমস্যার সমাধান করার যে গুণটি আজ আমরা হারিয়ে ফেলেছি, সেটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টাতেই জন্ম এই ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর।
ক্রিটিক্যাল থিংকিং কেন প্রয়োজন?:
বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যে হারে উন্নতি হচ্ছে তাতে স্পষ্ট যে ভবিষ্যতে মানুষের কাছে তথ্যের কোনো অভাব থাকবে না, বরং অভাব থাকবে এই তথ্যকে ব্যবহার করার দক্ষতার। তাই তো ধারণা করা হচ্ছে অর্থ উপার্জনের চেয়ে অর্থ ব্যয় করাই হয়ে উঠবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ। আর এর প্রধান কারণ হবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারা। তাই এই সমস্যা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য চাই ক্রিটিক্যাল থিংকিং করার দক্ষতা। কারণ ক্রিটিক্যাল থিংকিং আমাদের যেমন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শেখায়, তেমনি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বাস্তবধর্মী চিন্তাভাবনাও করতে শেখায়। এছাড়াও ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর মাধ্যমে একজন মানুষ অন্যের মতামতকে গুরুত দেওয়া, নিজের ভুল ধরতে পারার মতো নানান গুণের অধিকারী হয়ে উঠতে পারে। তবে প্রকৃতপক্ষে ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর মূল উদ্দেশ্য হলো একজন অতি আবেগপ্রবণ মানুষকে মুদ্রার উল্টো পিঠ অর্থাৎ বাস্তবতাকে দেখিয়ে দেওয়া। তাই বাস্তবধর্মী মানুষ হতে হলে এই গুণটি আজই আয়ত্ত করতে হবে।
কীভাবে হয়ে উঠবেন ক্রিটিক্যাল থিংকার?:
আমি আগেই বলেছি ক্রিটিক্যাল থিংকিং হচ্ছে অতি সাধারণ চিন্তাভাবনা। তাই এই গুণটি আয়ত্ত করাও খুব সহজ। ক্রিটিক্যাল থিংকিং দক্ষতা অর্জনের জন্য জীবনের সকল সমস্যাকে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সমাধান করতে হয়। পদ্ধতিটি নিচে তুলে ধরা হলো-
- সর্বপ্রথম সমস্যাটি চিহ্নিত করুন।
- তারপর সমস্যাটি সমাধানের সকল পথকে একত্রিত করুন।
- এবার প্রাপ্ত প্রতিটি পথকে নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তা করুন এবং প্রতিটি পথের জন্য নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করুন যে, আপনি উক্ত পথটি বেছে নেবেন কি না?
- নিজের করা প্রশ্নের সঠিক সমাধান পাওয়ার জন্য আপনি আবার নিজেকে নিচের ৪ টি প্রশ্ন করুন-
১. এই পথটি বেছে নেওয়া কী আমার প্রয়োজন?
২. এই পথটি বেছে নিলে কী আমার উপকার হবে?
৩. এই পথটি বেছে নিলে ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
৪. এই পথটি বেছে নিলে ভবিষ্যতে যা হতে পারে তা কী আমি আমার যোগ্যতা অনুযায়ী সামলাতে পারব? - অবশেষে আপনার যুক্তিনির্ভর নিজস্ব মতামত দিয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন এবং খেয়াল করুন কোন পথটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
যে পথটি সর্বাধিক কার্যকর সেটিকেই গ্রহণ করুন। আমরা অনেক সময় আবেগপ্রবণ হয়ে কোন চিন্তাভাবনা না করেই একটি অকার্যকর পথকে বেছে নেই। তাই আমাদের সমস্যার সমাধান অনেক জটিল হয়ে পরে। আর আমরা ভাবে বসি জীবনটাই বুঝি এতো জটিল! ফলস্বরূপ এই প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অবসন্নতা, বিষন্নতা, নিঃসঙ্গতা, এমনকি আত্নহত্যা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাই কখনোই আবেগপ্রবণ হয়ে অকার্যকরী পথকে বেছে নিয়ে জীবনটাকে জটিল বানাবেন না। নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবেন না। বরং একজন ক্রিটিক্যাল থিংকার হয়ে নির্ভয়ে বিপদের সম্মুখীন হন এবং তা মোকাবেলা করুন। সফলতা আসবেই, আপনি এবং কেবল আপনিই পারেন আপনার নিজের সফলতাকে ছিনিয়ে আনতে।