আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন??? আজকে যে গল্পটি বলব সেটি একটি কাল্পনিক গল্প । বাস্তবতার সাথে যার কোন মিল নেই। এটি আমার লেখা পঞ্চম গল্প সুতরাং যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে সবাই সেটিকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।।
হাত থেকে একগুচ্ছ গোলাপ লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। চোখের কনা থেকে কয়েক ফোটা জল মাটিতে পরল টপ টপ আওয়াজে। কখনো চিন্তাও করিনি যাকে আমি চিরজীবন এতটা ভালোবাসলাম সে আমাকে এভাবে ধোকা দিয়ে চলে যাবে। দৌড়ে বাসায় আসলাম ঘরের মধ্যে নিজেকে বন্দী করে রাখলাম। অনেক কেঁদেছি আজ যা বলে বোঝানো যাবে না। ওর সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্ত আজ আমার মনে হচ্ছে। কিন্তু কি করার হয়তোবা এটাই বিধির বিধান ছিল। তাইতো আজ আমরা একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে গেলাম। দুপুরের সময় আম্মু আমার ঘরের দরজায় এসে নক করছিলো। দরজা না খুলে বললাম কি হয়েছে। আম্মু বলল ভাত খাবি না নিচে আয় তোর আব্বু ওয়েট করছে। সবাই একসাথে খাব। তাড়াতাড়ি নিচে আয় আজ তোর পছন্দের খাবারগুলো রান্না করেছে। আমি বললাম খাব না খিদে নেই। আম্মু বলল কি হয়েছে বলতো আমাকে আগে তুই দরজা খোল, সেই সকালে ঘরে ঢুকলি না ঢুকলি আর বের হওয়ার নামগন্ধ নেই। হয়েছে কি বলবি নাকি তোর আব্বুকে ডাক দিব।
আমি দরজা খুলে দিয়ে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। আম্মু আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আমি ওকে কত ভালবাসতাম কিন্তু ও আমাকে ভালোবাসে না। আম্মু হয়তোবা কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাইছিল কিন্তু আমি আবারও কান্না শুরু করে দিলাম। কান্না করতে করতে বলতে লাগলাম, এখন আমি কাকে নিয়ে পার্কে যাব কার সাথে কথা শেয়ার করব????? আবার শুরু করে দিলাম সেই অঝোরে কান্না।
এবার আম্মু আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল কার কথা বলছিস। আমাকে সব খুলে বল আমি তোর কোন কথা বুঝতে পারছিনা। এবার আমি বললাম আম্মু আমি জেরিনের কথা বলছি। আম্মুর কাছে আবার সবকিছু খোলসা হয়ে গেল উনি সবকিছু বুঝতে পারলেন আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,, বোকা ছেলে একটা কবুতরের জন্য কেউ এত কান্নাকাটি করে।
আসলে জেরিন আমাদের পোশাক কবুতরের নাম। ছোটবেলা থেকেই আমি পশুপাখিদের অনেক পছন্দ করতাম। তবে সেটি যদি হয় কবুতর তাহলে তো কথাই নেই। এজন্যই আম্মু আমার এক জন্মদিনের গিফট হিসেবে জেরিন কে দিয়েছিল। পাখিটাকে প্রথম দেখাতেই কেমন যেন একটা অনুভব হচ্ছিল আমার। সুন্দর দেখতে পাখিটি।প্রতিদিন বিকেলে জেরিনকে খাঁচায় করে নিয়ে আমি পার্কে যেতাম। সকাল হলে প্রথম গুড মর্নিং টা জেরিন কি বলতাম আর রাতে গুডনাইট তো না বলে ঘুমাতে যেতে পারিনা। ওর সাথে সকল কথা শেয়ার করতাম স্কুলে গিয়ে কি হলো না হলো। কোন টিচার আজকে আমাকে বকা দিয়েছে। সবগুলো পড়া দিতে পেরেছি কিনা। সব কথা। আর এর মূল কারণ হল আমার কোন বন্ধু ছিল না।
আজ সকালে আমি ভেবেছিলাম জেরিনকে আমি যতটা ভালোবাসি সেও হয়তো আমাকে ততটাই ভালোবাসে। তাই তো মা নিষেধ করা সত্ত্বেও খাঁচা থেকে ওকে মুক্ত করে দিয়েছিলাম। সকালবেলা তো আমার সাথেই থাক ছিল। ঘরের মধ্যে উড়ে উড়ে এটা থেকে সেটার উপর গিয়ে বসে ছিল। আমার ফুলদানির সকল ফুল শুকিয়ে যাওয়ায় আমি বাগানে যাচ্ছিলাম ফুল তুলতে। ভাবলাম জেরিনকে একা কেন রেখে যাবো ও কেউ নিয়ে যায়। বাগানে গিয়ে আমি কয়েকটা গোলাপ ফুল তুললাম।হাতে জায়গা না হওয়ায় জেরিনকে কাধের উপর রাখলাম। হয়তো এটাই আমার জীবনের সবচাইতে বড় ভুল ছিল। জেরিন আমাকে ছেড়ে উড়ে গেল। এরপর যা ঘটেছে তা তো সবাই যাবেন,,,,,,,,,,,,, আমার বন্ধুকে এসে ফোন করলাম সে বলল পাশের বাড়ি কালুর নতুন কবুতর আক্কাসের প্রেমে পড়ে গেছে হয়তো তোর জেরিন তাইতো তোকে ছেড়ে চলে গেছে। এ কথা শোনার পর থেকে আরো বেশি কান্না করতে ইচ্ছে করছিল আমার।।।।
মা সব কথা শোনার পর আমাকে অনেক সান্ত্বনা দিলেন এবং বললেন চিন্তা করিস না খুব শীঘ্রই আবার তোর জন্য একটা নতুন কবুতর কিনে আনব। এবার কিছুটা হলেও খুশি হলাম। কিন্তু জেরিনের সাথে যে ভাব ছিল সেটি হয়তো বা অন্য কারো সাথে করতে পারব না। এটি আমার সবচাইতে বড় দুঃখ।।।।।।।
ধন্যবাদ সবাইকে গল্পটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।।।